ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে কোনো সহযোগিতা নয় : মাহাথির মোহাম্মদ

  15-08-2018 07:44PM

পিএনএস ডেস্ক : মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি আরবকে দেয়া সব ধরণের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি বলেছেন, "আমরা ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে শরীক হতে চাই না এবং কুয়ালালামপুর এমন কোনো কাজে জড়াবে না যাতে আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।"

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের বিজয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৌদি নীতির জন্য বড় আঘাত। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ১৪ মাস আগে অর্থাৎ দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের শাসনামলে সৌদি রাজা সালমানের নামে পিস সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয় যা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সৌদি শাসকদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে নাজিব রাজাকের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তার বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল যার প্রভাব পড়ে সাম্প্রতিক নির্বাচনে।

এর আগেও মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে সহযোগিতা করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ইয়েমেনে শিশুদের বহনকারী একটি বাসে সৌদি হামলার পর ওই দেশটিকে সহযোগিতা না করার ব্যাপারে মাহাথির মোহাম্মদের ঘোষণা ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। শিশুদের বহনকারী বাসে হামলার ঘটনায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ক গবেষক টিজে জর্জ বলেছেন, "ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি সামরিক আগ্রাসনে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে ২০ কোটি ডলার। কিন্তু ইয়েমেন যুদ্ধের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সৌদি আরব তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে যা তাদের জন্য লজ্জাজনক।"

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া খুবই প্রভাবশালী ও শিল্পোন্নত দেশ। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে সহযোগিতা দেয়া বন্ধ করার যে ঘোষণা মাহাথির মোহাম্মদ দিয়েছেন তা অন্য মুসলিম দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। যাতে ইয়েমেনে চলমান গণহত্যায় সবাই সৌদি আরবকে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকে। সৌদি আরব শুধু যে সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় শিক্ষার নামে উগ্র ওয়াহাবি মতবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে তাই নয় একইসঙ্গে দায়েশের মতো উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন দেয়া ও সরাসরি ইয়েমেনে মুসলিম গণহত্যায় ভূমিকা রাখছে।

তুরস্কের কিরসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্বাস কারা আগাচলি বলেছেন, সৌদি আরব ইয়েমেনে গণহত্যা ও সমস্ত অবকাঠামো ধ্বংস করার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমাজ কেবল নিন্দা জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। এমনকি শিশু হত্যা বন্ধেও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।"

যাইহোক, মালয়েশিয়ার নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের বিজয়ের পর পাকিস্তানের নির্বাচনে ইমরান খানের বিজয় আঞ্চলিক রাজনীতিতে সৌদি আরবের জন্য আরেকটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন