সংসদ নির্বাচনের আদলে ডাকসুর আচরণবিধি

  25-01-2019 06:19PM

পিএনএস ডেস্ক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮’ এর আদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি হচ্ছে । এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোকে আচরণবিধির ওই খসড়া দিয়ে এ ব্যাপারে কাল শনিবারের মধ্যে তাঁদের মতামত জানতে চেয়েছে প্রশাসন৷ চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট খসড়াটি চূড়ান্ত করবে৷

ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতাদের ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আচরণবিধির খসড়া পত্রের সঙ্গে প্রেরণ করা হলো৷ খসড়াটি সম্পর্কে কোনো মতামত বা সুপারিশ থাকলে তা আগামী ২৬ জানুয়ারি শনিবারের মধ্যে প্রক্টর কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি৷’

খসড়া আচরণবিধিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মেনে চলার জন্য ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের যে আচরণবিধি রয়েছে, ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী ও সমর্থকদের জন্য তৈরি এ খসড়ার সব ধারা প্রায় হুবহু মিলে যায়৷ অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ধারাগুলোতে দু'এক জায়গায় ভাষাগত পার্থক্য ও সংশোধনী রয়েছে৷

গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের বৈঠক শেষে উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট৷ আগামী রোববার বা সোমবার সিন্ডিকেটের সভা বসার কথা রয়েছে৷

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়নে গত শনিবার ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল মোকাদ্দেম (এম এম আকাশ), টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া ৷

খসড়া আচরণবিধিতে কী আছে?
খসড়া আচরণবিধিটি ১৪টি ধারায় বিভক্ত৷ নির্বাচনী প্রচারের ধরন, নির্বাচনী প্রচার চালানোর জন্য প্রার্থী-সমর্থকদের দৈনিক সময়সীমা, ভোটের দিন কী করা যাবে, কী করা যাবে না, ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের তৎপরতার সীমা, প্রতিপক্ষকে হেয় করা বা তাঁদের প্রচারে বাধা-এসব বিষয়ে আচরণবিধির খসড়ায় সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে৷ কোনো প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকদের কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, সে বিষয়টিও খসড়ায় রয়েছে৷

আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না৷ প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন না৷ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা, প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন, মোটরসাইকেল ও মোটরযান সহকারে শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না৷ প্রার্থী-তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচন দিনের ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে৷ প্রচারের সময়সীমা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত৷ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার বা প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না৷

কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করতে চাইলে দিন,সময় ও স্থান উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে৷এ ধরনের অনুমতি লিখিত আবেদন প্রাপ্তির সময়ের ক্রমানুসারে দেওয়া হবে৷ সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করার অনুমতি অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে নিতে হবে৷ এক প্রার্থী বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে ১টি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি প্রজেকশন মিটিং করা যাবে৷ কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো ছাত্রসংগঠন হলের ভেতরে বা ক্যাম্পাসে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা করতে পারবে না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন সড়কে জনসভা-পথসভা বা সমাবেশ এমনকি কোনো মঞ্চ তৈরি করা যাবে না৷ পাঠদান বা পরীক্ষা-কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে এমন কোনো স্থানে সভা-সমাবেশ বা নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে না। শ্রেণিকক্ষের ভেতর ও বারান্দায় মিছিল করা যাবে না৷ কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার চালানো যাবে না৷ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এবং আবাসিক হলে কেবল মিলনায়তনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে৷ প্রতিপক্ষের সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান ব্যাহত বা পণ্ড হতে পারে বা গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না৷

নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রার্থী নিজের ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি বা প্রতীক লিফলেট বা হ্যান্ডবিলে ব্যবহার করতে পারবেন না৷

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন