চিকেনেও মারাত্মক ঝুঁকি!

  05-02-2018 02:38AM

পিএনএস ডেস্ক: প্রতিদিনের খাবার তালিকা, বিয়ে, বনভোজনসহ নানা অনুষ্ঠান ও আয়োজনে চিকেন বা মুরগির উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু এই চিকেন কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, নাকি এতে রয়েছে কোনও ক্ষতিকর স্বাস্থ্য ঝুঁকি। সম্প্রতি চিকেন বা মুরগীর মাংস নিয়ে তৈরি একটি প্রতিবেদনে উঠে এল মারাত্মক কিছু ঝুঁকির তথ্য।

ভারতের The Bureau of Investigative Journalism এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে- 'কলিসটিন' নামের একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ব্যবহার হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে মুরগির খাবার হিসেবে।কারণ কলিসটিন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে মুরগি সুস্থ থাকে, ওজন বাড়ে তাড়াতাড়ি। তাই অল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় এমন পন্থা অবলম্বন করছে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে কলিসটিন একটি শক্তিশালি অ্যান্টিবায়োটিক। কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে তা যে কোন ড্রাগ প্রতিরোধের কাজ করে। অর্থাৎ কলিসটিন ওষুধ শরীরে গেলে আর কোন ওষুধই আপনার শরীরে কাজ করবে না। এই কলিসটিন ওষুধটাই ড্রাগ প্রতিরোধকের কাজ করবে।

ভারতের হায়দরাবাদের রঙ্গারেড্ডি জেলার বেশ কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে চিকেনদের কলিসটিন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। যে ওষুধ মরণাপন্ন রোগীদের শেষ আশা বলে খাওয়ানো হয়।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন জানিয়েছে কলিসটিন ওষুধ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। WHO এর পক্ষ থেকে এই কলিসটিন ওষুধ মানুষ ছাড়া কোন প্রাণীকে খাওয়ানোর ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। আর আইন ভেঙে সেই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ খাওয়ান হচ্ছে মুরগীকে।

চিকেনের মাধ্যমে এই ওষুধ মানুষের শরীরে গেলে শরীরের মধ্যে ড্রাগ প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হবে। তারপর, আর কোন অ্যান্টি-বায়োটিক ওষুধেই কোন কাজ হবে না। ফলে ওষুধ খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাই হারিয়ে যাবে মানুষের। ভয়ংকর এক বিপদের সামনে উপস্থিত মানুষ।

রিপোর্ট বলছে, আমেরিকা থেকে হাজার হাজার টন কলিসটিন ওষুধ ভিয়েতনাম, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াতে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালে কয়েক লক্ষ টন কলিসটিন ওষুধ এসেছে ভারতে। তার পুরোটাই ব্যবহার করা হচ্ছে পশু পাখীদের শরীরে। ভারতের বেশ কিছু কোম্পানী প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপণও করে কলিসটিন ওষুধের। যেটা অত্যন্তঃ বিপদজনক্

ভারতে কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও এই কলিসটিন ড্রাগ উৎপাদন করে। কিন্তু ভারত প্রায় ১৫০ টন এই ওষুধ বাইরের দেশ থেকে নিয়ে আসে বলেই রিপোর্টে দাবি করা হয়। ২০১৬ তে এই আমদানির পরিমাণ হাজার টন ছুঁয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ড্রাগ প্রতিরোধক ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রতিবছর বিশ্বে ৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে সেই মৃত্যুর হার গিয়ে পৌঁছাবে প্রায় ১ কোটিতে। যার মধ্যে এশিয়া মহাদেশেই প্রায় ৫০ লাখ মৃত্যু হবে প্রতিবছর।

রিপোর্টে বলছে, কলিসটিন অ্যান্টিবায়োটিক শুধু মুরগীর নয়, ছড়িয়ে পরছে পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করা মানুষের শরীরেও। চিকেন খাবারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ শরীরে।

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের মানুষ শরীরে প্রতিরোধক সৃষ্টি করা নিয়ে গবেষণা করা টিমোথি ওয়ালশ জানিয়েছেন, এই ওষুধ মরণাপন্ন রোগীদের শরীরে ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ কোনরকমেই মুরগীর বা অন্য কোন পশু-পাখির শরীরে ব্যবহার করা উচিত নয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন