কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের নীলক্ষেত মোড় অবরোধ

  11-04-2018 02:04PM


পিএনএস ডেস্ক: কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তারা নীলক্ষেত মোড় এলাকা অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেছেন। এতে আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ জানান, নীলক্ষেত মোড় থেকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে একই ইস্যুতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেবেন।

একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছেন।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ আল্টিমেটাম দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন করেন এশা। এ ছাড়া হলের এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

মোরশেদা বেগম নামের ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় রাতেই তাকে ছাত্রলীগ থেকে এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রাশেদ খান।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সেখানে বলেন, ‘সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি মঙ্গলবার রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মারধর করেছে। সে এর আগেও ছাত্রীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ আন্দোলনকারীদের এরকম মারধর করে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানাতে হবে। সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। কিছু অনুপ্রবেশকারী এই আন্দোলনকে বানচাল করার চেষ্টা করছে। যেখানে সেখানে তারা সহিংসতা করার চেষ্টা করছে। সাংবাদিক ভাইদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছে ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।’

সাংবাদিকদেরও অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, ‘সরকারের একেক ব্যক্তির একেক ধরনের বক্তব্য আমরা গ্রহণযোগ্য মনে করি না। এই কারণে আমাদের আন্দোলন অনির্দিষ্টকাল চলবে।’

এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের না আসার জন্য যে হামলা চালানো হয়েছে তার নিন্দা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়কদের ওপর চাপ সৃষ্টি তীব্র নিন্দা এবং অন্যদের ছাত্র সমাজের এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার আহ্বান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।

এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রবিবার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থানে রাত আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে আটক করে পুলিশ।

এরপর গতকাল সোমবারও দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খান কামালের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সবাইকে মুক্তি দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন