খাসোগির অপ্রকাশিত যে সাক্ষাৎকার

  21-10-2018 05:27PM

পিএনএস ডেস্ক : ‘আমাদের নেতারা ভাবেন, তাঁরাই সব জানেন। আর আমরা শুধু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি।’ মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছিলেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি।

কয়েক মাস আগে গেল গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটন পোস্টের কার্যালয়ে সংবাদপত্রটির বৈশ্বিক মতামতবিষয়ক সম্পাদক (গ্লোবাল ওপেনিয়ন এডিটর) কারেন আতিয়াহর সঙ্গে একটি ধারণকৃত আলোচনায় অংশ নেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনজনের সেই আলোচনায় আরও ছিলেন ওই বিভাগের ইরানবিষয়ক মতামত লেখক ইরানি সাংবাদিক জেসন রেজাইয়ান, যাঁকে ইরানের কারাগারে ৫৪৪ দিন বন্দী থাকতে হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্য, সৌদি আরব ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।

ওই আলোচনায় জামাল খাসোগির সাক্ষাৎকারটি গতকাল শনিবার প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

আলোচনায় অংশ নিয়ে খাসোগি বলেন, ‘সৌদি আরব দুই কোটি জনসংখ্যার দেশ। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ, ৩০ বছরের কম বয়সী তাঁরা। মোহাম্মদ বিন সালমান সব বিষয়ই তুলে আনছেন—অর্থনীতি, ধর্ম—সৌদি আরব স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতগতির ওপর রয়েছে।’

খাসোগির এই সাক্ষাৎকারের বিষয়টি তুলে ধরে সাংবাদিক জেসন রেজাইয়ান বলেছেন, তিনি আর জামাল খাসোগি বিপরীত বিষয়ে লিখলেও তা সমান সংকটপূর্ণ। জামাল সৌদি নিয়ে লিখতেন আর তিনি ইরান নিয়ে। তাঁর ভাষায়, সৌদি আরব খাসোগির আর ইরান তাঁর বাড়ি হলেও দেশ দুটির বর্তমান শাসকেরা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, দেশে ফেরার জন্য তাঁদের স্বাগত জানানো হবে না। যে বিষয়টি এই সময়ে তাঁকে কষ্ট দেয়, দুজনেই দেশের প্রশংসা করতেন, দেশকে ভালোবাসতেন—তাঁরা নিজেদের সমাজের আরও ভালো চেয়েছিলেন, কিন্তু সরকারগুলোর নির্যাতন, অত্যাচার ও ভুলগুলো পাশ কাটাতে চাননি।

ওই সাক্ষাৎকারে খাসোগি আরও বলেছিলেন, ‘এমনকি কিছু মানুষ যাঁরা আমার লেখার সঙ্গে অমত প্রকাশ করেন না, তাঁরাও আমাকে বলবেন, “কিন্তু এটা বলার জন্য এখন সঠিক সময় নয়।” আমরা গণতন্ত্র থেকে অনেক দূরে। আমেরিকা, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের গণতন্ত্রে, নেতারা নত হন। এটা একজন নেতাকে সড়কে চলা একজন ক্ষুদ্র মানুষের প্রতিও দায়বদ্ধ করে। আমাদের নেতারা? না। আমাদের নেতারা নিজেদের এমন ভাবেন যে, তাঁরাই সব জানেন এবং আমি ও জেসনের মতো মানুষ শুধু তাঁদের সংস্কার–প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি।’

খাসোগিকে নিয়ে এক টুইট পোস্টে সম্পাদক কারেন আতিয়াহ বলেছেন, ‘তারা হয়তো আমার বন্ধুকে নীরব করে দিতে পেরেছে, কিন্তু তাঁর শব্দকে তারা হত্যা করতে পারবে না...।’

২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করেছিল, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদির চররা হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে দিয়েছে কোথাও। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটন পোস্ট-এ যুবরাজ মোহাম্মদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন। অভিযোগ রয়েছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।

ঘটনার ১৭ দিন পর গতকাল শনিবার কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে সৌদি আরব। এর আগ পর্যন্ত দেশটি খাসোগি নিখোঁজের ব্যাপারে কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছিল। সৌদির বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘হাতাহাতির সময় খাসোগি খুন’ হয়েছেন। এ ঘটনায় গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমাদ আল-আসিরি ও যুবরাজ মোহাম্মদের জ্যেষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৌদ আল-কাহতানিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জন সৌদি নাগরিককে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন