ফাহিমের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুললেন নওরীন

  18-04-2018 12:16AM

পিএনএস ডেস্ক:গতমাসের শেষভাগে ফাহিম শাহরিয়ার নামের এক তরুণ মডেল আত্মহত্যা করেন। ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ফ্যানের সাথে ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। ফাহিম শাহরিয়ার রাজধানীর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি হাউজিং কম্পানিতে চাকরি করতেন। এই আত্মহত্যার ঘটনায় মডেল ও উপস্থাপক নওরীনের নাম সামনে আসে। ফাহিমের। সাথে সম্পর্কে ছিলেন নওরীন। সম্প্রতি নওরীন বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর ফেসবুক হ্যান্ডেলে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমি নওরিন আহমেদ। ফাহিম শাহ্‌রিয়ারের সাথে এই বছর আমাদের বিয়ের কথা চলছিল। তার আগে আপনাদের কাছ থেকে জানতে চাই, আপনারা আমাকে চিনেন? জানেন? এই ঘটনা। ঘটার আগে এই নওরিন আর ফাহিম নাম শুনেছেন? না! শুনেন নি কারণ আমি কোনো নায়িকা বা সুপারস্টার হতে চাই নি। আমি খুবই সিম্পল মেয়ে, শুধু উপস্থাপনা করি আর মাঝে মধ্যে কিছু স্টিল ওয়ার্ক। যদি এতোই নায়িকা বা সুপারস্টার হওয়ার ইচ্ছা থাকতো তাহলে আমাকে নানারকম ইভেন্ট-পার্টিতে বা গ্রুপ গেটটুগেদার গুলোতেও হয়তো দেখতে পেতেন।

যাই হোক সেদিন কি হয়েছিলো তা এখন সবারই জানা, আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই এতো মার খেতে হয়েছে কিন্তু যখন প্রশ্ন করলাম আমাকে কেনো মারছো? আমি কি করেছি? বলে রাখি সেদিন থেকে ২দিন আগে ফাহিম নিজেই আমার সাথে ব্রেক আপ চাচ্ছিলো,আমি হতে দেইনি কারণ আমি ছেড়ে দিলে ও একা হয়ে যাবে।

যাই হোক সেদিন ফাহিমের এমন চেহারাটা আমার পরিচিত না, চোখ দুটা এতো লাল। কিসের এতো রাগ? আর কার উপর? আমার দোষটা কই? ফাহিম আমাকে একটাই উত্তর দিয়েছিলো জানি না। আর বলেছিলো শ্যুটে আসছো আমাকে বলো নাই কেনো? আমার উত্তর ছিলো তুমি তো আমার ফোন রিসিভ করো না।ফেসবুক আইডি ও ডিএক্টিভেট করে রাখছ কিভাবে জানাবো? আর হ্যাঁ আমি এটাও বলেছিলাম যে আর তোমার তো অফিস আছে।
ফাহিম উত্তরে বলেছিলো আজ ২৬মার্চ। পাবলিক হলিডে। কিন্তু কসম আমার আল্লাহ্‌র আমার একদমই মনে ছিল না যে সেদিন কতো তারিখ ছিল? কারণ ২৬ মার্চ এর আগের ২দিন ধরেই ফাহিম আমাকে ইগনোর করছিলো। আর আমি ফাহিমের ইগনোর‍্যান্স টলারেট করতে পারি না,কখনই পারতাম না তাই যত ঝগড়া হতো আমিই গিয়ে আগে সরি বলতাম। তাই ২৫ তারিখ রাতে আমি স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাই।

আমি প্রশ্ন করাতে তার উত্তর ছিল আমার কিছু ভালো লাগে না,আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছি না। আমি আমাকেও সহ্য করতে পারছি না, আমি আমার আম্মাকে স্বপ্নে দেখি আমাকে আম্মা তার কাছে ডাকে, আমি চলে যাবো। আমি আর ফাহিমের বেস্ট ফ্রেন্ড শিপন অনেক বুঝাই যে, বাবু এমন কিছু না, তুমি আন্টিকে অনেক ভালোবাসতা তাই এমন ফিল হচ্ছে।

এখন আমার কিছু প্রশ্ন সেইসব মহা মানুষদের কাছে যখন ফাহিম এমন সিচুয়েশনে ছিলো তখন কই ছিলেন আপনারা? আমাকে একটা মেয়ে নক দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বলছে তার ভাইকে আমি খুন করেছি সে দেশে আসলে আমাকে খুন করবে। কিন্তু এটা ফাহিমের কোন বোন যাকে আমি চিনি না? ফাহিমের সব কাজিন আর তার একমাত্র বোন ছাড়া আমাকে আর কারো সাথে পরিচয় করায় দেয় নি ফাহিম।

এখন বলি ফাহিমের ফ্রেন্ড সুইডেন ইসলাম এবং জায়েদ প্লাবনের কথা, ফাহিমের মা মারা যাওয়ার পর একবারের জন্য তারা কেউ ফাহিমকে দেখতে আসেনি, ফাহিম মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে সুইডেন তার বউকে নিয়ে ধানমন্ডি থেকে কোথাও যাচ্ছিলো তখন আমি আর ফাহিম তাদের পাশের রিকশাতে, ফাহিম সাথে সাথে সুইডেনকে কল করে মজা ঠাট্টা করলো। কই? তুমি এতো ভালো ফ্রেন্ড নাকি রিকশাটা সাইড করে বন্ধুটাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারলি না?

ইমরান ফাহিমের আরেক ছোটবেলার বন্ধু ও রুমমেট। আমার ইমরানের কাছে প্রশ্ন কেনো ইমরান? তুমি পাশের রুমে থেকেও তোমার বন্ধুকে আটকাতে পারলা না? অহ হ্যাঁ তুমি তো নাকি ফাহিমের রুমে গিয়ে আস্ক করেছিলা যে এমন স্ট্যাটাস কেনো দিছিস, ফাহিম উত্তরে কি বলেছিলো ইমরান আবার বলবেন কষ্ট করে? আমি বলি? ফাহিমের উত্তর ছিলো 'নওরিনকে ভয় দেখাতে দিয়েছি।' তাহলে আমি কিভাবে খুনি হই? ফাহিমের যখন জন্ডিস ধরা পরলো তখন ফাহিমের পাশে রাত দিন কে ছিলো ইমরান?

বেশি দিন আগের তো কথা না। বাচ্চাটা আমার খেতে পারে না, খাবার রান্না করে কখনো কিনে এনে নিজে হাতে খাওয়াইসি, তুমি তো সব দেখেছিলে, তোমাকেও তো খাবার শেয়ার করেছিলাম। এতো জলদি ভুলে গেলা?
আমার প্রশ্ন আমি যে মেয়ে ৩টা বছর ফাহিমের সাথে বিয়ের আশা নিয়ে একটা রিলেশনশিপে ছিলাম তাহলে এমন কি হলো যে আমার হাতে মেহেদি পরারা আগেই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো? একটা মেয়েই বুঝে কতোটা জালা আমার ভিতর জলচ্ছে, অহ সরি! কিভাবে বুঝবে নিজের সাথে তো হয় নি।

ফারিন নামের এক সাপোর্টিং নায়িকা আজ শুনি সেউ নাকি তার বোন ছিলো আর তাদের মধ্যে রিলেশন খারাপ আমার কারণে হয়েছে, তার উদ্দেশ্য একটু বলি যে, আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড ফাহিমের জানা ছিলো তোমার সাথে যা চ্যাট হতো তা ফাহিম করতো আমি না। আর এটা ফাহিমের ডিসিশন ছিল যে তোমার থেকে দুরে থাকা তুমি ধরা খাইসিলা কোনো একটা ব্যাপারে। জানি আর কোতো এমন বোন আর বন্ধুদের ফেইস করতে হবে আমার যাদের আমি চিনিও না, ফাহিমের মুখে নামও শুনি নাই।

যেই মেয়ে ফাহিম ছাড়া কিছুই বুঝতো না, যেখানে যেতাম ফাহিম সাথে নিয়ে, নাহলে যেতাম না। ফাহিমের আম্মু মারা যাওয়ার পর আমি আমার বাসায় ন। জানিয়ে কিশোরগঞ্জ গিয়েছি সকাল ৬টায় বের হয়েছি রাত ১০টায় বাসায় ফিরি। আমাদের বিয়ের ফটোগ্রাফার পর্যন্ত ঠিক করে রেখেছিলাম অথচ এখন আমার শুনতে হয় আমার নাকি অন্য কারো সাথে রিলেশন ছিলো।

আচ্ছা আপনারাতো এতো জ্ঞানী তাহলে আমার যদি আরেকটা রিলেশন থাকতো তাহলে এইযে আমি সারাদিন ফাহিম নিয়ে পড়ে থাকতাম, অর সাথেই ছবি দিতাম তাহলে কি অন্য বয়ফ্রেন্ড আমাকে ছেড়ে দিতো?
আরো অভিযোগ আমাকে নিয়ে, আমি নাকি অ্যাম্বুল্যান্স না ডেকে পুলিশ ডেকেছিলাম সেদিন, ইমরান কিছু বলতে চাও? মুসলিমতো তুমি তাই না?

আমি আমার বাবুর মাথা আমার কোলে রেখে অকে ডাকছিলাম আর সবাইকে চিতকার করে বলছিলাম প্লিজ একটা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দেন দোহাই লাগে, আমি নিজে ফাহিমের মুখে শ্বাস দেয়ার ট্রাই করেছি এবং তখনো বলছিলাম যে ফাহিম আমার ব্রেথ একসেপ্ট করছে প্লিজ জলদি হসপিটাল নেই একটা মানুষও আগায় আসে নাই। উল্টা আমাকে পাগল বলা হচ্ছিলো।

তখন কই ছিলেন আপনারা? আমাকে সুইডেন বলে আমি ফোন কেনো রিসিভ করলাম না। বাহ, আমার ফাহিম ওভাবে পরে আছে আর আমি নাকি আমার ফোন নিয়ে বসে থাকবো? আমিতো জানিও না যে আমার ফোনটা কই? পুলিশ আসলো ছবি তুল্লো, আমি তখনো বলছিলাম যে এভাবে ওর ছবি কেনো তুলছেন অকে hospital এ নিন প্লিজ, আমাকে বলা হলো যে নিচ্ছি এবং অক্সিজেনও দেওয়া হবে। আমি বাসায় এসেই দু'আ পড়তে থাকি কারণ আমি জানি আমার ফাহিম আমাকে ছেড়ে যাবে না।

আমাদেরতো বিয়ে অক্টোবরে। হি প্রমিজড মি হি উইল মেরি মি হার... বাসায় আসার পর আমার ফিজিক্যাল কন্ডিশন এতো টা স্ট্রং ছিলো না বলে আমি সেন্সলেস হয়ে পরি। আর আমার যখন সেন্স আশে আমি ফাহিমের বাবাকে ফোন দিয়ে প্রশ্ন করি যে ফাহিমের এখন কি অবস্থা ওর কি সেন্স আসছে? কিন্তু তার বাবা আমাকে খুব সহজেই বলে দিলো জানো না, ফাহিম নাই? কাল না দেখে আসছো? আমি উনার ফোন কেটে ফাহিমের আপন ছোট বোন রোদেলাকে ফোন দেই, ও সেইম কথা শুনায় দিলো, আমি তখনও বার বার বলছিলাম রোদেলাকে যে ফাহিম বেচেঁ আছে তুমি আঙ্কেল কে বলো অক্সিজেন দিতে। ও তখনও আমাকে বল্লো যে আচ্ছা বলতেছি, তুমি স্ট্রং হও। আমাকে সুইডেন বলে আমি নাকি ফাহিমকে লাস্টবার দেখতে যাই নি, আমি নাকি চিল করছিলাম।

আল্লাহ্‌ যদি থেকে থাকেন এদের উত্তর উনি দিবেন। আমাকে যখন আমার ফ্যামেলি বার বার কনফার্ম করে যে আসলেই আমার ফাহিম নেই, আমি আবার ফাহিমের বাবাকে ফোন দেই, আংকেল প্লিজ আমি আমার ফাহিমকে দেখবো। কোথায় আছেন আপনারা? আমাকে বলে নাই। আমি অনেক বার রিকোয়েস্ট করেছিলাম বাট আমাকে বলেও নাই কই আছে, আর উত্তরে এটাও বলেছিলো যে এখন দেখে কি করবা?

আমার নামে আরেকটা অভিযোগ যে আমার মা ফাহিমকে কি এমন বলেছে যে ও সুইসাইড করেছে?! আমার মা ফাহিমকে বার বার প্রশ্ন করেছিলো তুমি যে আমার মেয়েকে এভাবে মারলা কি এমন হইছে বাবা প্লিজ বলো। ফাহিম তখনও চুপ, তখন আমার আম্মু বলেছিলেন যে আমিতো আমার মেয়ে এখনো দেই নাই তোমার কাছে তাতেই তুমি এভাবে মারছ যে ওর মাথা ফেটে দিছ, বিয়ে দিলে কি করতাম আমরা?! ফাহিম তখনও চুপ।

এর পর আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আর যতদুর শিপন থেকে আপডেট নেওয়া দরকার, নিয়েছি, আর শুনেছি ফাহিম নাকি সেদিন বাইকে করে সারা ঢাকা শহর ঘুরেছিলো এবং পরেরদিন অফিস যাবার কথা বলে শিপনকে আস্থা দিয়েছিলো।

আর একটু বলে রাখি যে ফাহিম যখন ছাদ থেকে সুইসাইড অ্যাটেম্পট নিয়েছিলো সাথে সাথে আমার মা ফাহিমের বাবাকে ফোন করে বলেছিলেন ফাহিম পুরাই মেন্টালি হয়ে গেছে। ওর একা থাকাটা রিস্ক আপনি এসে ফাহিমকে নিয়ে যান। তার বাবা উত্তরে বলেছিলেন, আচ্ছা দেখছি। আর তার বোন রোদেলা আমাকে বলেছিলো, আপু আমি হলে এমন ছেলের সাথে জীবনেও থাকতাম না, আমার ভাই তো কুত্তা হয়ে গেছে, ও একটা জানোয়ার জানো না তুমি?

আর জ্বি, ফাহিমের আমার মিডিয়াতে কাজ করা নিয়ে কোনো প্রবলেম ছিল বলে আমারতো মনে পরে না, উল্টা ওই একজন ছিল যে আমাকে সাজেস্ট করতো কোন এবং কার সাথে কাজ করবো আর কোনটা/কাদের সাথে কাজ করা আমার উচিৎ হবে না। এটা যারা আমাদের কাছ থেকে চিনে জানে তারাই দেখেছে।

কিন্তু ফাহিমের মাথায় এইসব কিভাবে আসলো? কেই বা উসকালো নাকি এটা ফাহিমেরই লিখা ছিলো আমি জানি না। কারন তখন আপনি বা আমি ওর পাশে ছিলাম না।

আমি শুধু জানি আমি ফাহিমকে ভালোবাসি আর আমার ফাহিমও আমাকে অনেক ভালোবাসে। বাস!!
যা হারানোর আমি হারিয়েছি, আর গালিটাও আমি খেয়েছি। এতোদিন এতো সাংবাদিকের ফোন, এতো মানুষজনের গালি আর প্রশ্নের সব উত্তর দিয়ে দিলাম।

জানি তারপরও দোষটা আমার কারণ আমি একজন মানুষ না, মেয়ে মানুষ। আজ ফাহিমের জায়গায় যদি আমি থাকতাম তখনও দোষ আমার হতো নিশ্চয় মেয়েটার চরিত্র খারাপ ছিলো। আর যদি সেদিন আমাকে মারতে মারতে মেরেই ফেলতো তাহলেও দোষটা আমার নিশ্চয়ই মেয়েটা এমন কিছু করছিলো যে ছেলেটা সহ্য করতে না পেরে মেরে ফেলছে।

দয়া করে আর কথা না বাড়িয়ে আমার ফাহিমের জন্য দুইরাকাত নামাজ পইরেন। আল্লাহ মালিক কখন কার দু'আ কবুল করে নেন একমাত্র উনিই জানেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন