ইউরোপ-আমেরিকায় মসজিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে

  18-09-2018 03:46PM


পিএনএস ডেস্ক: মসজিদের নিচের তলায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ, ইমামদের দ্বারা চুপচাপ থাকার নির্দেশ এবং মূল ফটক দিয়ে প্রবেশে বাঁধা প্রাপ্ত হওয়া সহ নানা কারণে মুসলিম নারীরা মসজিদে পুরুষদের মাধ্যমে শাসিত হয়ে থাকেন।

এমন ধারণা ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ডেনমার্কের কোপেনহেগন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহরে ইতিমধ্যেই গড়ে ওঠেছে শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের ইবাদত করার জন্য মসজিদ। বর্তমানে মুসলিম নারীরা তাদের নিজেদের উপাসনালয়ের অধিকার নিয়ে সোচ্চার যা ইতিহাস জুড়ে পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলো।

ইউরোপে মুসলিম নারীদের জন্য প্রথম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শেরিন খানকান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ‘দশকের পর দশকে ধরে যে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে উঠেছে তা পাল্টানো সম্ভব।’

তিনি ডেনমার্কের একটি ব্যস্ততম বাজারে রাস্তার পাশেই মসজিদ গড়ে তুলেছেন যা সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে এই মসজিদটি নারীদের জন্য এরকম উদ্যোগে সৃষ্টির জন্য নীরবে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে।

গত দুই বছর ধরেই মসজিদটিতে নারী ইমাম নামাজে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। খানকান বলেন, তিনি কুরআনের শিক্ষার বিরুদ্ধে যেতে চান না তবে তিনি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পাল্টাতে চান।

‘আমরা নতুনভাবে শুরু করতে চাই। আমরা লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে চাই। এটি কোনো সংস্কার নয়। বরং আমরা ইসলামের মূল শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে চাই।’- শেরিন খানকান এমনটি বলেন।

শেরিন খানকান আরো বলেন, তার মসজিদে এখন পর্যন্ত ১৫০ জন ইবাদতকারী নিয়মিত ইবাদত করতে আসেন। ডেনমার্কের মুসলিম নারী ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের নিকট থেকে তিনি অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

নারীদের জন্য একটি নিবেদিত স্থান
বিভিন্ন মুসলিম নারীদের সংগঠন জানিয়েছে যে, বর্তমান বিশ্বে নারী ইসলামী নেতৃত্বের বড়ই অভাব। বিভিন্ন দেশের বেশীরভাগ মসজিদগুলো পুরুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে করে মুসলিম নারীদের জন্য মসজিদে এসে প্রার্থনা করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

গত ১৫ বছর ধরে প্রচেষ্টার ফলাফল স্বরূপ শুধু মাত্র শেরিন খানকানের মারিয়াম মসজিদই নয় যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহর এবং জার্মানির বার্লিনে দুইটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যারা প্রতি শুক্রবার নারী এবং পুরুষদের কে মসজিদে একত্রে নামায আদায় করার সুযোগ দিচ্ছে।

এমনকি যুক্তরাজ্যের ব্রেডফ্রোড শহরে দেশটির প্রথম নারী নেতৃত্বাধীন মসজিদ প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। যার কাজ ২০২০ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেনে রাখা দরকার যে, চীনে কয়েক শত বছর ধরেই শুধুমাত্র মুসলিম নারীদের জন্য আলাদা মসজিদ রয়েছে। যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম নারীরা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

যুক্তরাজ্যের ব্রেডফ্রোড শহরের মসজিদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা বানা গোরা যিনি ব্রিটেন মুসলিম ওমেন’স কাউন্সিলের পরিচালক বলেন, ‘সমাজে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে মুসলিম নারীরা একে অন্যের সাথে মত প্রকাশ করবে কোথায়? আপনার তখন দরকার হবে একটি নিবেদিত স্থান যেখানে মুসলিম নারীরা তাদের মত প্রকাশ করতে পারবে। আর আমরা কোথায়ও এরকম স্থান দেখতে পাইনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেজন্যই নারীরা মসজিদে তাদের স্থান দেয়ার দাবী জানাচ্ছে। আমি এটাতে কোনো ভুল দেখছি না।’

নারীদের অন্তরীণ করা হয়েছে
শেরিন খানকান বলেন, মসজিদে নারীদের উপস্থিতি তাদেরকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন অনুভূতি দেয়। তারা মসজিদে এসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করেন যেমন- আন্ত-ধর্মীয় বিবাহ অথবা গৃহ সংঘাত ইত্যাদি।

তিনি আরো বলেন, ডেনমার্কে বোরকা নিষিদ্ধ করার কারণে মুসলিম নারীদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী সংকুচিত হয়ে গেছে।

ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সাথে তাল মিলিয়ে ডেনমার্কের আইনসভা চলতি বছরের মে মাসে বোরকার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশটির বিচার মন্ত্রী বোরকা নিষিদ্ধ করে ডেনমার্কের নারীদেরকে পরিবারের জোর করে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত থেকে মুক্তি দিয়েছেন বলে দাবী করেন।

শেরিন খানকান বলেন , ‘যদি নারীদেরকে জোর করে বোরকা পরিধান করানো তাদেরকে অন্তরীণ করার সামিল হয় তাহলে তা অবশ্যই শুভ কোনো বিষয় নয়। তবে যদি বোরকা পরিধানকারীদের অপরাধীদের সাথে তুলনা করা হয় তবে তা হবে নারীদেরকে আরো বেশী অন্তরীণ করার সামিল।’

ইসলামের ভবিষ্যৎ
শেরিন খানকান বলেন, তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে মুসলিম নারীদের মধ্য থেকে অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ এবং ইমাম উঠে আসবেন যারা মুসলিম নারীদের পক্ষে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

‘আমাদের জানা দরকার যে, নারীরাই ইসলামের ভবিষ্যৎ। আমাদের অবশ্যই নারীদের জন্য পুরুষদের মত সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, বেশীরভাগ ইসলামী বিশেষজ্ঞের মতে- পবিত্র কুরআনে নারীদের নামাজে ইমামতি করার ব্যাপারে সরাসরি কোনো কিছু বলা হয়নি।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন নবী মুহাম্মদ(সাঃ) নারীদেরকে ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন- নবী মুহাম্মদ(সাঃ) নারীদেরকে শুধুমাত্র গৃহে ইবাদত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এখনো পর্যন্ত, বিভিন্ন ঐতিহ্যগত ইসলামী বিশেষজ্ঞ মনে করেন- নারীরা যখন নামায রত থাকেন তখন পুরুষদের তাদের কণ্ঠস্বর শোনা উচিত নয়।

তবে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গিউলিয়া লিবারেটর নামের একজন অধ্যাপক যিনি মুসলিম নারী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গবেষণারত আছেন। তিনি বলেন, মুসলিম নারীদেরকে যদি ক্ষমতা দেয়া হয় তবে তার প্রভাব ইতিবাচক হতে পারে।

‘যখন নারীরা অন্য নারীদেরকে উচ্চ আসনে দেখবে তখন তাদের মধ্যে এই ধারণা জন্মাবে যে, তারাও চেষ্টা করলে একজন বিশেষজ্ঞ হতে পারবেন।’- গিউলিয়া লিবারেটর এমনটি জানান। সূত্র: স্ক্রল ডট ইন

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন