সারা দেশে খাবার স্যালাইনের সঙ্কট

  09-05-2019 08:55AM


পিএনএস ডেস্ক: সারা দেশেই খাবার স্যালাইনের সঙ্কট চলছে। গরমে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হওয়ায় সেই অনুপাতে খাবার স্যালাইনের জোগান দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে রোজা শুরুর পর থেকেই এই সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহের কারণেও খাবার স্যালাইনের এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গ্রামে কিংবা শহরে অনেক এলাকাতেই এখন খাবার স্যালাইনের এ সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন ওষুধের বাজার ঘুরে দেখা গেছে সব দোকানেই কমবেশি খাবার স্যালাইনের সঙ্কট রয়েছে। পাইকারি দোকানেও চাহিদার অনুপাতে কম হারেই বিক্রি হচ্ছে খাবার স্যালাইন। চাহিদার অনুপাতে খুচরা দোকানিদেরও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে না অনেক পাইকারি দোকান।

সরেজমিন কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি এবং খুচরা দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির খাবার স্যালাইন থাকলেও বেশি চাহিদা এসএমসির (সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি) ‘ওরস্যালাইন এন’-এর। এসএমসির ব্যবস্থাপনায় ‘ওরস্যালাইন এন’- এর ব্র্যান্ডিং এবং বাজারজাতকরণ হলেও (শর্তমোতাবেক) এটির উৎপাদন করে রেনেটা বাংলাদেশ লিমিটেড। খুচরাপর্যায়ের শতকরা ৯০ ভাগ ক্রেতাই ‘ওরস্যালাইন এন’ ক্রয় করেন। তাই এ স্যালাইনটির সঙ্কটই বাজারে বেশি।

নগরীর উত্তরা, মিরপুর, ফার্মগেট ও মগবাজার এলাকার কয়েকজন ক্রেতা জানান, গরমে ইফতারির আইটেমের সাথে অনেকে খাবার স্যালাইন রাখেন। এ ছাড়া অনেকে ডায়রিয়া কিংবা পানিশূন্যতার কারণেও খাবার স্যালাইন নিয়মিত পান করেন। কিন্তু এসএমসির ‘ওরস্যালাইন এন’ প্রায় সময়েই দোকানে পাওয়া যায় না। দোকানিরাও কৌশলে অন্য কোম্পানির খাবার স্যালাইন এ সুযোগে বিক্রি করছেন। ক্রেতা সচেতন না হলে তারা বিষয়টি বুঝতেই পারছেন না।

‘ওরস্যালাইন এন’-এর ঢাকা উত্তরাঞ্চলের (সাভার-আশুলিয়া) মার্কেট প্রমোশন অফিসার (এমপিও) ফখরুল ইসলাম জানান, গত ৭-৮ দিন ধরেই খাবার স্যালাইনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আমরা যে অনুপাতে চাহিদাপত্র সাবমিট কমি সে অনুপাতে খাবার স্যালাইন পাই না। ফলে পাইকারি কিংবা খুচরা পর্যায়ের দোকানেও চাহিদামতো খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছি না। তিনি আরো জানান, রোজা এবং তীব্র তাপদাহ শুরু হওয়ার পর সব ধরনের খাবার স্যালাইনেরই চাহিদা বেড়েছে। ফলে এক সপ্তাহ ধরেই তৈরি হয়েছে এই সঙ্কট।

সাভারের জামগড়ায় পাইকারি ওষুধের দোকান আনিকা ফার্মেসির ম্যানেজার মন্টু মিয়া বলেন, আমরা গত ১০ দিন ধরেই চাহিদা মতো ‘ওরস্যালাইন এন’ পাচ্ছি না। ফলে আমরা খুচরা দোকানিদের চাহিদাও মেটাতে পারছি না। বাজারে সব ধরনের খাবার স্যালাইনের সঙ্কট রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এসএমসির প্রধান পণ্য ‘ওরস্যালাইন-এন’ এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেনেটা বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে। গতকাল দুপুরে মিরপুরে রেনেটার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে ওরস্যালাইন এন-এর উৎপাদন এবং এর চাহিদা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান সেলস্ অফিসার শামসুজ্জোহার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

শামসুজ্জোহা জানান, রেনেটা ‘ওরস্যালাইন এন’ এর বিক্রয় কিংবা বিপণনের সাথে জড়িত নয়। রেনেটা শুধু শর্তমোতাবেক এসএমসির চাহিদা অনুপাতে ‘ওরস্যালাইন এন’ উৎপাদন করে থাকে। তবে রেনেটার নিজস্ব খাবার স্যালাইন আছে সেটি হচ্ছে ‘ওরস্যালাইন আর’। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে যে রেকর্ড আছে তাতে দেখা যায় গরমের কারণেই খাবার স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। আর এ কারণেই হয়তো বাজারে কিছুটা সঙ্কট তৈরি হতে পারে।

রেনেটা কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা মিলন মাহমুদ জানান, রেনেটার যে খাবার স্যালাইনটি আছে সেটি মূলত বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন পোশাক কারখানায় এবং করপোরেট কোম্পানিগুলোতে। তবে খুচরা কিংবা পাইকারি দোকানেও আমরা অর্ডার সরবরাহ করি। তাই রেনেটার খাবার স্যালাইনের সঙ্কট এ মুহূর্তে তেমনটি অনুভূত হচ্ছে না।

বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির খাবার স্যালাইনের মধ্যে রয়েছে ওরস্যালাইন ফ্রুটি (এসএমসি), নিওস্যালাইন (এসকেএফ), রাইস স্যালাইন (জেনারেল/ স্কয়ার), টেস্টি স্যালাইন (একমি/ ইউনিভার্সাল) এনার্জি স্যালাইন (এসকেএফ)। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নানা ফ্ল্যাভারের ওরস্যালাইন বাজারে থাকলেও এসএমসির ওরস্যালাইন এন এখনো বাজারে বেশি প্রচলিত। কিন্তু এ স্যালাইনটির সঙ্কটই বাজারে বেশি।

বাজারে ওরস্যালাইনের এ সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হবে তা জানতে এসএমসির মহাখালীর অফিসে যোগাযোগ করা হলে উৎপাদন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু ‘ওরস্যালাইন এন’ আমরা নিজেরা উৎপাদন করি না, তাই ইচ্ছা করলেই রাতারাতি এর উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না। তবে আশা করা যায় গরমের তীব্রতা কমে গেলে চাহিদাও কমে যাবে। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন