এটা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন

  15-07-2018 03:51PM

পিএনএস ডেস্ক :
১৪ জুলাই, ২০১৮
সময়: ৫:৩০
স্থান : রেজিস্টার বিল্ডিং এর সামনে

আমি আর আমার বন্ধু আসাদ রিকশার জন্য সূর্য সেন হলমুখী রোড থেকে রেজিস্টার বিল্ডিং গেট এর দিকে যাচ্ছি। ঠিক তখন সামনে থেকে ১০/১২ জন ছেলে আমাদের পথ আটকায়। হকচকিয়ে গেলেও আমরা দাঁড়ালাম। প্রথমে একটা ছেলে ক্ষীপ্র ভঙ্গিতে এসে জানতে চাইলো আমরা এই ক্যাম্পাসের কিনা। বললাম হ্যাঁ, আমরা দুজনেই ক্যাম্পাসের।

আসাদ কে তখন বলল কোন ইয়ার তুই, কোন হল এ থাকিস? আমি বললাম আমরা অর্থনীতি ৩য় বর্ষের। এমনকি আমি আমার হল আইডি কার্ড দেখিয়ে বললাম ভদ্র ভাবে কথা বলো। কোনো তোয়াক্কা না করেই আবারো আসাদ কে বলল তুই কোন হল এর। আইডি কার্ড দেখা।

আসাদ ভদ্রভাবে জানতে চাইল তোমরা কোন ইয়ার, কোন হল, কেন চার্জ করছো এভাবে?

তারা নিরুত্তর এবং মারমুখী ছিল তখন।

আসাদ আইডি কার্ডটা দেখানোর পর আইডি কার্ডটা দিয়েই ছেলেটা বলল, 'প্রথম বর্ষের ছেলে কি তোরে চার্জ করতে পারে না? ১ম বর্ষের পোলাপানের হাতে মাইর খাইতে খুব মজা লাগব,' বলেই ঠাস করে আসাদকে থাপ্পড় মারে। আমি যখন জানতে চাই, 'কি করলে এটা?' তখন বাকিরাও চড়াও হয় এবং আমাকেসহ হয়রানি করে ফেরাতে গেলে।

যখন আসাদকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে থাকে আমি আমার এক পরিচিত বন্ধু কে বলি আসতে। আমাদের অপরিচিত কয়েকটা ছেলে বাজেভাবে আক্রমণ করছে।

প্রশ্ন থাকতে পারে প্রক্ট্রিয়াল টিমকে কেনো কল দিলাম না। প্রথমত আমার কাছে নাম্বার ছিল না। আর তারা তখনই খুব জোরে হেঁটে সূর্য সেন হল এর গেট এর ভিতরে চলে যায়।

আর আমরা ঘটনার আকস্মিকতায় মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম। আসাদ তাদের পেছন পেছন হল গেট এর ভিতর এ গিয়ে যখন জানতে চাইলো, আমি এই ক্যাম্পাসের পরিচয় দেয়ার পর, আইডি কার্ড দেখানোর পর ও আমাদের গায়ে কেনো হাত তুললে তোমরা?

তখন তারা মোটেই অনুতপ্ত না হয়ে বলছে, 'তুই হল এর ভিতরে আসলি কেন আবার?'

আসাদ কে আবার মারতে আসে। তখন ওরা ১৫-২০জন। অনেক মানুষ-ই ছিল। মজা নিচ্ছিল, না ঘটনার আকস্মিকতায় তারাও চুপ ছিল জানি না! আমি তখন আসাদকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সময় ওরা গেস্ট রুম থেকে স্ট্যাম্প, কাঠ নিয়ে আসে মারতে। আসাদ এর মাথায়, মুখে, কাঁধে, পায়ে সমস্ত শরীরে বাজে ভাবে আঘাত করা হয়েছে।

আমি বাধা দিতে যাওয়ায় আমার গায়েও লাঠির আঘাত, তাদের জোরাজুরি আসাদকে আলাদাভাবে নিয়ে মারার জন্য। আমার পায়ে জোতা দিয়ে পিষে দেয়ায় আমার নখ উঠে গেসে। রক্তপাত হচ্ছিল।

তখনও তারা থামে নাই। এফবিএস, সূর্য সেন ক্যাফেটেরিয়া এই তিন রাস্তার মোড়ে এসে আসাদ এর হল এর কিছু পরিচিত মানুষ জন আসতে দেখায় তারা চলে যায় কিন্তু ফিরে আবার মারমুখী হয়ে হুমকি দেয়।

আমরা দুজনেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। নিজের ক্যাম্পাসে এরকম #শারীরীক #মানসিক #হয়রানি #হামলার শিকার হব সেটা মেনে নেয়া অসম্ভব।

আজকে পরিচয়পত্র দেখানোর পর তাদের সিনিয়র জানার পরও হয়রানি করল। আমার যে ছোট বোন বা ভাই মাত্রই ক্যাম্পাসে আসল তাদের নিরাপত্তা কি তাহলে? আমার ক্যাম্পাসে আমি অতর্কিত হামলার শিকার হব কেনো?

আমরা সূর্য সেন হল এর প্রভোস্ট স্যার এর সাথে কথা বলেছি। স্যার আমাদের কে আগামিকাল লিখিত দিতে বলেছেন। এবং প্রক্টোরিয়াল টিম ও আমাদের ন্যায্য বিচার এর আশ্বাস দিয়েছেন এই পর্যন্ত। আমরা লিখিত দিব।

আসাদ এর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। আমার পায়ে ড্রেসিং করতে হয়েছে। মাথা আর ঘাড় এ প্রচণ্ড ব্যাথা।

অনেকের অনেক প্রশ্ন মনে জাগছে বা বিষয়টার সাথে অন্য কোনো কিছু যুক্ত কিনা জানতে চাইছে।# আমি এই বিষয়টি স্পষ্ট করছি আমাদের যারা চিনেন তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারবেন আমাদের এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কিছুর সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা সম্পূর্ণটাই আমাদের অসম্মান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়, ছোট, সহপাঠীদের কাছে আমাদের যথেষ্ট সম্মানজনক ও স্বচ্ছ ইমেজ আছে। কয়েকজন নৈতিক বিকারগ্রস্ত যুবকের অর্তর্কিত হামলার শিকার আমরা।

নিজ মুখে নিজ ক্যাম্পাসের ভয়াল বিভীষিকাময় ঘটনার কথা বর্ণনা করতে যেয়ে আজ আমি ঢাবিয়ান বলতেই এক অসামান্য লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছি।

আমি ট্রমায় আছি। কিন্তু আশা করছি আইনি প্রক্রিয়ায় সঠিক বিচারটা পাব। তারপরই শুধু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারবো। এটা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না।
# বিচার চাই
#ক্যাম্পাসে কোনো হয়রানি নয়
#কখনই নয়
(রোকেয়া গাজী লিনার ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

পিএনএস : জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন