বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭৭.১১, শীর্ষস্থানে ক্যাডেট কলেজ

  06-05-2018 05:32PM

পিএনএস, মো: আরিফ হোসেন (বরিশাল) : বরিশাল বোর্ডে এসএসসিতে পাসের হার ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী। গতকাল রবিবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ফলাফলের পরিসংখ্যান ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম। এ সময় তিনি জানান, এ বছর পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ড থেকে অংশ নেয় এক লাখ হাজার ৩৯১১ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৫১ হাজার ৯১২ জন এবং ছাত্রী ৫১ হাজার ২১২ জন। পাস করেছে ৭৯ হাজার ৫২০ জন, যারমধ্যে ছাত্র ৩৯ হাজার ৫১ জন এবং ছাত্রী ৪০ হাজার ৪৬৯ জন।

গত বছরের চেয়ে বরিশাল বোর্ডে এবার পাশের হার কমেছে দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ বেড়েছে এক হাজার ১৭৪ জনের। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। ৭৭ দশমিক ১১। আর বিগত বছরের ন্যায় গড় পাশের হারে এবং জিপিএ ফাইভের বেলায় এবারেও ছেলেদের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে। এ বছরে মেয়েদের পাশের হার ৭৯ দশমিক ০২ ও ছেলেদের পাশের হার ৭৫ দশমিক ২৩। পাশাপাশি মেয়েরা ১ হাজার ৮০১ টি জিপিএ-৫ পেয়েছে, যার থেকে ছেলেরা ১৪০ টি জিপিএ-৫ কম পেয়েছে।

ছেলেদের মোট জিপিএ-৫ ১ হাজার ৬৬১ টি। আর বিষয় ভিত্তিতে পাশের হারে বিজ্ঞান, মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। তবে প্রতি বছরের মত এবার বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে বরিশাল ক্যাডেট কলেজ। এ বছর ৪৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪৬ জনই জিপিএ ৫.০০ অর্জন করেছে। সূত্রে আরো জানা গেছে,বরিশালে বছরে বছরে কমছে পাশের হার। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এ ধারা অব্যাহত থেকে এবারে বরিশাল বোর্ডে মোট পাশের হার গিয়ে দাড়িয়েছে ৭৭.১১ ভাগে, যা গত বছর ছিলো ৭৭.২৪ ভাগ।

বোর্ডের বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ফলাফলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে পাশের হার ছিলো ৯০.৬৬ ভাগ এরপরে ২০১৫ সালে ৬.২৯ ভাগ কমে পাশের হার দাড়ায় ৮৪.৩৭ ভাগে। আর ২০১৫ সালের চেয়ে ৪.৯৬ ভাগ কমে ২০১৬ সালে দাড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৪১ ভাগে। যা আরো ২.১৭ ভাগ কমে এ বছর ২০১৭ সালে দাড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ২৪। সর্বোশেষ ২০১৭ সালের থেকে দশমিক ১৩ ভাগ কমে ২০১৮ সালে দাড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ১১ ভাগে। এদিকে ২০১৭ সালের থেকে এ বছরে ১ হাজার ১৭৪ টি বেড়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী। তবে ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিলো ৪ হাজার ৭৬২ টি, সেখানে পরের বছর ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৯১ টি কমে জিপিএ-৫ দাড়ায় ৩ হাজার ১ শত ৭১ টিতে। এরপর ২০১৬ সালে ২০১৫ সালের থেকে ৫৮ টি কমে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩ হাজার ১১৩। আর ২০১৭ সালে এসে আরো ৮২৫ টি কমে গিয়ে জিপিএ ৫ এর সংখ্যা দাড়িয়েছিলো ২ হাজার ২৮৮। এ বছরে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ২২৪ জন, আর মানবিক বিভাগে ১০৬ জন ও বানিজ্য বিভাগে পেয়েছে ১২৮ জন।

তবে বিগত সময়ের চেয়ে এ বছরে এসএসসিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো বেশি। এবছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ১ লাখ ৩ হাজার ১২৪ জন। যারমধ্যে ছাত্র ৫১হাজার ৯১২ জন এবং ছাত্রী ছিলো ৫১ হাজার ২১২ জন। অপরদিকে গতবছর ৯ হাজার ৪৪৮ জনর পরীক্ষার্থী কম অংশগ্রহন করে। যারমধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৩৬১ জন এবং ছাত্রী ছিলো ৪৬ হাজার ৩১৫ জন। এদের মধ্যে পাস করেছিলো ৭২ হাজার ৩৫৬ জন। এছাড়াও এ বছর গত বছরের চেয়ে বহিস্কৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো বেশি। এবছর ১০৩ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছেন, যা গত বছর ছিলো ৩৯ জন। এ বছর মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৭ হাজার ৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছেন ২৪ হাজার ২৫৫ জন। মানবিক বিভাগে ৪৭ হাজার ৩৭৪ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছেন ৩২ হাজার ৫৪১ জন। বানিজ্য বিভাগে ২৮ হাজার ৭০৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করে পাশ করেছেন ২২ হাজার ৭২৪ জন।

এ বিষয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল আজিম জানান, এবছর গনিতে ও ইংরেজিেীত পরীক্ষার্থীরা তুলনামূলক খারাপ করেছে। তবে পাশের হার কমলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার কোন প্রভাব এর ওপর পড়েনি। কারণ পাশের সংখ্যা কমলেও ফলাফলে গুনগতমান ভালো হওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে। এ বছর বিগত বছরের থেকে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। শিক্ষকের অপ্রত্যুল হওয়া ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরিবর্তনের কারনে ফলাফলে কিছুটা পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। অন্য দিকে বরিশাল বোর্ডের তিনটি বিদ্যালয়ের কোন পরীক্ষার্থীই পাশ করতে পারেনি।

এরমধ্যে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ইসলামপুর সেকেন্ডারি স্কুল ও ভেরন বাড়িয়া সি.এস.ইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং পটুয়াখালীর উত্তর মৌকরণ এএইচ সেকেন্ডারি বিদ্যালয়। এই তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার ইসলামপুর সেকেন্ডারি স্কুলের ১৭ জন ও ভেরন বাড়িয়া সি.এস.ইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন এবং পটুয়াখালী সদরের উত্তর মৌকরণ এএইচ সেকেন্ডারি বিদ্যালয়ের ৭ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি জানান, ৩ টি বিদ্যালয়ে যেমন কেউ পাশ করেনি তেমনি বোর্ডের আওতাধীন ৫০ টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করেছে। যারমধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ১৬ টি, এরপর বরগুনায় ১১ টি, ভোলায় ১০ টি, পটুয়াখালীতে ৬ টি, পিরোজপুরে ৪ টি ও ঝালকাঠিতে ৩ টি বিদ্যালয় রয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন