চলে গেলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বরেণ্য শিল্পী টেলি সামাদ

  23-04-2019 03:47PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : চলে গেলেন চিত্রজগতের দেশবরেণ্য ও গুণী শিল্পী টেলি সামাদ। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটলেও তিনি তার অভিনয়ের মাধ্যমে এ জগতকে তিনি মাতিয়ে রাখেন। স্বরচিত গানে কণ্ঠ দেন নিজেই। তার কণ্ঠে গাওয়া গানগুলো একসময় মানুষের মুখে মুখে ছিল। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জনপ্রিয় এই শিল্পী সবাইকে কাঁদিয়ে না-ফেরার দেশে চলে যান ৬ এপ্রিল দুপুরে।

১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামে টেলি সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম আবদুস সামাদ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন তার ডাক নাম দিয়েছিলেন টেলি সামাদ। যে নামে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। অথচ কালক্রমে কর্মক্ষেত্র হয়ে যায় সম্পূর্ণ উল্টো।

১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার পদচারণা শুরু হয়। অভিনয় জীবনের চার দশকে টেলি সামাদ ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।নয়নমনি ও ‘পায়ে চলার পথ’-এর মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেন। ‘মনা পাগলা’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি প্রায় অর্ধশতের মতো চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন। তার কণ্ঠে জাদু ছিল। আর গায়কিতে ছিল মাদকতা। ফলে তার কণ্ঠের গান দর্শক-শ্রোতাদের মনে সহজেই গেঁথে যেত।

১৯৭৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি নিরলসভাবে টানা অভিনয় জগতে ছিলেন। তার ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জিরো ডিগ্রী, কুমারী মা, সাথী হারা নাগিন, আমার স্বপ্ন আমার সংসার, কাজের মানুষ, মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মাটির ঘর, গোলাপী এখন ট্রেনে, ভাত দে, রঙিন রূপবান, চাষীর মেয়ে, সুজন সখী ইত্যাদি। সেসব ছবিতে তিনি দর্শকদের মাতিয়ে রাখতেন। তার অভিনয়শৈলী আর বাচনভঙ্গি সর্বস্তরের দর্শক-শ্রোতাদের মন কাড়ত।

একজীবনে টেলি সামাদ একাধারে চলচ্চিত্র, মঞ্চ, টেলিভিশন, নাট্য অভিনেতা হিসেবে নিজের যোগ্যতার সমান প্রমাণ রাখেন সর্বত্র। এর বাইরে তিনি বিনোদন জগতের শিল্পী-কলাকৌশলী ও গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে দেশ-বিদেশে অকৃপণভাবে দেশীয় সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করেন। জীবনে তিনি কখনো অর্থকে বড় করে দেখেননি। ফলে অর্থকষ্ট যার লেগেই থাকত। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতেন না। শিল্প-সংস্কৃতির শুদ্ধ চর্চাই তার পরম আরাধ্য ছিল। আর সেটাই তিনি করে গেছেন আজীবন। ফলস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।

চলচ্চিত্র, মঞ্চ, টেলিভিশন, নাট্য অভিনেতা হিসেবে টেলি সামাদকে নতুন করে পরিচিত করার কিছু নেই। তিনি নিজ গুণেই মানুষের মনের গভীরে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আজকের দিনে কাতুকুতু দিয়ে মানুষকে হাসানোর কতই না চেষ্টা করা হয়। কিন্তু টেলি সামাদ কখনো সেটা করতে হতো না। যার হালকা-পাতলা দেহের নান্দনিক অঙ্গভঙ্গি, বানভঙ্গি আর কথার জাদুতে মানুষ বিমোহিত হতো।

তার গিত গানগুলোর মধ্যে ‘দিলদার আলী আমার নাম, খেল দেখানো আমার কাম’, ডেগরো ভিতরে ডাইলে চাইলে উতরে গো সই’, দেওয়ানা বানাইয়া খাইছে মোরে গিল্লা’ এককালে গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ছিল। শুধু কি তাই, সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ইচ্ছা ছিল গান নিয়ে টিভিতে আসর বসাবেন। কিন্তু এর আগেই তাকে চীরদিনের জন্য চলে যেতে হয় এই দুনিয়ার মায়ে ছেড়ে।

টেলি সামাদ ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল দুপুরে অসুস্থতাজনিত কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। খাদ্যনালীতে সমস্যার পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বুকে ইনফেকশন, ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তার বাইপাস সার্জারি করা হয়। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরহুম টেলি সামাদের লাশ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন