পায়ের ব্যাপারে সতর্ক না হলে পঙ্গুত্ব

  28-02-2018 03:04PM

পিএনএস ডেস্ক : সোনারগাঁ নিবাসী ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়ার ১১ বছর ধরে ডায়াবেটিস। পাঁচ বছর আগে তাঁর ডান পায়ে হালকা ছড়ে গেলে সেখান থেকে পচন ধরে। অবহেলায় ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে সেই পা কাটতে হয়। পরে বাঁ পায়েও ছোট ঘা থেকে পচন ধরে। বাঁ পায়ের সব আঙুলও কেটে ফেলা হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবেটিক রোগীদের পা নিয়ে বেশ সতর্ক থাকতে হয়। পায়ে হালকা আঘাত, খোঁচা, কাঁটা ও ছড়ে গেলে ক্ষতস্থানে জীবাণু ঢোকে এবং অল্প সময়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সেখানে ঘা হয়, ফোসকা পড়ে। এগুলো সারতে সময় নেয়। পরিণামে পচন ধরে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এমনটা ঘটতে পারে।

বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি বললেন, ‘গায়ে লাগাই নাই বইলা আজ আমার এই দশা। ব্যবসা-পাত্তি কিচ্ছু করতে পারি না, হাঁটতে পারি না। হাত-পা জ্বালাপোড়া করে, শইল শুকায়ে গেছে। বল পাই না। আমার মতো অবহেলা যেন কেউ না করে।’

হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, বাচ্চু মিয়ার ‘সুগার’ নিয়ন্ত্রণে ছিল না। আবার পায়ের যত্নও তিনি নিতেন না। এ জন্য পায়ের শিরা ও স্নায়ুর কাঠামো বদলে গেছে, রক্ত সঞ্চালন কমে পা কালো হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও যত্নে এই জটিলতা এড়ানো যেত।

আজ ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। ১৯৫৬ সালের এই দিনে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইবরাহিমসহ কয়েকজন সমাজসেবক বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি গঠন করেন। সমিতি প্রতিবছর এ রোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই দিবস পালন করে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচতে পায়ের যত্ন নিন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।’

দেশের লাখ লাখ ডায়াবেটিক রোগীর আস্থার বড় ঠিকানা বারডেম হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনি, চোখ, হৃৎপিণ্ড ও পা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। প্রতিদিন ৩ হাজার রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়। আর সার্জারি বিভাগের ৩০ শতাংশ রোগী থাকে পায়ের নানা রকমের জটিলতা নিয়ে। এসব রোগীর বড় একটা অংশের পা কেটেও ফেলতে হয়।

ডায়াবেটিক রোগী কত?

সারা পৃথিবীতে সাড়ে ৪২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, তাদের নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ১৪ হাজার। আর সমিতির অধিভুক্ত ১০৫টি সমিতি, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় নিবন্ধিত ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ। তবে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) বলছে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগী আছে ৭১ লাখ। যে হারে প্রতিবছর ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে ২০৪৫ নাগাদ এটি হবে ১ কোটি ৪০ লাখ।

পায়ের যত্নে পরামর্শ

কারও ডায়াবেটিস হোক বা না হোক, প্রতিদিন অন্তত একবার পায়ের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান। তিনি বলেন, ঘুম থেকে উঠে যেমন মুখের যত্ন নেওয়া হয়, তেমনি প্রতিদিন অন্তত একবার পায়ের যত্ন নেওয়া উচিত। কুসুম গরম পানিতে সন্ধ্যায় পা ধুতে হবে। নখ ও নখের কোনা কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে। সুতি মোজা ব্যবহার করা, পায়ের মাপের চেয়ে সামান্য বড় আকারের জুতা পরা, উঁচু জুতা এড়িয়ে চলা—এসব সতর্কতা মানতে হবে।

পঙ্গুত্বে অর্থনৈতিক বোঝা

ফরিদপুর থেকে আসা কৃষক মাহবুবুর রহমান বারডেমে চিকিৎসাধীন। ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এই ব্যক্তি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেন না। এক মাস আগে বাঁ পায়ে ছোট্ট ক্ষত থেকে পচন ধরে তাঁর। পায়ের ক্ষত অবহেলা করায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তিটি এখন পরিবারের বোঝায় পরিণত হয়েছেন।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসে দেখা দিতে পারে নানা শারীরিক জটিলতা। তখন বাড়ে চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝা। গত বছর প্রকাশিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা বলছে, ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই বছরে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। গবেষণায় বলা হয়, বিগত তিন দশকে রোগটির ব্যাপকতা বেড়েছে। গ্রামের তুলনায় শহরের উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। একজন ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় হয় বছরে গড়ে ২৯৭ ডলার বা ২৩ হাজার ৭০০ টাকা।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন