‘মহাত্মা অশ্বিনী’ কলেজ নাম যুক্ত করার পক্ষে ও বিপক্ষে বিক্ষোভ

  15-07-2020 09:59PM

পিএনএস ডেস্ক : সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে সেখানে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারি কলেজ নাম যুক্ত করার পক্ষে ও বিপক্ষে বিক্ষোভ এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে উত্তেজনা বিরাজ করছে বরিশালজুড়ে। বুধবার সকালে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন এবং এর বিরুদ্ধে সরকারি বরিশাল কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাংশ পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচি পালন করে।

এ সময় উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়ন করা হয়। বেলা ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বরিশাল কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর।

বরিশাল কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ব্যানারে করা গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা তাদের দাবি তুলে ধরে বলেন, অশ্বিনী কুমারের স্বজনরা বাড়িটি বিক্রি করে। পরে সেখানে বরিশাল কলেজ স্থাপন করা হয়। বিভাগীয় শহর হিসেবে কলেজের নাম বরিশাল কলেজ রাখাই যুক্তিযুক্ত বলে দাবি তাদের।

এ সময় বক্তব্য রাখেন যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব হোসেন খান প্রমুখ।

অপরদিকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ বাসদ বরিশাল জেলা কার্যালয় থেকে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরণের দাবিতে মিছিল বের করে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অশ্বিনী কুমার হলের রাস্তার অপরপ্রান্তে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ।

এ সময় তাদের সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি সংসদ, শিশু-কিশোর মেলা বরিশাল জেলা শাখা এবং বরিশাল রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নসহ অনেকেই বিক্ষোভে অংশ নেয়।

এ সময় বাসদ নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষার বিস্তারে মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের অবদান অনস্বীকার্য। মহাত্মার বসতভিটাটাই এখন বরিশাল কলেজ। অথচ সেখানে তার কোনো নাম নেই। ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার সরকারি কলেজ, বরিশাল’ নামে নামকরার গেজেট নোটিফিকেশন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। একই সঙ্গে কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে মিউজিয়াম ও ভাস্কর্য করার দাবি জানান তারা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস নিজে সংসদে দাঁড়িয়ে বরিশাল কলেজের নাম অশ্বিনী কুমার কলেজ করার দাবি তুলে ধরেছিলেন। আজ যখন সেটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে তখন আওয়ামী লীগই এর বিরোধিতা করছে।

বাসদের আহ্বায়ক ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী, বাসদ মার্কসবাদী আহ্বায়ক সাইদুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক সাগর দাস প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত শুধু বরিশালের প্রাণপুরুষই নয়, পুরো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এই উপমহাদেশে অগ্রগামী ভূমিকার পেছনে নক্ষত্রের মতো ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত। ব্রিটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।

আকর্ষণীয় আইন পেশা ছেড়ে মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে গেছেন, পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রজমোহন স্কুল (১৮৮৪) ও ব্রজমোহন কলেজ (১৮৮৯)। দুটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা ও ভারতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করে নিয়েছিল। বরিশালের সামাজিক-রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আজকের বরিশাল কলেজ ছিল অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন। এই বাসভবনের অঙ্গনেই তার রোপণ করা তমাল বৃক্ষতলে বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল।

তিনি অর্জন করেছিলেন মহাত্মা খেতাব। দেশভাগের পরে তার উত্তরাধিকারীগণ দেশত্যাগে বাধ্য হলেও, তার বাসভবনে গড়ে ওঠে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বরিশাল নাইট কলেজ। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে ক্রমশ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কলেজটি সরকারিকরণের পরে ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’ নামে স্বীকৃত হয়।

বরিশালের প্রগতিশীল মানুষজনের প্রতিবাদের পরও তার বাসভবনটি সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে ফেলা হয়। অশ্বিনী কুমারের বাসভবনে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল কলেজে অশ্বিনী কুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে কিছুই নেই। তাই অবিলম্বে সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের নামে করার প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি জানিয়েছেন বাসদ নেতৃবৃন্দ।

পিএনএস/এসআইআর


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন