কাদের ব্যর্থতায় সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোয় দানব তৈরি হচ্ছে

  23-12-2019 06:10PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি নূরুল হক নূরুর উপর আবারও হামলা হয়েছে। এবার হামলা হয়েছে ডাকসু ভবনের মূল ফটকে। হামলা চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে এ হামলা চালানো হয়। এতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ডাকসু ভবনে এ হামলায় নূরুল হক নূরুর সঙ্গে থাকা অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে। এ হামলার শিকার তুহিন ফারাবিকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। হামলার ঘটনাটি সব মহলে বেশ আলোচিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের নির্বাচিত সহ-সভাপতির উপর এ হামলাকে কেউ ভালোভাবে নিচ্ছেন না।

চলতি বছরের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন সেখানকার ছাত্র আবরার ফাহাদ। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ডাকসুর ভিপির উপর প্রকাশ্যে পৈশাচিক হামলা সচেতন জনগোষ্ঠীকে অবাক ও বিস্মিত করেছে। ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করছে, বুয়েটের নির্মম ঘটনা থেকে কেউ শিক্ষা নেয়নি। শিক্ষা নিলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারত না।

নিন্দনীয় ও দুঃখজনক এ ঘটনার পর ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বিব্রত বলে মন্তব্য করেন। তিনি দায়িত্বশীলদের কথাবার্তা ও আচরণে সতর্ক থাকার কথাও বলেন। আরেক ভিপি আ স ম আবদুর রব বলেন, এ হামলা গণতন্ত্রের উপর হামলা। এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন তিনি। প্রায় এক ও অভিন্ন কথা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন।

ডাকসু সহ-সভাপতি নূরুল হক নূরুর ওপর গত পরশুর হামলা মিলিয়ে অন্তত দশমবারের মতো এ হামলা হলো। ভিপি নূর কোনো অপরাধ করে থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার করা যেত। সেটা না করে যে বা যারা বারবার তার ওপর হামলে পড়ছে, অতীতে তাদের আইনের আওতায় না-আনায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কথাটি বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমনই বক্তব্য জাতির প্রত্যাশা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিষ্ঠানটির ভিসির বক্তব্য অন্তসারশূন্য ও রহস্যজনক। অভিজ্ঞমহলের মতে, এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ও মন্তব্য নাকি অনেকটাই দায়িত্বহীন।

যেখানে আমাদের সর্বোচ্চ মেধাবীরা শিখতে, জানতে ও বুঝতে যায়। যায় জীবনটা গড়তে। সেখানে গিয়ে যেসব পরিস্থিতি ও পরিণতির শিকার হতে হয়, তার কিঞ্চিত আমরা জেনেছি ৭ অক্টোবর বুয়েটে আবরারকে হারানোর মধ্যদিয়ে। তারপর বেরিয়ে আসতে থাকে ভয়াবহ ও চরম আতঙ্কজনক ঘটনা। যেসব ঘটনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলদের নজিরবিহীন দায়িত্বহীনতা, অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও অমানবিকতার দিকগুলো সামনে নিয়ে আসছে।

ডাকসু সহ-সভাপতি নূরুল হক নূর একজন পরিচিত মুখ, একজন ছাত্র প্রতিনিধি, সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের নির্বাচিত নেতা। উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ নন। তার উপর যদি বারবার এরকম হামলা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিণত কতটা সঙ্গীণ ও ভয়ানক হতে পারে, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না অসহায় অভিভাবকরা। যারা নির্মম-পৈশাচিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের সুপথে আনার দায়িত্ব যাদের; তাদের ব্যর্থতায় তারা বিপথগামী হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রিয় সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞান অর্জনের জন্য অভিভাবকরা পাঠান। যাদের পাহাড়সম ব্যর্থতা, অযোগ্যতা ও দায়হীনতায় জ্ঞানী মানুষের বদলে শিক্ষার্থীরা দানবে পরিণত হয়- সে প্রতিষ্ঠানকে তো এই দায় নিতে হবে। এসব ঘটনার ব্যর্থতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অভিভাবকদের বিচারের আওতায় আনা না-হলে শিক্ষাঙ্গনে জীবনহানি ও রক্তের হোলি খেলা সহজে থামবে না। বন্ধ হবে না বাবা-মায়ের সন্তান হারানোর বেদনা।অবসান ঘটবে না শোকের মাতমের।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন