যে কারণে বৈশাখী ভাতার টাকা তুলতে পারেননি শিক্ষকরা!

  14-04-2019 04:47PM

পিএনএস ডেস্ক : পয়লা বৈশাখের আগে সরকারের দেয়া বৈশাখী ভাতা হাতে পেলেন না সারাদেশের লাখ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী। তাদের জন্য এ বছরই প্রথম বৈশাখী ভাতা ছাড় করেছে সরকার। এর কারণ হিসেবে কতিপয় প্রতিহিংসপরায়ণ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনোভাবকেই দায়ী করেছেন বেসরকারি শিক্ষকরা।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনেকই আগেই এ খাতে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টাকা ব্যয়ের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। তবুও সময়মতো বিল প্রস্তুত করে শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবদের কাছ থেকে অনুমোদন এবং আগেভাগেই ব্যাংকে চেক না পাঠানোয় তারা পয়লা বৈশাখের আগে টাকা তুলতে পারেননি।

শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালক বিদেশ সফরে রয়েছেন। এ সময়ে মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরী। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির মহাসচিব এবং বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি শিক্ষকদের সম্পর্কে কটূক্তি এবং প্রতিহিংসামূলক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যথাসময়ে বৈশাখী ভাতার বিল প্রস্তুত ও চেক ব্যাংকে পাঠানোর উদ্যোগ নেননি। এছাড়া অধিদপ্তরের নতুন উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুহুল মমিনও একই সিন্ডিকেটের সদস্য।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কাওছার আলী সেখ সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এ অর্থ ছাড় করা হয়। মাত্র তিন দিন সময় দিয়ে ১১ এপ্রিলের মধ্যে তা তুলতে নির্দেশ দেওয়া হয় সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের। অথচ এ তিন দিনের মধ্যে টাকাই পৌঁছায়নি বহু জেলায় শিক্ষকদের হিসাব নম্বরে। ফলে সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষক বৈশাখের আগে এ ভাতার অর্থ তুলতেই পারেননি।

তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে, আমিসহ ঢাকারও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বৈশাখী ভাতার টাকা তুলতে পারেননি। আর দুটোদিন আগেও যদি ব্যাংকে চেক পাঠাতেন তাহলেও বৈশাখী ভাতার টাকা তোলা যেত।

কাওছার আলী বলেন, সারাদেশের ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের ৯৫ ভাগই প্রথমবারের মতো দেওয়া এই ভাতার অর্থ তুলতে পারেননি।

মাউশি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুহুল মমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা-২০১৯ এর অর্থ ছাড় করা হয়েছে গত ৯ এপ্রিল। এ ভাতার অর্থের ৮টি চেক সংশ্নিষ্ট ব্যাংকে ওই দিনই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরাধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা বণ্টনকারী অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে এবং জনতা ও সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের হিসাব নম্বরের মাধ্যমে বৈশাখী ভাতার টাকা তুলতে পারার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই ঘোষণা কোনো কাজে আসেনি।

রাজধানীর মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব অগ্রনী ব্যাংকের মিরপুর-১ নম্বর শাখায়। শিক্ষকরা সেখানে যোগাযোগ করলে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, তারা অর্থ ছাড়ের কোনো অ্যাডভাইস পাননি। ফলে শিক্ষকরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। ১১ তারিখের মধ্যে অর্থ তুলতে বলা হলেও ওই সময়ের মধ্যে টাকা ব্যাংকেই পৌঁছেনি।

এই প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বৈশাখী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। একই বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত দুই বছর এ ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবার তা চালু হলেও বাস্তবে কেউ তা হাতে পাননি। মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিহিংসামূলক মনোভাব এবং গাফিলতিতে টাকা ছাড় করা হয়েছেই দেরিতে। সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ।

নড়াইল সদর উপজেলার এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জানান, তারা তাদের বেতন-ভাতা রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে উত্তোলন করেন। তবে তারা রূপালী ব্যাংকের নড়াইল শাখায় বৈশাখী ভাতা উত্তোলনের শেষ দিনে (১১ এপ্রিল) বিল জমা দিতে পারেননি।

তাদের অভিযোগ, বৈশাখী ভাতার বিল জমা দিতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে আগামী ১৫ এপ্রিল (২ বৈশাখ) বৈশাখী ভাতার বিল জমা নেবেন জানিয়ে চলে যেতে বলেন। ঢাকার বাইরে নড়াইলে বৈশাখের আগে বৈশাখী ভাতা তুলতে না পেরে বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ ছাড়া প্রতি মাসের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা তুলতেও ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।

তারা বলেন, এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে নানা অজুহাতে হয়রানি আরও বেড়ে যায়। এমনকি বিল জমা নিতেও গড়িমসি করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের নড়াইল শাখার ব্যবস্থাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতার অর্ডার শিট (হার্ড কপি) এখনও পর্যন্ত হাতে পাইনি। বৃহস্পতিবার বৈশাখী ভাতা জমা দেওয়ার শেষ দিন হলেও আগামী ১৫ এপ্রিল (২ বৈশাখ) বৈশাখী ভাতার বিল জমা নেওয়া হবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।

টাকা হাতে পাননি সিলেটের ওসমানীনগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরাও। বৈশাখী ভাতার টাকা শেষ তারিখেও দিতে পারেনি জনতা ব্যাংক তাজপুর শাখা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে শিক্ষকদের নববর্ষের আনন্দে ভাটা পড়েছে। নববর্ষের পরে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে হবে শিক্ষকদের। একই অবস্থা মাদ্রাসা শিক্ষকদেরও।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল লেইছ বলেন, সরকার নববর্ষের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাতা প্রদান করলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তারা নববর্ষের আগে ভাতার টাকা পাননি। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বেতনও পাওয়া যায় না।

জনতা ব্যাংক তাজপুর শাখার ব্যবস্থাপক সুভাশিষ চক্রবর্ত্তী বলেন, ১১ এপ্রিল শেষ তারিখ হলেও ওইদিন পর্যন্ত ব্যাংকের শাখায় ভাতার টাকা পৌঁছায়নি বলে শিক্ষকদের টাকা দেওয়া যায়নি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন