আতঙ্কে আরও ৩০০ চিকিৎসক

  28-12-2017 11:25PM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ‘সংযুক্ত’ ও দীর্ঘদিন যাবত একই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপালন করছেন এমন আরও প্রায় ৩শ’ চিকিৎসকের মাঝে বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের ১১০ জন চিকিৎসককে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজ, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ছিল তাদের যোগদানের শেষ সময়। আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করলে তারা আগামীকাল (২৮ ডিসেম্বর) থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন এবং কোনো বেতন ভাতাদি পাবেন না।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বদলির নির্দেশপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা মন্ত্রী, সচিব, রাজনৈতিক ও চিকিৎসক নেতাদের মাধ্যমে বদলি ঠেকাতে জোর তদবির করলেও বদলি বহাল রাখতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান গ্রহণের ফলে বদলি ঠেকাতে পারেননি।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত ও দীর্ঘদিন যাবত একই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপালন করছেন আরও প্রায় ৩শ’ চিকিৎসকের মাঝে বদলি আতঙ্ক শুরু হয়।

বিশেষ করে আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের গ্রামে থাকার ব্যাপারে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যে সকল চিকিৎসক গ্রামে পোস্টিং থাকলেও সেখানে যেতে চান না তারা যেন চাকরি ছেড়ে দেন। তাদের বদলে অন্য চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে গত কয়েক বছরে কমপক্ষে চারশ’ চিকিৎসক (জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) যাদের প্রকৃত কর্মস্থল জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে, তারা তদবিরের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে পরবর্তীতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ‘সংযুক্ত’ হিসেবে নিয়োগ নেয়।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ঢাকার বাইরে পদায়নকৃত চিকিৎসকদের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে দেখেছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকদের পদায়ন করা হলেও তারা কেউ কর্মস্থলে নেই। এর ফলে সে সব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরে কমপক্ষে ৪শ’ চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদফতরে ওএসডি ও সংযুক্ত হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজেও বিশেষায়িত হাসপাতালে কাজ করছেন। সেই তালিকা অনুসারে সম্প্রতি ৮৭ জন জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্টকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়।

বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩১টি। রাজধানীর সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা না থাকলেও ঢাকার বাইরের গুলোতে ভয়াবহ শিক্ষক সংকট চলছে। সম্প্রতি ২৩ জন অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপককে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে তারা সকলেই সর্বনিম্ন ৮ বছর ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর চিকিৎসা শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের বদলি করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাচিপের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তিনি কয়েকজন পরিচিত সিনিয়র শিক্ষকের বদলি ঠেকাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে তদবির করলেও তিনি তদবির রাখতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। একাধিকবার অনুরোধের এক পর্যায়ে তিনি বদলির নির্দেশ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ কিংবা তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করার পরামর্শ দেন বলে জানান ওই স্বাচিপ কর্মকর্তা।

এদিকে ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে বদলিকৃত মোট ১১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতজন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন তা জানা যায়নি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন