তুরস্কে সাধারণ নির্বাচন আজ

  24-06-2018 07:28AM


পিএনএস ডেস্ক: তুরস্কে সাধারণ নির্বাচন আজ। মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে ভোটাররা আজ আলাদা ব্যালট পেপারে একই সাথে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট সদস্যদের নির্বাচিত করবেন। এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটার পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। ভোটগ্রহণ স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটাররা তাদের আইডি কার্ড অথবা যেকোনো শনাক্তকরণ নথি দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রথমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা করা হবে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।

নির্বাচনে মোট আটটি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছয়জন। তারা হচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও একে পার্টির প্রার্থী রজব তাইয়্যেব এরদোগান, সিএইপপির মুহাররেম ইনজে, ইয়ি পার্টির মেরাল আকসেনার, কুর্দিদের সমর্থিত এইচডিপির সালাদিন দেমিরতাশ, ভাতান পার্টির ডোগু পেরিনজেক এবং সাদাত পার্টির তেমেল কারামুল্লাউলু। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং মুহাররেম ইনজের মধ্যে।

তুরস্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম জোটগতভাবে অংশ নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এরদোগানের একেপির নেতৃত্বাধীন জোট পিপলস অ্যালায়েন্সে রয়েছে একে পার্টি, জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি এবং ইসলামি জাতীয়তাবাদী দল বুয়ুক বির্লিক পার্টি। অন্যদিকে সিএইচপির নেতৃত্বে গঠিত জোট নেশন অ্যালায়েন্সে রয়েছে সিএইচপি, ইয়ি পার্টি, ইসলামপন্থী দল সাদাত পার্টি এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের এগিয়ে থাকার আভাস মিলেছে। তবে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশ না পেলে আগামী ৮ জুলাই শীর্ষস্থান দখল করা দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে। তবে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে তার দল ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (একেপি)। পার্লামেন্টে আসন পেতে হলে কোনো দলকে সারা দেশে প্রদত্ত ভোটের ১০ শতাংশ পেতে হবে। তবে দলগুলো যেহেতু জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সে কারণে জোটগুলোকেই এখন ১০ শতাংশ ভোটের টার্গেট পেরুতে হবে।

১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন এরদোগান। তুরস্কে প্রেসিডেন্ট শাসিত শাসন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে গত বছরের ১৬ এপ্রিল সাংবিধানিক পরিবর্তন আনতে গণভোটের আয়োজন করেন তিনি। সেই গণভোটেই দেশে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি অনুমোদন লাভ করে। সাংবিধানিক এই পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হওয়া নামমাত্র ক্ষমতার মালিক প্রেসিডেন্ট জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হবেন। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৯ সালের নভেম্বরে হওয়ার কথা থাকলেও এরদোগান নির্ধারিত সময়ের বছরখানেক আগেই নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচন আজ হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন ভোটারদের কাছেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তুরস্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দিচ্ছেন তারা। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্কে একটি স্থায়ী শাসন কাঠামোর ভিত রচিত হবে।

আজকের নির্বাচনে নতুন ভোটাররা জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন। কারণ এক কোটিরও বেশি তরুণ ভোটার হয়েছেন এবং তাদের মন জয় করতে দুই জোটই সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। এরদোগানের দল নির্বাচনী ইশতিহারে তুরস্ককে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানিকারক দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার করেছে একেপি। দলটি নির্বাচনী প্রচারণায় শক্তিশালী পার্লামেন্ট, সরকার ও দেশ গঠন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তুরস্কের অংশীদারিত্ব আরো বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন এরদোগান। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি কর্মসংস্থান, শিক্ষা-কৃষি ও ব্যাংক খাতের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভোটারদের। তুরস্কে গত ১১ বছরের মধ্যে পাঁচটি সাধারণ নির্বাচন ও কয়েকটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য দেশটির ভোটাররা বলতে গেলে নির্বাচনের মধ্যেই রয়েছেন।
কুর্দি ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর জনমত জরিপ বলছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগান এগিয়ে থাকলেও পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার দল একেপিকে শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাবে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি। ৬০০ আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে একেপিকে ৩০০টির বেশি আসন পেতে হবে। অবশ্য এরদোয়ান ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ আসন না পেলে তার দল অন্যদের সাথে নিয়ে জোট সরকার গঠন করবে।

আজকের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে কুর্দিদের ভোট। এর আগের নির্বাচনগুলোয় কুর্দিদের ভোট পেত এরদোগানের একেপি এবং কুর্দিপন্থী বাম দল এইচডিপি। বিশেষ করে গত দু’টি নির্বাচনে এ চিত্র দেখা গেছে।

২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এইচডিপিকে কুর্দি গণ্ডির বাইরে মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসেন বর্তমানে দলটির কারাবন্দী সাবেক নেতা সালাউদ্দিন ডেমিরতাস। এবার প্রেসিডেন্ট পদে তিনিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তুরস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দি সংগঠন পিকেকের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে ২০১৬ সালের নভেম্বরে তাকেসহ এইচডিপির কয়েক নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ডেমিরতাসের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মারা না যাওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারেই থাকতে হতে পারে। তবে সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

এইচডিপির প্রতি কুর্দিদের সহানুভূতি তৈরি হলে তাতে বিপাকে পড়বে এরদোগানের একেপি। কেননা, দলটির ভোট বেড়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে একেপির ভোট কমে যাওয়া। জনমত জরিপগুলো বলছে, আজকের নির্বাচনে এইচডিপি যদি ১০ শতাংশের বেশি ভোট পায় তাহলে একে পার্টির পক্ষে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হবে না।

কুর্দিসমর্থিত বামপন্থী এইচডিপির এমপি মিথা সানচার বলেছেন, বিরোধীদের শক্তিশালী অবস্থান দেখে আমরা আনন্দিত। দ্বিতীয় পর্বে যেতে না পারলে আমরা তখন ইনজেকেই সমর্থন দেবো। আর দলটির নেতা ডেমিরতাস বলেছেন, নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ালে এরদোগানের বিরুদ্ধে থাকা যেকোনো প্রার্থীকেই সমর্থন দেবে তার দল এইচডিপি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন