সিরিয়ার ইদলিবে হামলার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

  18-09-2018 11:36AM


পিএনএস ডেস্ক: সিরিয়ার যুদ্ধবিধস্ত ইদলিব শহরের হাজার হাজার বাসিন্দা শহরটিতে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে রাস্তায় নেমে এসেছে। শহরটিতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বাসার আল-আসাদের অন্যান্য মিত্ররা চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিক্ষোভটি ইদলিবের মূল কেন্দ্র এবং আশে পাশের ১২টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে বলে কয়েকজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা আল-জাজিরাকে জানিয়েছে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ইদলিব নামক এই শহরে ৩ মিলিয়নেরও অধিক লোকজনের বসবাস।

সাম্প্রতিক সপ্তাহে রাশিয়া এবং ইরান সমর্থিত সেনাদের সাথে একত্রিত হয়ে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ইদলিব এবং এর উত্তরাঞ্চলীয় স্থান হামা নামক স্থানে মারাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে এবং সেখানে বড় ধরনের হামলা হলে তা অঞ্চলটিতে ‘রক্তগঙ্গা’ দিবে বলে জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি করে দিয়েছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই বাসার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী বিমান হামলা শুরু করে। সরকারি বাহিনী ইদলিবের বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক বোমা হামলা চালায়। তাদের সাথে গত কয়েকদিন পূর্বে রাশিয়ার বোমারু বিমানগুলো যোগ দিয়ে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলেছে।

ইদলিব শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মাড়াত আল-নোমানে গত জুমার নামাজের পর অন্তত ২৫,০০০ মানুষ সেনা হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানায়। এটিই ছিল চলমান বিক্ষোভগুলোর মধ্যকার সবচাইতে বড় কোনো বিক্ষোভ।

মাহমুদ হারকাউই নামের ৩৬ বছর বয়সী একজন বিক্ষোভকারী আল-জাজিরাকে জানান, ‘আমরা বিশ্বকে এই বার্তা দিতে চাই যে, আমরা হচ্ছি সেই সকল নিষ্পেষিত জনগণ যারা স্বাধীনতা চায়।’

‘আমরা চাই রাশিয়া আমাদের শহরে হামলা করা থেকে বিরত থাকুক।’- মাহমুদ হারকাউই এমনটি বলেন।

আহম্মদ আল-ইউসুফ নামের ২৪ বছর বয়সী আরেকজন বিক্ষোভকারী জানান, আমরা চাই বিক্ষোভকারিরা ফ্রি সিরিয়ান আর্মির পক্ষাবলম্বন করুক। এই ফ্রি সিরিয়ান আর্মি আসাদ-সরকারের বাহিনী ত্যাগ করে এখন সরকার বিরোধী হিসেবে যুদ্ধরত আছে।

‘এই বিক্ষোভের উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, রাশিয়া এবং আসাদের নিকট এই বার্তা পৌঁছে দেয়া যে, এটি হচ্ছে একটি জনপ্রিয় বিপ্লব যার সাথে সন্ত্রাসীদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

ইদলিব প্রান্তসীমায় গিয়ে ঠেকেছে
গত কয়েক বছর যাবত ইদলিবের মাড়াত আল-নোমান আল-কায়দার সাথে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী দল হায়াত তাহরির আল-শাম বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছে। এই আল-শাম নামক দলটি ইদলিবের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে।

আল-ইউসুফ আল-জাজিরাকে জানান, শুক্রবারের বিক্ষোভটি গত চলতি মাসের ৭ তারিখে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের চাইতেও অনেক বেশি জনসমাগম হয়েছে। চলতি মাসের ওই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তুরস্ক, রাশিয়া এবং ইরানের মধ্যকার অনুষ্ঠিত তেহরান সামিটের বিরুদ্ধে।

তেহরান সামিটে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনেন। তবে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

শুক্রবার ইদলিবে পাশাপাশি দুইটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এর একটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল HTS নামক সংগঠনের যোদ্ধাদের দ্বারা। যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইদলিবের ক্লক স্কয়ারে। আর অন্যটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল মার্টায়ার’স স্কয়ারে স্থানীয় জনগণ দ্বারা যারা সেখানে কালো-সাদা-সবুজ পতাকা পদর্শন করেছিল। উভয় বিক্ষোভ থেকেই আসাদ বিরোধী স্লোগান দেয়া হয়েছিল।

হাদি আল-আবদুল্লা নামের একজন বিক্ষোভকারী আল-জাজিরাকে জানান, HTS এর বিক্ষোভের চাইতেও স্থানীয় জনগণ দ্বারা অনুষ্ঠিত বিক্ষোভটি অনেক বেশী বড় হয়েছিল। সেখানে ৫,০০০ এরও অধিক জনগণ অংশগ্রহণ করেছিল।

আলাপ আলোচনা চলমান
ইতিমধ্যেই ইদলিবের ভবিষ্যৎ ভাগ্য নিয়ে রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যকার আলোচনা চলমান রয়েছে।

গত শুক্রবার তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু ঘোষণা করেন, আসন্ন সোমবারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্লাক সী রিসোর্টে সিরিয়ার চলমান সংঘাতের সমাধানকল্পে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন।

মেভলুত কাভুসোগলু পাকিস্তান সফরের সময় দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সিরিয়ায় যুদ্ধরত সকল পক্ষের সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু সন্ত্রাস দমনের নামে নিরীহ নাগরিকদের, নারীদের এবং শিশুদের হত্যা করা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

তুরস্কের কর্মকর্তারা ইদলিব এবং এর আশপাশের অঞ্চল সমূহে বড় রকমের যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। তুরস্ক জানিয়েছে, এর ফলে সামাল দেয়ার মত নয় এমন উদ্বাস্তুদের ঢল সিরিয়ার সীমান্তের দিকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হবে যা তুরস্কের জন্য সুখকর কোনো বিষয় নয়। সূত্রঃ আল-জাজিরা

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন