রাবিতে বাণিজ্যিক সিনেমা প্রদর্শনীর প্রতিবাদ করায় সাংবাদিকসহ ৭ জনকে ছাত্রলীগের মারধর

  01-12-2018 08:04PM

পিএনএস, রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘দহন’সিনেমার প্রদর্শনীর প্রতিবাদ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকসহ প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সাত নেতা-কর্মীকে মারধর করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মারধরে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের প্রচার সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে প্রক্টর, পুলিশ ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার বাকিরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আলী ইউনুস হৃদয়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল, প্রচার সম্পাদক লিটন চন্দ্র, ছাত্র ফেডারেশনের রাশেদ রিমন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শাকিলা খাতুন, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ঈসরাফিল আলম, আশরাফুল আলম প্রমুখ।

অপরদিকে মারধরকারীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খান নাহিদ, সাবরুল জামিল সুষ্ময়, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ শ্রাবণ, শেখ সিয়ামসহ বহিরাগত বেশ কয়েকজন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকাল ৩টায় দহন সিনেমাটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এর প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকেই রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন। প্রদর্শনী শুরুর মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন। এরপরও আন্দোলন অব্যাহত রাখলে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শাকিলা খাতুনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন প্রক্টর। পরে প্রক্টর সিনেমার দর্শকদের মিলনায়তনে প্রবেশ করতে বললে আন্দোলনকারীরা দর্শকদের বাধা দেন। এ সময় প্রক্টরের সামনেই আন্দোলনকারী কয়েকজনের ওপর চড়াও হয় সুস্ময়, নাহিদ, ফেরদৌস, শ্রাবণসহ বহিরাগত কয়েকজন। তারা বিক্ষোভকারীদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে মিঠুনকে রাস্তার ওপর ফেলে সুস্ময় এলোপাতাড়ি লাথি দিতে থাকে এবং পা দিয়ে মাথা রাস্তার ওপর চেপে ধরে রাখে। সাংবাদিক ইউনুস তাদেরকে আটকাতে গেলে সুস্ময় তার কোমড়ে লাথি দেন। ঘটনাস্থলে প্রক্টর, পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি।

সাংবাদিক হৃদয় বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করতে দেখে আমি তাদের আটকাতে যাই। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকলেও সুস্ময় আমাকে লাথি মারে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বাণিজ্যিক সিনেমা প্রদর্শনী প্রতিবাদ জানালে প্রক্টরের উপস্থিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের বেড়ধক মারধর করেন। এতে জোটের প্রচার সম্পাদক মিঠুনের হাত ভেঙ্গে গেছে। প্রক্টর ও পুলিশের উপস্থিতিতে এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘সিনেমা প্রদর্শনী নিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা ঝামেলা তৈরি করছে বলে প্রক্টর আমাদের জানায়। পরে আমি এসে দেখি সেখানে বাকবিত-া চলছে। জোটের এক নেতা প্রক্টরের গায়ে ধাক্কা দিলে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সাথে তাদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।’ প্রক্টরের গায়ে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে এমন বিষটি তিনি অস্বীকার করেন প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান।
মারধরের বিষয় জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি আন্দোলনকারীদের বুঝাতে চেয়েছি যে সিনেমাটি সামাজিক সিনেমা। আজকে সিনেমাটি চলুক। যদি এটি দেখার মতো না হয় তাহলে আমরাই বন্ধ করে দিবো। তবে আন্দোলনকারী বিষয়টি অতি রঞ্চিত করে । পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রক্টর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তারা আমার সাথে জোর গলায় কথা বলেছে। তবে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে নি।

উল্লেখ্য, রাজশাহীর উপহার সিনেমা হলটি গত ১১ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাজ মাল্টিমিডিয়া দহন সিনেমাটি প্রদর্শনীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনটি ভাড়া নেয়। আগামী ১-৬ ডিসেম্বর সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে বলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পেইজে প্রচারণা শুরু করে। বিষয়টি জানার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলো।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন