শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকতে পারবেন না এমপি প্রার্থীরা

  20-10-2018 03:42PM

পিএনএস ডেস্ক : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির কোনোও পদে থাকতে পারবেন না জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া এমপি প্রার্থীরা। এমন কি এমপি প্রার্থীর মনোনীত ব্যক্তিও এসব পদে থাকতে পারবেন না। নির্বাচনের সময় দলের পদধারীরাও পারবেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকতে। নির্বাচনের আগেই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

এ লক্ষ্যে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে ইসির আইন সংস্কার কমিটি। আগামীকাল রোববার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য কমিশন সভায় এসব বিধি চূড়ান্ত হতে পারে। ওই দিন বিকাল ৩টায় কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকের এজেন্ডা হচ্ছে, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন, স্বতন্ত্র (প্রার্থী সমর্থন যাচাই) প্রার্থী বিধিমালা ২০১১ সংশোধন ও বিদেশি পর্যবেক্ষক বিধিমালা ২০১৮। কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান আচরণ বিধিমালার ৬ এর (১) এর খ দফায় পরিবর্তন আসছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নির্বাচনি সভার অনুমোদনের বিষয়টি সহজ করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সভার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে না দেওয়া হলে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে। অনুমোদন পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য এই প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সংস্কার কমিটি তাদের সুপারিশের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

আচরণবিধির ৭ এর উপবিধি ৫ এর পর ৫ (ক) সন্নিবেশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রচারণায় ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিধির ৯ উপবিধির পর ৯ (ক) যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া বিধি ১৪ এর উপবিধি ৪ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কমিটির সদস্য/নেতা/কর্মী, কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আগে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বা মনোনীত হয়ে থাকলে বা কোনও মনোনয়ন পেয়ে থাকলে নির্বাচনের আগে তিনি বা তদকর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না।

ইসির আইন সংস্কার কমিটি মনে করছে, এতে শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর প্রভাব কমবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষকদের নিরপেক্ষভাবে কাজের পথ সুগম হবে। ভোটগ্রহণে যেসব প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার থাকেন তাদের বেশির ভাগই শিক্ষক। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্যের হাতে শিক্ষকদের চাকরি সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় সংরক্ষিত আছে। এতে শিক্ষকরা এক ধরনের মানসিক চাপে থাকেন।

বিদ্যমান বিধিমালায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে থাকার সুযোগ রয়েছে। তবে তারা নির্বাচনের আগে প্রতিষ্ঠানের কোনও অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে পারবেন না বা প্রতিষ্ঠানের কোনও কাজে জড়িত হতে পারবেন না বলে বিধান রয়েছে।

আচরণ বিধিমালার সংশোধন প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির আইন ও বিধিবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আচরণবিধিতে সামান্য কিছু সংশোধনের সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। কমিশন সভায় এটি উপস্থাপন করা হবে। কমিশন অনুমোদন দিলেই তা চূড়ান্ত হবে।’

জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি-অনার্স মাস্টার্স বা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সংসদ সদস্যরা সভাপতি হিসেবে আছেন। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে আছেন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ অসীম ক্ষমতার অধিকারী। নিয়োগ, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুতি, পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট দেয়াসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা পর্ষদের হাতে ন্যস্ত। শিক্ষক বা কর্মচারীদের কেউ কোনো অপরাধ করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সরাসরি অ্যাকশন নিতে পারে না। এজন্য সরকার বা মন্ত্রণালয়কেও পরিচালনা পর্ষদের কাছে ধরনা দিতে হয়।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন