ডিমেনশিয়া ও আলঝাইমারস প্রতিরোধ সম্ভব?

  18-12-2019 04:22PM

পিএনএস ডেস্ক : বৃদ্ধ বয়সে অনেকের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয় হতে পারে মানসমন্দন, ডিমেনশিয়া ও আলঝাইমারস রোগ। প্রিয়জনদের কেউ এতে আক্রান্ত হলে ভীতির কারণ হতেই পারে। তবে গবেষকরা বলছেন- জীবন-যাপনে পরিবর্তন এনে এই রোগগুলোকে কিছুটা প্রতিরোধ সম্ভব। জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়গুলো :

১। মস্তিষ্ক হিতকর জীবন-যাপন :
নিয়মিত ব্যায়াম : আলঝাইমার রিসার্চ অ্যান্ড প্রিভেনশন ফাউন্ডেশনের মতে নিয়মিত ব্যায়াম এই রোগের আশঙ্কা কমাতে পারে ৫০ শতাংশ। যাদের ইতোমধ্যে বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষয় শুরু হয়েছে এর গতিও শ্লথ করতে পারে। মগজের পুরনো স্নায়ুজাল রক্ষা করে আর নতুন স্নায়ু জাল বিকাশ সহায়তা করে এসব রোগ থেকে সুরক্ষা করে। সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম ভাল। কারডিও আর স্ত্রেংথ ট্রেনিং ব্যায়াম দুটো করলে আরও বেশি ভাল।

পেশী নির্মাণ ও সবল ব্যায়ামে মগজ থাকবে তরুণ :
মাঝারি ওজন আর রেজিস টেন্স ট্রেনিং পেশী গঠন করে মগজকেও ভালো রাখে। ভার উত্তোলন, পানির দুটো বোতল হাতে নিয়ে উপর নিচ করুন। এতে ব্যলেন্স আর কোঅরডিনেশন ব্যায়াম করা যায়।
এছাড়া বুড়ো বয়সে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগা গুরুতর। তাই সাইকেল চালালে মাথায় হেলমেট পরা ভাল। আবার ইয়গা, টাইচি, ব্যলেন্স বল দিয়ে ব্যায়াম করা ভালো। প্রথমে আলসেমি লাগতে পারে ব্যায়ামে, তাই প্রথম ১০ মিনিট করে হাঁটা শুরু করলে পরে শরীর চর্চায় উৎসাহ এসে যাবে।

২। সামাজিক কাজে নিয়োজিত হওয়া :
মানুষ প্রচণ্ডভাবে সামাজিক জীব। কেননা আমরা একাকি বেড়ে উঠি না। আমাদের মগজও না। সেক্ষেত্রে সমাজের কাজে নিয়োজিত থাকলে বৃদ্ধ বয়সে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই হতে পারেন স্বেচ্ছাসেবী, যোগ দিতে পারেন ক্লাবে, সামাজিক গ্রুপে। এমনকি স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার বা সিনিয়ার সেন্টারে যেতে পারেন, কাজ করতে পারেন প্রবীণ হিতৈষী সংঘে, প্রতিবেশী, পাড়া পড়শিদের গৃহে যান, আড্ডা দিন। মিল মোলাকাত করুন, পার্কে, জাদুঘরে যান মাঝে মাঝে, নাটক, সিনেমা দেখুন।

৩। স্বাস্থ্যকর খাবার :
আলঝাইমার রোগে প্রদাহ আর ইন্সুলিন রেজিসটেন্স নিউরন আহত করে আর স্নায়ু কোষদের মধ্যে সংযোগ ব্যাহত করে। ফলে খাওয়ার অভ্যাস বদলাতে হবে। চিনি খেতে হলেও খুব অল্প খেতে হবে।

ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলের খাবার খাওয়া:
প্রচুর ফল, সবজি , বিনস, মাছ, বাদাম, জলপাই তেল, হোল গ্রেন, প্রচুর ওমেগা ৩ চর্বির মধ্যে ডি এইচ এ বেশ সুরক্ষা উপাদান রয়েছে। পাবেন শীতল পানির মাছে, তা না হলে ফিস লিভার অয়েল।

প্রচুর ফল-সবজি খাওয়া :
বাহারি রঙের ফল, পাওয়া যাবে অনেক ভিটামিন আর এনটি অক্সিজেন। আর সবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, বিনস, সবুজ পাতাবহুল সবজি ঘরে রান্না করে খাওয়া ভালো।

৪। মানসিক উদ্দীপনা :
নতুন নতুন জিনিষ যারা সারাজীবন শেখে ও মস্তিষ্ককে এভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তাদের এ রোগ হয় কম। নতুন কিছু শিখুন, বিদেশি ভাষা, যন্ত্র বাজানো, আঁকতে বা সেলাই করতে শেখা। ধরুন পিয়ানো বাজাতে জানেন, নতুন গানের নতুন সুর তুলুন।

মনে রাখার কায়দা জেনে নিন :
যেমন- ডেকা একটা খাইল মাইরা- অর্থাৎ ডেকা মিটার, হেকটো মিটার, কিলোমিটার, মিলিমিটার। উপভোগ করুন কৌশল খেলা। শব্দ-জব্দ, এমনি পাজল, রিডল, স্ক্রেবল, সুদুক।

যে পথে কম গেছেন সেই পথে যান :
একি গন্তব্যে বার বার না গিয়ে যান নতুন পথে, খাবার খান বাম হাতে (যে হাত দিয়ে সাধারণত খান না)

৫। চাই সুনিদ্রা:
চাই নিয়মিত ঘুমের সূচি। একই সময় উঠা, একই সময় ঘুমানো। স্বাভাবিক দৈনন্দিন ছন্দ চলে অব্যাহত। নিয়মিত সব কিছুতে সাড়া দেয় মগজ। আবহ তৈরি করুন। শয্যা হোক কেবল ঘুমের জন্য আর জীবন সঙ্গীর সঙ্গে বিশ্রামালাপের জন্য। ঘরে থাকবে না টেলিভিশন, ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস। শয্যাপূর্ব রিচুয়াল উষ্ণধারা জলে গোসল, হালকা শব্দে রবীন্দ্র সঙ্গীত।

৬। স্ট্রেস মোকাবেলা :
ব্রিদিং ব্যায়াম, প্রাণায়ম, শিথিলায়ন প্রক্রিয়া, ধ্যান চর্চা, ইয়গা, ভেতরের শান্তি লালন করুন, ধ্যান আর ঈশ্বর প্রার্থনা (যার যার ধর্ম মতে), হেসে কৌতূক রস জিইয়ে রাখুন।

আরও যা করবেন :
রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরলের দিকে নজর রাখা, ধুমপান বর্জন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন