বাংলা চলচ্চিত্রে ধর্ষণ দৃশ্যের ভয়াবহ সামাজিক প্রভাব

  18-04-2018 12:26PM

পিএনএস ডেস্ক: ভেস্ট করি বা নৃত্য পরিচালনা করি তখন এটা ভাবি যেন পরিবার নিয়ে সবাই দেখতে পারে। কিন্তু পরবর্তী যেসব এনজি শট থাকে সেগুলো লাগিয়ে হলে প্রদর্শন করা হয়।

বাবুলের বলছেন এনজি শট অর্থাৎ যে দৃশ্যগুলো প্রচারের জন্য না সেসব দৃশ্যের কথা। কিন্তু এনজি শট সেটা পরিচালক-প্রযোজকদের কাছেই থাকে, সেটা কিভাবে বাইরে হল পর্যন্ত পৌঁছায় সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এদিকে এই সিনেমার যারা দর্শক তারা কী মনে করছেন। ঢাকার বলাকা সিনেমা হল এলাকায় কথা বলা হয় কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে।

একজন নারী দর্শক বলছিলেন- আইটেম সং নামে যেগুলো শুরু হয়েছে সেগুলোর কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।

আরেকজন পুরুষ দর্শক বলছিলেন- রেপের দৃশ্য না থাকাই ভাল। কারণ এতে করে এক শ্রেণীর যুব সমাজ প্রভাবিত হয়ে পরে। আমরা যুব সমাজ, যেমন আমাদের মনে হয় নায়ক এটা করতে পারলে আমি করতে পারবো না কেন?

অনেকে মনে করেন- বলিউডের ফরমুলার অন্ধ অনুকরণ হয়েছে ঢাকার চলচ্চিত্রে।

বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। প্রায় প্রতিদিন গণমাধ্যমে খবর হতে দেখা যায়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে ২০১৬ সালে ৬৫৯জন নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে।

২০১৭ সালে এই সংখ্যাটা বেড়েছে। ৮১৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। গত বছর চলন্ত বাসে এক তরুণীর ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।

এছাড়া শিশুদের ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সন্তানের বাবা-মায়েরাও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এই সব ঘটনার মূলে মনস্তাত্ত্বিক যে বিষয়, সেখানে চলচ্চিত্র কতটা ভূমিকা রাখছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন যিনি সিনেমা নিয়ে গবেষণা করেন তিনি বলছিলেন সিনেমাতে ধর্ষণকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে সেটা কাহিনীর প্রয়োজনে নয় বরং একটা পর্নোগ্রাফিক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

গীতি আরা নাসরিন বলছিলেন, আমরা অনেক সিনেমার ধর্ষণ দৃশ্য বিশ্লেষণ করেছি, যেটা দেখে মনে হয়নি যে এটা কাহিনীর প্রয়োজনে দরকার ছিল। ফরমুলা সিনেমাতে এটা যৌন উত্তেজক বিষয় হিসেবে দেখানো হয়। এখন মানুষ এটা বারবার দেখছে এবং একটা পর্যায়ে যেয়ে মনে করছে, এটা স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। এটা তাদের মাথার মধ্যে গেঁথে যায় যে নারীর প্রতি এ ধরনের আচরণ করা যায়।

সিনেমা বিশ্লেষকরা বলছেন সিনেমাতে ধর্ষণ দৃশ্য যেভাবে দেখানো হচ্ছে তাতে করে সমাজে এর এক বৈধতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সেন্সর বোর্ড বলছে তারা অশালীন কিছু থাকে এমন দৃশ্য কেটে তারপর ছাড়পত্র দেয়। আবার পরিচালক, প্রযোজক বা নায়ক নায়িকারা এটাকে গল্পের প্রয়োজন বলেই মনে করছেন।

কিন্তু সিনেমার দর্শকরা এটাকে কিভাবে নিচ্ছেন সেটাতেই অনেকখানি পরিষ্কার হচ্ছে যে সমাজে এর একটা স্পষ্টতই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন