কিশোররাদের মুখে গুহাজীবনের সংগ্রামের কথা

  19-07-2018 02:55AM

পিএনএস ডেস্ক: থাইল্যান্ডের অন্ধকার গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া ১২ কিশোর ও তাদের কোচ ১৮ দিনের গুহাজীবনে তাদের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছে সাংবাদিকদের কাছে।

আজ বুধবার চিয়াং রাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ওই ১২ শিশু ও তাদের কোচ। বাড়িতে যাওয়ার আগে তাদের প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়।
চিয়াং রাই হাসপাতালের একটি কক্ষকে ফুটবলের সবুজ মাঠের আদলে সাজানো হয়। কিশোর ফুটবলারদের গায়ে ছিল ওয়াইল্ড বোরসের জার্সি। সেখানে জড়ো হয়েছেন দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা। তাদের চিকিৎসক, স্বজন ও বন্ধুরা এবং গুহা থেকে তাদের উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া নেভি সিলের সদস্যরাও সেখানে ছিলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তাদের বক্তব্যে উঠে আসে গুহার ভেতর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা।
আটকে পড়ার নয় দিন পর ২ জুলাই তাদের যখন সন্ধান পান উদ্ধারকারীরা, সেই সময়টাকে ম্যাজিকের সঙ্গে তুলনা করে আদুল সাম-অন নামের একজন খুদে ফুটবলার। তার ভাষায়, ‘মুহূর্তটা ছিল ম্যাজিকের মতো। পথ বানাতে পাথর ঘষছিলাম আমরা। এর মধ্যে কারও যেন কণ্ঠ শুনতে পেলাম! আমি তাদের দেখে ‘হ্যালো’ বলি।’

গুহায় আটকে পড়ার ভাগ্যের ওপর সমর্পণ করে দেয়নি কিশোরের দল। তারা সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য গুহার পাথর খুঁড়ে পথ বের করার চেষ্টা করেছে। এ সময় তারা বৃষ্টির পানি পান করে বেঁচেছিল। তবে তারা হতোদ্যম হয়নি। এক কিশোর ফুটবলার যেমন বলল, ‘সবাইকে বলি, লড়াই করো, হাল ছেড়ো না।’

তাদের সন্ধান পাওয়ার আগের নয় দিন অন্ধকার গুহায় বেঁচে থাকার বর্ণনা দিতে গিয়ে এক কিশোর বলে, ‘আমরা শুধু বৃষ্টির পানি পান করতাম। পানিটা স্বচ্ছ ছিল। আর কোনো খাবার ছিল না।’

কোনো খাবার না পেয়ে সবচেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল টিটান নামের খুদে ফুটবলারটি, তারপরও খাবারের কথা ভাবেনি সে। ‘কারণ খাবারের কথা ভাবলে আমার আরও বেশি ক্ষুধা লাগছিল।’

কিশোর ফুটবল দলটির সহকারী কোচ এক্কাপল চানতাওয়াং (২৫) বলেন, ‘সব কিশোর খুব কষ্টে ছিল। তারা ভাবছিল, তাদের কারণেই তাদের মরতে হচ্ছে। তাদের কারণে পরিবার বিপদে পড়েছে।’

তবে ‘কর্তৃপক্ষ তাদের পাবে’— এই আশায় বসে না থেকে তারা বের হওয়ার পথ খনন করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান কোচ।
গত ২৩ জুন থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। ১২ কিশোরের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তারা ওয়াইল্ড বিয়ার্স বা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য।

নয় দিন গুহার ভেতরে আটকে থাকার পর ২ জুলাই ব্রিটিশ ডুবুরি রিচার্ড স্ট্যানটন ও জন ভলানথেন তাদের সন্ধান পান। অবস্থান জানার পর ১২ কিশোর ও তাদের কোচের জন্য গুহার ভেতরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার পাশাপাশি পাঠানো হয় খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। ৭ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার এক চিকিৎসক গুহায় ঢুকে কোচ ও কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উদ্ধার অভিযান শুরুর সবুজসংকেত দেন। তাদের উদ্ধারে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় ৮ জুলাই। প্রথম দিন চারজন ও দ্বিতীয় দিন ৯ জুলাই চারজন আর তৃতীয় দিন ১০ জুলাই চার কিশোরসহ তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন