পিএনএস ডেস্ক: দফায় দফায় সংশোধন করা হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্যবই। আগামী শিক্ষাবর্ষেও বেশ কিছু বইয়ে পরিবর্তন-পরিমার্জন করে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। আর ২০২০ সালে মাদরাসার পুরো কারিকুলাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফউল্যাহ এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, নতুন কারিকুলাম হবে বৈশ্বিক যে পরিবর্তন ঘটেছে বা ঘটছে তারই আলোকে। শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতা বিবেচনা নিয়ে এসব করা হচ্ছে। তিনি জানান, এ জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি হবে এবং পর্যালোচনা ও সেমিনারে মতামত গ্রহণ শেষে কারিকুলাম প্রণীত ও চূড়ান্ত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাদরাসার পাঠ্যবই সংক্রান্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় ২০২০ সালে মাদরাসার পাঠ্যবইয়ের নতুন কারিকুলাম প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ সচিব মো: আলমগীরের সভাপতিত্বে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা ও অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ছাড়া অন্য কোনো অনুবাদ গ্রহণ বা সংযোজন করা যাবে না। মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে এতদিন যে বানানরীতি অনুসরণ করা হতো তা বাদ দেয়া হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই সব বইয়ে বাংলা একাডেমির চলিত ভাষার বানানরীতি ব্যবহার করা হবে।
কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে ২০১২ সালে মাদরাসার কারিকুলামের বড় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এরপর ২০১৩ সালে এবং ২০১৪ সালেও মাদরাসার পাঠ্যবই পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়। এ বছর (২০১৮) আবারো পরিমার্জিত বই পাবে আগামী শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এবারের পরিমার্জন হচ্ছে, কথিত ‘জিহাদ’ ‘জঙ্গিবাদ’ ও ‘সন্ত্রাসবাদ’ উৎসাহ দিতে পারে- এমন পাঠযুক্ত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে। এসবের কোনো ভিত্তি আছে বলে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাথে যুক্ত কর্মকর্তারা মনে করেন না। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযোগ এসেছে বা উঠেছে, তাই সংশোধনের কাজ করা হচ্ছে। তারা বলেন, এ ধরনের আপত্তির শব্দে পরিবর্তে প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন পরিমার্জিত বইয়ে। আসলে এ ধরনের অভিযোগ যারা করছেন, তারা ‘জুমার খুতবা’ পরিবর্তনসহ নানা বিতর্কিত বিষয় সামনে এনে, নিজেরাই বিতর্কিত হয়েছেন অতীতে। তিনি আরো বলেন, কুরআন ও হাদিসের পরিবর্তনের ক্ষমতা কারো নেই।
২০২০ সালে মাদরাসার পাঠ্যবইয়ের কারিকুলাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফউল্যাহ বলেন, মাদরাসার নবম ও ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কুরআন শরিফের এক-দশমাংশ পাঠ গ্রহণ করে। এটি ওই বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত কি না তা বিবেচনায় নেয়া হবে। একইভাবে শুধু পবিত্র কুরআন শরিফ নয়, হাদিস, ফিকহর বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের বয়স ও ধারণক্ষমতা বিবেচনা করে নতুন কারিকুলাম করা হবে। এ ছাড়া মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পাঠ্যসূচিভুক্ত করা হবে।
বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, সততা ও নৈতিকতা শেখাতে বইয়ে যেসব নেতিবাচক গল্প রয়েছে, সেগুলোকে বাদ দেয়া হবে। সততার গল্প সংযুক্ত করা হবে। বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশ সম্পর্কে তথ্যযুক্ত করা হবে। এ ছাড়া আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার মতো পাঠ সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে এবং আরো হবে ২০২০ সালের বইয়ে।
তিনি জানান, এবারের পরিমার্জন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ে কিছু মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। এতদিন মেয়েদের বয়ঃসন্ধিক্ষণ সম্পর্কিত পাঠ চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণীতে ছিল। এগুলো বাদ দেয়া হয়েছে, এ স্তরের পাঠ্যসূচি থেকে। তবে বিষয়গুলো অষ্টম ও নবম শ্রেণীর বইয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবর্তন ও সংশোধনের তালিকায় প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৯ ক্লাসের কুরআন, আকাঈদ ও ফিকহ, আরবি প্রথমপত্রের পাঠ্যক্রম। ২০২০-এ বই ও পাঠ্যক্রমে এবং কারিকুলামেও পরিবর্তন আনা হবে। মাদরাসায় বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কৃষি শিক্ষা, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি ইত্যাদি পড়ানো হয়। এ বইগুলো স্কুলের অভিন্ন কারিকুলাম এবং সিলেবাসের বই। সূত্র: নয়া দিগন্ত
পিএনএস/আনোয়ার
নতুন কারিকুলামে ২০২০ সালে মাদরাসার পাঠ্যবই
18-07-2018 08:02AM