সীমারের অনুসারীরা ফিলিস্তিনে বেপরোয়া, আগুনে ঘি ঢালছে আমেরিকা

  15-05-2018 04:53PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ফিলিস্তিনীদের রক্তে পবিত্র ভূমি লালে লাল হয়ে গেছে। বর্বরতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে জবরদখলকারী ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল থেকে তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে আনার প্রতিবাদে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ করে। আর এ বিক্ষোভে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে মানবতার শত্রু হিসেবে পরিচিত ইসরায়েল।

আমেরিকায় উন্মাদ টাম্প ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের দূতাবাস গাজায় স্থাপনের নামে মুসলিম হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে যে উঠেপড়ে লেগেছে, ১৪ মে ৫৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা এর প্রমাণ। ওরা জানত, এখানে দূতাবাস এলে প্রতিবাদ হবে আর এর বদলা কীভাবে নিতে হয়, সে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিরস্ত্র প্রতিবাদী ফিলিস্তিনিদের হতাহত করে।

মানবতার শত্রু হিসেবে অনেক আগেই পরিচিতি পাওয়া বর্বর ইসরায়েলের এই হামলায় অনেক নারী-শিশুও নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক। নৃশংস এই টাণ্ডবলীলার পর জাতিসংঘে ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসূর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আর জাতিসংঘ বৈঠক না ঠেকে নিন্দা জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার জেইদ বিন রাদ জেইদ আল হুসেইন বলেছেন, যারা এই জঘন্য মানবাধিকার লংঘনের জন্য দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহী করতে হবে।

গাজা সীমান্তে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের কঠোর নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেছেন, আমরা আজকের দিনটিতে ১৪ মে মুসলিম বিশ্বের জেরুজালেম হারানোর অনুমতি দেব না। লন্ডনে তুর্কি ছাত্রদের এক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে এরদোগান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল একটি প্রতিহিংসাপরায়ণ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ইসরাইল আজ যা করেছে, তা একটি গণহত্যাণ্ড। আমি এই মানবিক নাটক, গণহত্যাণ্ড ইসরাইল বা আমেরিকার যে পক্ষ থেকেই আসুক না কেন, এর নিন্দা করি।’

অন্যদিকে তুরস্ক এই ঘটনাকে হত্যাযজ্ঞ বলে বর্ণনা করেছে। গাজার গণহত্যাকে মানবিক ট্র্যাজেডি উল্লেখ করে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনিদের একজন ডিফেন্ডার হিসেবে নিজের অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে, ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং তার দূতাবাস শহরটিতে সরিয়ে নেয়ার কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। তিনি মার্কিন এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন। এদিকে গাজা সীমান্তে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে আঙ্কারা। আর ৫৮ ফিলিস্তিনি হত্যার নিন্দা জানিয়ে দেশটি তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। তুর্কি উপ-প্রধানমন্ত্রী বেকির বোজদাগ এসব তথ্য জানান।

আজকের বিশ্ব মোড়লরা মুসলিম হত্যা এবং মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় লিপ্ত বললে কমই বলা হবে। আজ ফিলিস্দিনে যে বর্বর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে, কোনো ইহুদি-খিস্টানের উপর যদি এমনটা কোনো দেশ সংঘটিত করত, পরিস্থিতি কী ভয়াবহ হতো; তা ভাবলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। চোরের মায়ের বড় গলার মতো অবস্থা ওদের। মূলত মুসলমানদের তারা মানুষই মনে করে না। তাদের মতে হয়তো মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই। মুসলমানদের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব যে আচরণ করছে, এর চেয়ে অনেক ভালো আচরণ তারা পশুর সঙ্গে করে। পশুদের অধিকার নিয়ে তাদের ভাবনা এর চেয়ে অনেক বেশি। যে কারণে মুসলমানদের সঙ্গে করা আচরণকে অনেকে হায়নার সঙ্গে তুলনা করে।

বিবেকহীন বিশ্ব মোড়লদের বৈরী আচরণে ফিলিস্তিনী মুসলমানরা নিজ ভূমিতে পরবাসী। আর সেখানে ছড়ি ঘুরাচ্ছে জবরদখলকারীরা। অর্থ-অস্ত্র আর পেশিশক্তি বলে তারা সেখানের নিরীহ-নিরস্ত্র মুসলমান নারী-শিশুদের রক্ত ও জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত তামাশায় লিপ্ত। মুসলমানদের মৌলিক অধিকার সেখানে পদে পদে লংঘিত হচ্ছে। মুসলমানদের রক্ত, চোখের পানি আর জীবনহানি অহরহ ঘটছে। স্বজন হারানোদের ক্ষোভের বশে একটি ক্ষুদ্র পাথর নিক্ষেপের বিনিময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ট্যাঙ্ক ও জঙ্গি বিমানের সাঁড়াশি আক্রমণ এখন আর কাউকে অবাক করে না। স্বজন হারাদের হাহাকার আর আর্তনাদে ফিলিস্তিনের বাতাস ভারী হলেও সীমারের অনুসারী ইসরায়েল ও আমেরিকানদের হৃদয় এতটুকু গলে না। বরং তারা মুসলমানদের রক্তে ক্ষুতপিপাসা মিটাতে যেন মরিয়া।

লেখক : বার্তা সম্পাদক- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন