জামাল খাসোগি কোথায়?

  11-10-2018 05:30PM

পিএনএস ডেস্ক : সৌদি রাজপরিবারের কট্টর সমালোচক ও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাসোগির ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে রহস্য আরও ঘণীভূত হচ্ছে। তিনি কোথায়? কি পরিণতি হয়েছে তার? এমন অনেক প্রশ্ন কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর মিলছে না।

জামাল খাসোগি গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে যান কিছু তথ্যের জন্য। তারপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। খাসোগির স্বজনরা আশঙ্কা করছেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে। ইস্তাম্বুলের কর্তৃপক্ষও বলছে, সৌদি কিলিং স্কোয়াডের সদস্যরা তাকে খুন করেছে।

তবে সৌদি আরব এ দাবি অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, খাসোগি দূতাবাসে প্রবেশ করে কাজ শেষে বের হয়ে চলে গেছেন।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে খাসোগি প্রথমবার যান ২৮ সেপ্টেম্বর। তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে তার ডিভোর্স সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলতে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২ অক্টোবর দুপুরের দিকে আবার ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে যান খাসোগি।

প্রথমবার তার সাথে খুব আন্তরিক ব্যবহার করা হয় বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন তিনি। কোন সমস্যা হবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছিল। অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য তিনি তার তুর্কী বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে নিজের দুটো মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘যদি তিনি কনস্যুলেট থেকে বের না হন - তাহলে হাতিস যেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করেন।’

কিন্তু খাসোগি আর ফেরেননি। তার অপেক্ষায় দূতাবাসের বাইরে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন হাতিস চেঙ্গিস।

তুরস্ক যা বলছে:

তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, দূতাবাসের বাইরে সৌদি এজেন্টদের একটি দলের হাতে খাসোগি খুন হয়েছেন। তার মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এই বক্তব্যের সমর্থনে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি তারা।

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে নাম প্রকাশ না করে একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি কমপ্লেক্স অপারেশন আছে এবং সেখানে খাসোগিকে হত্যা করা হয় পৌঁছানোর দুই ঘণ্টার মধ্যেই।

সরকার-সমর্থক তুর্কী সংবাদপত্র সাবাহ বলছে, তারা সন্দেহভাজন ১৫ জন সৌদি এজেন্ট শনাক্ত করেছেন যারা গুমের ঘটনার দিন ইস্তাম্বুলে ঢুকেছিল এবং পরে বেরিয়ে গেছে।

বিবিসির তথ্যমতে, এই দলের একজন সদস্য মাহের মুটরেব সৌদি গোয়েন্দা-বাহিনীর কর্নেল হিসেব কাজ করতেন এবং লন্ডনের এম্বেসিতে কর্মরত ছিলেন। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে একটি প্রাইভেট বিমানে করে এই এজেন্টদের নয়জন ওইদিনই এসে পৌঁছোয় বলে খবরে বলা হয়। বাকি সদস্যরা দিনের অন্য সময় একে একে এসে পৌঁছায় আরেকটি বিমানে। এরপর তারা দূতাবাস ভবনের কাছাকাছি দুটি হোটেলে অবস্থান নেয়।

তুরস্কের টেলিভিশনের প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সৌদি আরবের লোকজন এয়ারপোর্টে প্রবেশের পর গিয়ে হোটেলে উঠছে।

খাসোগি দূতাবাসে প্রবেশের এক ঘণ্টা আগে কিছু যানবাহন দূতাবাসে ঢুকতে দেখা যায়। এরপর আগন্তুকরা প্রাইভেট বিমানে করে দেশ ছেড়ে যায় এবং সেগুলো রিয়াদের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় কায়রো ও দুবাই হয়ে, তদন্তকারীরা এমনটাই বলছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়, খাসোগির পৌঁছানোর আগে মার্কিন সামরিক গোয়েন্দারা সৌদি কর্মকর্তাদের কথোপকথন রেকর্ড করে জানতে পারেন তারা একটি ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করছিল।

সৌদি আরব যা বলছে:

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গ নিউজকে বলেছেন, আসলে কী ঘটেছে সেটা জানতে তার সরকার খুবই উদগ্রীব এবং খাসোগি কিছু সময় কিংবা ঘণ্টা খানেক পরই দূতাবাস এলাকা ছেড়ে যান।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা তারা সব ধরনের সহায়তার জন্য উন্মুক্ত এবং ভবনটির ভেতরে একটি তল্লাশি অভিযান চালানো যেতে পারে।

তুরস্ক বলছে তারা তল্লাশি চালাবে কিন্তু তার আগে প্রমাণ দিতে হবে যে খাসোগি ভবনটি ছেড়ে গেছেন। খাসোগির ছেলে সৌদি মালিকানাধীন আল অ্যারাবিয়া নিউজ আউটলেটকে বলেছেন, তার বাবার নিখোঁজের ঘটনা বিদেশি মহলের কারণে রাজতৈনিক হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, মূল ঘটনা হচ্ছে তিনি একজন সৌদি নাগরিক এবং নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে জামাল খাসোগির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, কোন সাংবাদিকের ক্ষেত্রে, কারো ক্ষেত্রে আমরা এমনটা ঘটতে দিতে পার না।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন