হিন্দু নারী গোরস্থানের জমি দিলেন

  17-09-2018 11:58AM


পিএনএস ডেস্ক: পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স ৭৯ বছর। থাকেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায়। বয়সের ভারে জীর্ণ শরীরেও কথাবার্তা এখনও টনটনে। পারিবারিক বিবাদের কারণে ঘর ছাড়েন। সংসারও পাতেন নি। চাকরি করতেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজকল্যাণ দপ্তরে। ২০০০ সালে তিনি অবসরে যান। অবসরের আগে তিনি একটা নদীর তীরে পাঁচ শতক জমির ওপর শিবমন্দির–সহ দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই ঘরে একাই থাকতেন তিনি। দানবীর হওয়ায় এলাকায় তিনি ‘মাদার তেরেসা’ হিসেবে পরিচিত। শেষ বয়সে নিজের শেষ সম্বলটুকু মানব কল্যানে দান করলেন এই বৃদ্ধা

মুসলমানদের করব দেওয়ার জন্য ১২ কাঠা জমি দান করেছেন এই হিন্দু নারী। পাশপাশি নিজের সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থও একটি সেবাশ্রমে হাসিমুখে বিলিয়ে দিলেন তিনি।

পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তারই গ্রামের এক মুসলিম নারী বলেন, ‘একদিন পূর্ণিমাদেবীকে গল্পের ছলে বলেছিলাম আমাদের গ্রামে মুসলিম পরিবারের কেউ মারা গেলে কবরস্থান না থাকায় বাড়ির উঠোনে কবর দিতে হয়। এটা আমাদের গ্রামের একটা বড় সমস্যা। এই কথা শোনার পর তিনি বলেন নদীর ওপারে আমার ১২ কাঠা জমি আছে, ওই জমি আমি মুসলিম ভাইদের দান করে দেব। কয়েকদিন পরেই তিনি রেজিস্ট্রি করে কবরস্থানের জন্য সেই জমি দান করে দেন।’

তার এলকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তার পাশে গ্রামের দুর্গামন্দির করার জন্য তার অবদান ভোলার নয়। বলতে গেলে তার অর্থেই পাকা মন্দিরটি তৈরি করতে পেরেছি আমরা।’

তার এলাকার এক যুবকের কথায়, ‘পূর্ণিমাদেবীর নিজের বলতে আর কিছুই নেই। বসতবাড়িটিও ভারত সেবাশ্রমকে দান করে দিয়েছেন, পেনশনের টাকায় চলছে।’

পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার আমার করে কী লাভ। নিজে সংসার করিনি, ঠাকুরের নাম করে ৭৯টা বছর পার করে দিলাম। নিজের ১২ কাঠা জমি মুসলিম ভাইদের অসুবিধের কথা জেনে বিমলা–অবিনাশ সমাধিক্ষেত্র নামে দলিল করে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি, বাসন্তী মন্দির-দুর্গামন্দির করে দিয়েছি। অবশেষে নিজের মন্দির–সহ দোতালা বসতবাড়ি ও অবশিষ্ট ৫ লক্ষ টাকা ভারত সেবাশ্রমকে দান করে দিয়েছি। এখন আমার সম্বল বলতে সামান্য কয়েক হাজার টাকার পেনশন। যে কদিন বাঁচব, এই অর্থেই চলে যাবে। হাসিমুখে অন্যের সেবা করার মতো আনন্দ অন্য কিছুতে আছে কিনা আমার জানা নেই।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন