দৃষ্টিহীন নারীর হাতে স্তন ক্যন্সার ধরা পড়ছে ডাক্তারের চেয়েও দ্রুত

  06-05-2019 04:06PM

পিএনএস ডেস্ক : ফ্রান্সিয়া পাপামিজা তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন শৈশবেই। চোখের রেটিনার বিচ্যুতির কারণে এমনটি ঘটে। ৩৬ বছর বয়সী এই নারীর চোখে আজ সবই অন্ধকার। তবে একটি জিনিস তাঁর কাছে একেবারেই স্বচ্ছ।

পাপামিজা জানেন, কীভাবে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করতে হয়। কেবল হাতের আঙুলের স্পর্শেই নির্ভুল রোগনির্ণয় করতে পারেন তিনি। এ কাজে দক্ষতায় চিকিৎসকরাও হার মানেন তাঁর কাছে। কলম্বিয়ার কালি শহরে অবস্থিত একটি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করছেন এই অন্ধ নারী। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক শনাক্তকরণে।

কেবল স্পর্শের অনুভূতি দিয়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করেন পাপমিজা। এ কাজে একজন দক্ষ মেডিক্যাল এক্সামিনার (এমটিই) তিনি। কেবল পাপামিজা নন, তাঁর মতো রয়েছেন আরো দুই দৃষ্টিহীন নারী। দেশটির একমাত্র এমটিই তাঁরাই।

ডা. ফ্রাঙ্ক হফম্যান একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন, অন্ধ নারী তাঁর হাতের স্পর্শে নির্ণয় করতে পারেন স্তন ক্যান্সার। ফ্রাঙ্ক হফম্যানের মতে, অন্ধ নারীরা চিকিৎসকদের তুলনায় টিস্যু পরিবর্তনের বিষয় শনাক্ত করতে সক্ষম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।

কালি শহরে অবস্থিত লা রিভারার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বরাদ্দ পাপামিজার নিজের কক্ষ। সেখানে প্রতিদিন ১০ জন নারীকে দেখেন তিনি। বিশ্বাস করেন, একজন দৃষ্টিহীন নারী হিসেবে তার জন্য রোগীদের সঙ্গে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা সহজ। কেননা, নারীরা সংবেদনশীল বিষয়গুলো সবার সামনে খোলাখুলি বলতে স্বস্তিবোধ করেন না।

ক্যান্সার নির্ণয়ে একজন নারীর স্তন পরীক্ষায় পাপামিজা সময় নেন ৪৫ মিনিট। পরীক্ষায় রোগীর বগল এবং ঘাড়ও বাদ যায় না। এ কাজে তিনি ব্রেইলে চিহ্নিত পাঁচটি আঠালো রেখাচিত্র ব্যবহার করেন। আঙুলের ডগায় কোনো পিণ্ডের উপস্থিতি টের পেলেই তা চিকিৎসককে জানান।

পাপামিজাসহ তিন দৃষ্টিহীন নারী গত দুই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। লা রিভারার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও শহরটির অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও এমটিই হিসেবে কাজ করছেন তাঁরা। একজন পেশাদার এমটিই হতে তাঁরা পেয়েছেন ৯ মাসের প্রশিক্ষণ। ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ল্যাটিন আমেরিকা তাঁদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি মেক্সিকোতেও গ্রহণ করা হয়েছে অনুরূপ প্রকল্প।

প্রকল্পটির সমন্বয়কারী সার্জন ডা. লুইস আলবার্তো ওলভ বলেন, 'তাঁদের (এমটিই) আঙ্গুলগুলো হচ্ছে বিশেষ উপহার। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তাঁদের এই অক্ষমতা (দৃষ্টিহীনতা) পরিণত হতে পারে প্রতিভা আর শক্তিতে। এই প্রতিভা ও শক্তি ব্যবহৃত হতে পারে অন্য মানুষের সেবায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর দুই মিলিয়ন নারী স্তন ক্যান্সারের শিকার হন। ২০১৮ সালে এই রোগে মারা যান ছয় লাখ ২৭ হাজার নারী।

আর কলম্বিয়ায় প্রতিবছর এই রোগ ধরা পড়ছে আট হাজারেরও বেশি নারীর স্তনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগে মৃত্যুহার ক্রমাগত বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো অনেক ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে অনেক দেরিতে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন