মুসলিমদের উপর চীন সরকারের নির্যাতন বাড়ছে

  15-08-2018 02:54PM

পিএনএস ডেস্ক : চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করার অভিযোগ বেশ পুরনো। চীন সরকার দীর্ঘদিন থেকে এই অঞ্চলের জনবিন্যাস বদলে দেয়ার চেষ্টা করছে। এখন নতুন অভিযোগ উঠেছে জিনজিয়াং প্রদেশে দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক রেখেছে চীন সরকার। এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘ পর্যন্ত অভিযোগ করেছে। তবে জাতিসঙ্ঘের অভিযোগকে সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করেছে চীন। আটক রাখার বিষয়টি অস্বীকার করলেও চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমরা সব ধরনের অধিকার পায় কিন্তু যারা ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়িত তাদের পুনর্বাসন ও পুনরায় শিক্ষিত করণে সহযোগিতা করা উচিত।

আটক রাখার কথা অস্বীকার করলেও উগ্রবাদে জড়িতদের পুনর্বাসন ও পুনরায় শিক্ষিত করার স্বীকারোক্তিটি বিরল। জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের বৈঠকে উইঘুর মুসলিমদের বিশাল অন্তরীণ ক্যাম্পে আটক রাখার বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পর চীন এ প্রতিক্রিয়া জানায়।

চীন দাবি করে আসছে ইসলামিক সশস্ত্র যোদ্ধা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হুমকির মুখে আছে জিনজিয়াং প্রদেশ। এসব যোদ্ধা ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হামলার পরিকল্পনা করছে বলেও দাবি করে তারা।

এ ছাড়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ স্থানীয় চীনা হানদের সঙ্গে উইঘুরদের সংঘর্ষের আশঙ্কাও প্রকাশ করে চীন। সাম্প্রতিক অস্থিরতায় সেখানে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। তবে জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার গ্রুপ জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে কাউন্টার-এক্সট্রিমিজম সেন্টারগুলোতে আটকে রাখার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পেয়েছে তারা। জেনেভায় চীনের ওপর জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির দুই দিনের বিশেষ সভায় এই অভিযোগ তোলে সংস্থাটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক কমিটি। কমিটির সদস্য গে ম্যাকডুগাল বলেন, এত বিপুলসংখ্যক উইঘুর আটকের ঘটনা উদ্বেগজনক।

জেনেভায় জাতিসংঘের বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ কমিটিতে চীন ৫০ সদস্যের একটি বড় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। বৈঠকে কমিটি সদস্য গে ম্যাকডুগালের উদ্বেগের জবাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক হু লিয়ানহি বলেন, ‘উইঘুরসহ জিনজিয়াংয়ের নাগরিকেরা সমান স্বাধীনতা ও অধিকারভোগ করেন। পুনরায় শিক্ষিতকরণ কেন্দ্রে ১০ লাখ উইঘুরকে আটক রাখার দাবিটি সম্পূর্ণ অসত্য।’ এরপর তিনি স্বীকার করেন পুনর্বাসন ও পুনরায় শিক্ষিতকরণ কর্মসূচি চালু রয়েছে।

এ দিকে, ইংরেজি ও চীনা ভাষায় লিখিত এক সম্পাদকীয়তে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস বলেছে, সমস্যা জিইয়ে রাখা ও কষ্টার্জিত স্থিতিশীলতা নস্যাতের উদ্দেশ্যেই জিনজিয়াংয়ের অধিকার রক্ষার সমালোচনা করা হচ্ছে। ওই সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়েছে, চীনের নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতি জিনজিয়াংকে আরেকটি সিরিয়া বা লিবিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করেছে।

এসময় ম্যাক ডুগাল ইস্যুটি সম্পর্কে আরো পরিষ্কার হতে চীনা কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি বলছেন ১০ লাখের বিষয়ে আমি মিথ্যা তথ্য দিয়েছি। ঠিক আছে, তাহলে আপনিই বলুন সেখানে কতো মানুষ রয়েছেন? দয়া করে বলুন আমাকে এবং তাদেরকে কোন আইনে আটক রাখা হয়েছে?’ তিনি আরো জানতে চান, পুনরায় শিক্ষিতকরণ কর্মসূচিতে কতজন মানুষ রয়েছে।

উইঘুর চীনের সর্ববৃহৎ নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠী। চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্রদেশ ও ফসল উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র জিংজিয়াংয়ে এদের বাস। এলাকাটি বিপুল তেল ও খনিজসম্পদে পূর্ণ। ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জিংজিয়াংয়ে বসবাসরত ২.২ কোটি মানুষের ১.২ কোটিই মুসলমান।

বর্তমান চীনে দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মুসলিম বাস করে। সেখানে বসবাসরত মুসলমানরা দুই ধরনের। ‘হুই’ মুসলমান ও ‘উইঘুর’ মুসলমান। ‘হুই’দের পূর্বপুরুষরা মূলত পারস্য, সিরিয়া, ইরাক ও আনাতোলিয়া থেকে চীনে এসেছিল কাজ করতে। চীনে এসে চীনা ‘হান’ মেয়েদের বিয়ে করে এখানেই থেকে যায়। তাদের সন্তানরাই ‘হুই’ বলে প্রসিদ্ধ। আর ‘উইঘুর’রা মূলতই জিংজিয়াং বা কাশগর এলাকায় হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। তারাই এ এলাকার মূল অধিবাসী। জিংজিয়াং চীনের অধিকারে ছিল না, তা ছিল মুসলমানদের স্বাধীন ভূমি। মুসলমানদের শাসনে থাকাকালে এ এলাকার নাম ছিল উইঘুরিস্তান বা পূর্ব তুর্কিস্তান। জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ শতাংশ। আনুষ্ঠানিকভাবে জিনজিয়াং তিব্বতের মতো চীনের স্বশাসিত অঞ্চল।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন