সৌদি আরবের পাল্টা হুমকি

  16-10-2018 07:54AM

পিএনএস ডেস্ক: খ্যাতনামা সাংবাদিক সৌদি সমালোচক খাশোগি'র নিখোঁজ বা অন্তর্ধান ইস্যুতে দোষী হলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে বলে ট্রাম্প থেকে শুরু করে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে পাওয়া হুমকির পরিবর্তে পাল্টা হুমকি ছাড়লো সৌদি আরব।

এই অন্তর্ধান বা হত্যাকাণ্ড নিয়ে এরইমধ্যে সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ ইস্যুতে রিয়াদের কাছে জবাব চেয়েছে ফ্রান্স। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব সমান মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে’।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি প্রমাণ হয় যে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সৌদি আরব হত্যা করেছে তাহলে দেশটিকে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ১৪ অক্টোবর রবিবার উল্টো এ ইস্যুতে কথা বলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রিয়াদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সৌদি কর্মকর্তা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)-কে বলেছেন, অন্য দেশগুলোর কোনও ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি এবং মিথ্যা অভিযোগের পুনরাবৃত্তি প্রত্যাখ্যান করছে সৌদি আরব। রিয়াদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হলে তার প্রতিক্রিয়ায় আরও ‘বড় ধরনের’ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে সৌদি আরবের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।

এদিকে সাংবাদিক জামাল খাশোগির অন্তর্ধানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে রিয়াদের টানাপড়েনের মধ্যেই সৌদি আরবের শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। রবিবার সকালেই দেশটিতে শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। ওইদিনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় রিয়াদ।

একজন উপসাগরীয় অর্থায়ন নির্বাহী বলেন, সৌদি আরব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

রবিবার বাজার শুরু হওয়ার প্রথম ঘণ্টায়ই সৌদি শেয়ারের দামে ৪ শতাংশ পতন ঘটে। সৌদির আল রাজি ব্যাংকের শেয়ার দাম ৫.৩ শতাংশ কমেছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রাসায়নিক কোম্পানি সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের শেয়ারের দাম কমেছে ৪ শতাংশ। আর সৌদি আরবের সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী ব্যাংক ন্যাশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৫.৫ শতাংশ কমেছে।

সৌদি শেয়ার বাজারে এই ধস নামার আগেই রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ওই সম্মেলনের কাভারেজ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মূল ধারার মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো।

সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রী আর্নেস্ট মোনিজ, ভার্জিন গ্যালাক্টিকের রিচার্ড ব্রনসন, এওএলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কেস, মার্কিন সাময়িকী ইকনোমিস্ট, সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনবিসিসহ আরও প্রতিষ্ঠান।

‘দাভোস ইন ডেজার্ট' নামে খ্যাত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনটি বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তুরস্কে অবস্থিত সৌদি আরবের কনস্যুলেটে গিয়ে সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়া ও তার পেছেনে সৌদি সরকারের হাত থাকার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে দেশটির সম্মেলন বর্জন করা বা সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিতের কথা জানান অনেকে।

সংবাদ সাময়িকী ইকনোমিস্টের এডিটর ইন চিফ জ্যানি মিন্টন বেডোস জানিয়ে দিয়েছেন, রিয়াদের বিনিয়োগ বিষয়ক সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করবেন না। সিএনবিসিতে কর্মরত একজন সঞ্চালক ও নিউ ইয়র্ক বিজনেস টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্ড্রু রস সরকিন টুইটার বার্তায় লিখেছেন, তিনিও ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘জামাল খাশোগির অন্তর্ধান ও তার হত্যার শিকার হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন পড়ে আমি ভয়ঙ্কর রকম ক্ষুব্ধ।’

প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভাষ্য, সম্মেলনের মিডিয়া স্পন্সরের হিসেবে থাকার কথা থাকলেও তারা ওই অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সৌদি আরবের ওই আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে না থাকার কথা ভাবছে। ভায়াকমের সিইও বব বিকাশও সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ তার সেখানে বক্তব্য রাখার কথা ছিল। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ব্লুমবাবার্গও তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দিয়েছে, রিয়াদের বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্তের কথা।

উবার টেকনোলজিসের সিইও দারা খশরুশাহী বলেছেন, এর মধ্যে যদি নতুন কোনও তথ্য উঠে না আসে তাহলে তিনি রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ কনফারেন্সে’ যাবেন না।

উল্লেখ্য, সৌদি আরব থেকে নির্বাসিত সাংবাদিক ও কলামিস্ট খাশোগি ২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি থেকে আসা এজেন্টরা তাকে হত্যা করেছে। তবে ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও জামাল খাশোগি’র ব্যাপারে কোনও সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ।

এক সময় রাজপরিবারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা জামাল খাশোগি গত বছর সৌদি যুবরাজ দেশব্যাপী ভিন্নমতাবলম্বীদের ধরপাকড় শুরুর পর দেশ ছাড়েন। গত মার্চে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সৌদি আরবে বিতর্কের কোনও জায়গা নেই। সরকারের নীতিকে প্রশ্ন করলেই নাগরিকদের আটক করে কারাবন্দি করা হচ্ছে। সৌদি অভিজাত পরিবারে জন্ম নেওয়া এই সাংবাদিক গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে যান। সেখান থেকে তিনি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ কলাম লিখতেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্যও আবেদন করেছিলেন এই সাংবাদিক। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন