ব্যর্থ প্রেম, ভাঙা দাম্পত্য, অতঃপর যেভাবে হারিয়ে গেলেন শাহরুখ খানের নায়িকা

  21-11-2019 03:14AM


পিএনএস ডেস্ক: আসল নাম ছিল ঋতু। কিন্তু পরিচালকের পছন্দ ‘ম’ দিয়ে নায়িকার নাম। ফলে পাল্টে গেল জন্মগত পরিচয়। নতুন নাম নিয়ে জীবনের প্রথম ছবিতে অভিনয় শাহরুখ খানের বিপরীতে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ব্লকবাস্টার। সাড়া জাগিয়ে শুরু করেও কিন্তু মিলিয়ে গিয়েছিলেন মাহিমা চৌধুরী।

১৯৭৩-এর ১৩ সেপ্টেম্বর মাহিমার জন্ম দার্জিলিংয়ে। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা কার্শিয়াং-এর ডাও হিল স্কুলে। তারপর দার্জিলিং-এর লোরেটো কলেজ। বিনোদনের দুনিয়ায় তার হাতেখড়ি বিজ্ঞাপনে অভিনয় দিয়ে। আমির খান এবং ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে তিনিও কাজ করেছিলেন পেপসির বিজ্ঞাপনে।

এরপর মিউজিক চ্যানেলে সঞ্চালিকা হিসেবে কাজ করছিলেন ঋতু। তখনই নজরে পড়েন পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের। তিনি তাকে সুযোগ দেন ‘পরদেশ’ ছবিতে। সুভাষের পছন্দ ছিল না ‘ঋতু’ নাম। তার কথাতে ঋতু নতুন নাম নেন ‘মাহিমা’। তারকা শাহরুখ খানের পাশে রোমান্টিক চিত্রনাট্যে সাবলীল অভিনয় তাকে এনে দেয় সেরা নবাগত নায়িকার পুরস্কার।

প্রথম ছবিতেই আকাশছোঁয়া সাফল্যে সুযোগ পেতে দেরি হয়নি মাহিমার। তিনি অভিনয় করেন ‘দাগ দ্য ফায়ার’, ‘প্যায়ার কোই খেল নেহি’, ‘দিল ক্যায়া করে’, ‘দিওয়ানে’, ‘কুরুক্ষেত্র’, ‘খিলাড়ি ৪২০’, ‘লজ্জা’, ‘ওম জয় জগদীশ’, ‘তেরে নাম’, ‘বাগবান’, ‘এলওসি কার্গিল’-এর মতো ছবিতে। অভিনয় প্রশংসিত হলেও কোনও বারই ফিরে আসেনি ‘পরদেশ’-এর মতো সাফল্য।

ক্যারিয়ার তুঙ্গে থাকতেই লিয়েন্ডার পেজের সঙ্গে জড়িয়ে যায় তার নাম। ২০০৪ সালে তাদের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু ২০০৬ সাল নাগাদ সে সম্পর্ক ভেঙে যায়। মাহিমার অভিযোগ ছিল, তাকে লুকিয়ে সঞ্জয় দত্তের প্রাক্তন স্ত্রী রিয়া পিল্লাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন লিয়েন্ডার, যা মহিমা মেনে নিতে পারেননি।

পরবর্তী সময়ে মাহিমা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, লিয়েন্ডার বড় টেনিস খেলোয়াড় হতে পারেন। কিন্তু তিনি কখনওই ভাল প্রেমিক নন। যদিও মাহিমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকারই করেন না লিয়েন্ডার। তার দাবি, মাহিমা এবং তিনি শুধুই ভাল বন্ধু ছিলেন। তার বেশি কিছু নয়।

প্রেমের পাশাপাশি মুখ থুবড়ে পড়েছিল মাহিমার ক্যারিয়ারও। ছবিতে সেভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যেই জীবনে আসে নতুন সম্পর্ক। ২০০৬ সালে মাহিমা বিয়ে করেন আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তথা ব্যবসায়ী ববি মুখোপাধ্যায়কে। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম আরিয়ানা। ২০১৩ সালে ভেঙে যায় তাদের বিয়ে।

মা হওয়ার পর মাহিমা আর সেভাবে ছবিতে অভিনয় করেননি বললেই চলে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সন্তান হওয়ার পর তিনি তাকেই সময় দিতে চেয়েছিলেন। তাই সুযোগ এলেও ফিরিয়ে দিয়েছেন ছবির অফার। কিন্তু তার অর্থের প্রয়োজন ছিল। তাই ছবিতে অভিনয়ের পরিবর্তে বেছে নিয়েছিলেন টেলিভিশন শো।

মাহিমা পরে জানিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত তার ক্যারিয়ারের ক্ষতি করেছে। কিন্তু তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। কারণ, ঘরে থেকে মেয়েকে বড় করার পর্ব তিনি উপভোগ করেছিলেন। ওই সময়টা তার জীবনের অন্যতম সেরা পর্ব।

মাহিমা জানিয়েছেন, তার মেয়ে আরিয়ানাও ছবি দেখতে খুব ভালবাসে। সে সালমান খানের ভক্ত।

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও মাহিমা কাগজে-কলমে ডিভোর্স করেননি। জানিয়েছেন, যদি কাউকে ভালবেসে আবার বিয়ে করার কথা ভাবেন, তবেই স্বামীর থেকে ডিভোর্স চাইবেন।

দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর ২০১৬ সালে মাহিমা ফিরে আসেন নায়িকা হয়ে। ২০১৬ সালে অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘ডার্ক চকোলেট’ ছবিতে তিনি ঈশানী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই চরিত্রটি তৈরি হয়েছিল শিনা বরা হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এবং তার মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আদলে।

তারপর আর সেভাবে কোনও ডাক পাননি মাহিমা। একদম পাননি কি? মাহিমা বলছেন, মধ্যমানের চরিত্রে অভিনয় করার থেকে কিছু না করে বসে থাকাটা তার কাছে অনেক বেশি কাম্য। সূত্র: আনন্দবাজার

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন