জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছিলেন এই অভিনেত্রীর বাবা

  26-10-2019 04:12PM

পিএনএস ডেস্ক : বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির সুবাদে তিনি ছিলেন কাশ্মীরের ভেরিনাগে। সেখান থেকেই তাকে অপহরণ করে জঙ্গিরা। এর সাত দিন পর বাবা মেজর সিংহের মৃতদেহ ফিরিয়ে দিয়েছিল হিজবুল মুজাহিদিন। তাকে পণবন্দী করার বদলে কয়েকজন বন্দী জঙ্গির মুক্তি দাবি করেছিল জঙ্গি গোষ্ঠীটি। কিন্তু তাদের দাবি মেনে না নেওয়ার প্রত্যুত্তর ছিল বাবার নিথর দেহ।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজেই এসব তথ্য জানান বলিউড অভিনেত্রী নিমরত কউর। তিনি জানান, এখনো শৈশবে বাবাকে হারানোর সেই দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেড়ায় তাকে।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নিমরত কউরের বয়স তখন ১২ বছর। জানুয়ারির শীতে মা-বাবার সঙ্গে ছুটি কাটাতে কাশ্মীরে গিয়েছিল সে। তার সেনা আধিকারিক বাবা উপত্যকায় কর্মরত ছিলেন। সে সময় ছুটির মাঝপথে ফিরেছিল মেয়ে, বাবার কফিনবন্দী দেহ নিয়ে।

নিমরতের জন্ম রাজস্থানের পিলানিতে। ১৯৮২ সালের ১৩ মার্চ। তার বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার। বাবার চাকরির সূত্রে দেশের বহু শহরে কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। তবু তার প্রিয় শহর পাতিয়ালা। কারণ এই শহরেই শেষবারের মতো নিজেদের গৃহকোণে মা-বাবাকে একসঙ্গে পেয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তার বাবা মেজর ভূপিন্দর সিংহ-কে‌ বদলি করে দেওয়া হয় কাশ্মীরে। পরে সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে জঙ্গিরা।

এদিকে স্বামীর মৃত্যুর পরে দুই মেয়ে, নিমরত আর রুবিনাকে নিয়ে কিছুদিন নয়ডায় ছিলেন নিমরতের মা। তারপর তিনি নিজেদের নতুন ঠিকানায় চলে যান। সরকারি ভাতা, সঞ্চয়ের দৌলতে আর্থিক অনটন ছিল না। কিন্তু মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন নিমরত ও রুবিনা। তবে শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেন তাদের মা। দাদু-দিদিমাও ছিলেন অভিভাবকের মতো।

নিমরতের বাবা কোনদিন মেয়েদের সেনাকর্মীদের সন্তানদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ স্কুলে পড়াননি। তিনি চেয়েছিলেন কনভেন্ট বা পাবলিক স্কুলে পড়ুক মেয়েরা। যাতে সেনাপরিবারের নিরাপত্তার খোলস ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে সাধারণ জীবনের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে।

বাবার এই সিদ্ধান্ত পরবর্তী জীবনে খুব সাহায্য করেছিল বলে পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে জানান নিমরত। তিনি নয়ডায় দিল্লি পাবলিক স্কুলের পরে বাণিজ্যে সাম্মানিক স্নাতক হন শ্রী রাম কলেজ অব কমার্স থেকে।

ক্যারিয়ারের প্রথমেই নিমরত চলে যান মুম্বাই। প্রথমে মডেলিং, তারপর থিয়েটারে অভিনয়। এরপর সুযোগ পান মিউজিক অ্যালবামে। কুমার শানুর ‘তেরা মেরা প্যায়ার’ এবং শ্রেয়া ঘোষালের ‘ইয়ে ক্যায়া হুয়া’ গানের চিত্রায়ণে তাকে দেখা যায়। নজর কাড়েন চকোলেটের বিজ্ঞাপনেও।

বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ ২০০৫ সালে। ‘ইয়াহাঁ’ ছবিতে ছোট ভূমিকায় অভিনয়। পরের বছর ইংরেজি ছবি, ‘ওয়ান নাইট উইথ দ্য কিং’। বেছে বেছে ছবি করার ধারা নিমরত বজায় রেখেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই। ‘পেডলারস’, ‘লভ সব তে চিকেন খুরানা’, ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ এবং ‘এয়ারলিফ্ট’ তার ক্যারিয়ারের প্রতিটা ছবি ভিন্ন স্বাদের এবং ব্যতিক্রমী।

২০১২ সালে অনুরাগ কাশ্যপের প্রযোজনায় ‘পেডলারস’ এবং তার পরের বছর রীতেশ বাত্রার পরিচালনায় ‘দ্য লাঞ্চ বক্স’, দুটি ছবিতেই নিমরতের অভিনয় সমাদৃত হয়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ প্রশংসিত হয় দুটি ছবিই।

তার জীবনে প্রেম এসেছে কয়েকবার। প্রত্যেক বারই মন দিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রির বাইরে কাউকে। কিন্তু এখনো বাঁধা পড়েননি কোনো সম্পর্কেই। ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গেও নিমরতের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। এর জেরে ব্যাহত হয় রবি শাস্ত্রীর দাম্পত্যও। কিন্তু রবি এবং নিমরত দুজনেই অস্বীকার করেছেন সব রটনা।

জীবনে যেটুকু পেয়েছেন, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব নিমরত দিয়েছেন মাকে। তাদের দুই বোনকে মা শিখিয়েছেন সবসময় সামনের দিকে তাকাতে। নিমরতের বোন রুবিনা পেশায় একজন মনোবিদ।

জীবনের প্রতি মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ে নিমরতের। নিহত মেজর সিংহকে মরণোত্তর শৌর্য চক্রে সম্মানিত করা হয়েছে। এই সম্মান প্রাপ্তির পরে আবার কাশ্মীর গিয়েছিলেন নিমরত, জীবনে দ্বিতীয়বার। ভেরিনাগে গিয়ে নিঃশব্দে উপলব্ধি করছিলেন বাবার উপস্থিতি। কাশ্মীর থেকে ফিরে নিজের হাতের কব্জিতে ট্যাটু করান নিমরত। সেখানে লেখা ‘জেনাব’। অর্থ, বাবার অমূল্য রত্ন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন