সারাদেশে বন্ধ ডিএনএ ল্যাবের কার্যক্রম!

  04-03-2018 12:16AM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীসহ সারাদেশে ডিএনএ ল্যাবরেটরির কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রয়েছে। চাকরি জাতীয়করণ ও বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) স্থাপিত ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি (এনএফডিপিএল) ও ডিভিশনাল ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরির (ডিডিএসএল) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। চাকরি জাতীয়করণ ও বকেয়া বেতন আদায়ে পাঁচ কর্মকর্তা ও পাঁচ কর্মচারীসহ মোট দশ জনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনকালে ঢামেক কলেজের পশ্চিম পাশের ভবনের নিচ তলায় কালো ব্যানার টানিয়ে ডিএনএ ল্যাব কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের চোখে মুখে হতাশা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, গত দশ মাস যাবত বেতন ভাতা নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে নামতে বাধ্য হয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যাপারে বারবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন তার ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে স্থায়ীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে প্রকল্প পরিচালকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের জুন মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সভায় সুপারিশ অনুযায়ী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম' শীর্ষক প্রকল্পের ১ম পর্বে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২০০৬ সালের ২৩ শে জানুয়ারি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এনএফডিপিএল কার্যক্রম শুরু হয়। ল্যাবরেটরিটির অধীনে বিচার ব্যবস্থা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলায় ধর্ষণকারী শনাক্তকরণ, পিতৃত্ব, মাতৃত্ব, ভ্রাতৃত্ব, অভিবাসন, অজ্ঞাত ব্যক্তি, কিডনি দাতা-গ্রহীতার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়সহ (যেমন ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৭ জন সেনা কর্মকর্তার, ২০১২ সালের ২৪শে নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশন ট্রাজেডিতে নিহত ৫৭ জন শ্রমিকের, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত ৩২২ জন শ্রমিকের পরিচয় শনাক্তকরণ ইত্যাদি) জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রকল্পের ৪র্থ পর্ব চলমান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মোট ৪ হাজার ৬৯১টি মামলার বিপরীতে প্রায় ১৪ হাজার ৯৯৪টি নমুনার ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব খাতে এই ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার ফি বাবদ প্রায় ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৩য় পর্ব সমাপ্ত (জুন-২০১৬) হয় এবং সৃজিত পদে তাদের স্থানান্তর না করে প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে প্রকল্পের ৪র্থ পর্বে (জুলাই-২০১৬) দায়িত্ব পালন করতে বলেন। জানুয়ারি-২০১৭ থেকে বেতন/ভাতা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতিতে যান তারা।

কর্মবিরতি পালনকালে ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এনএফডিপিএল পরিদর্শন করেন এবং বকেয়াসমেত রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাস দেন। এ অবস্থায় প্রায় এক বছর কেটে গেলেও বকেয়া বেতনসহ (জানুয়ারি-অক্টোবর/২০১৭) রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়ে কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

উল্লেখ্য, প্রকল্প পরিচালক ও প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য জিওবি উন্নয়ন অংশে কর্মরতদের বেতন দেয়া হবে না। অথচ প্রকল্পের ডানিডা অংশের কর্মচারীরা তাদের বকেয়া বেতন পান। ১২ বছরেরও বেশি সময় কর্মরত থেকেও চাকরি রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর ও বকেয়া বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এনএফডিপিএল এবং ডিডিএসএলের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলসমূহকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর ও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতিতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন বলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মন্তব্য করেন।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন