থেমে গেল মোদির যাত্রা!

  13-12-2018 03:18AM

পিএনএস ডেস্ক: ‘বিনম্র চিত্তে জনাদেশ গ্রহণ করছি’। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এভাবে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

লোকসভা ভোটের বাকি এখনও কয়েক মাস। কিন্তু এর আগেই থেমে গেল নরেন্দ্র মোদির বিজয়রথ! এই প্রথম বড় ধাক্কা খেলেন মোদি, সেটি এলো ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে।

এবারই প্রথম হিন্দি-বলয়ের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিজেপিকে হারালেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতি পদে নাম ঘোষণার ঠিক এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিনেই রাহুলের অবিস্মরণীয় এ বিজয়।

তবে নির্বাচনে পরাজয় হলেও ভালো ফল করায় কংগ্রেস থেকে শুরু করে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি এবং মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি। টুইটে তিনি লেখেন, ‘জয় এবং পরাজয় জীবনের অঙ্গ। আজকের ফল আমাদের আরও বেশি করে উন্নয়নের কাজ করতে প্রেরণা দেবে।'

লোকসভার আগে মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, তেলঙ্গানা, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়- এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে ধরা হয় সেমিফাইনাল। এদিন কংগ্রেস অবশ্য মিজোরামে ক্ষমতা হারিয়েছে। তেলঙ্গানাতেও চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে তাদের জোট কাজে আসেনি।

বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ভোট এগিয়ে আনার চালেই সেখানে সফল হন চন্দ্রশেখর রাও। কিন্তু গোটা দেশের চোখ আজ যে দিকে ছিল, সেই হিন্দি-বলয়ের রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরল কংগ্রেস। যদিও মাত্র দু’টি আসনের জন্য রাজস্থানে কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না।


আর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মধ্যপ্রদেশে রাত পর্যন্ত ম্যাজিক সংখ্যার নিচেই থেকেছে দু’দল। সেখানেও সরকার গড়া নিয়ে নিশ্চিত কংগ্রেস। কারণ, অখিলেশ, মায়াবতীর দল সেখানে আসন পেয়েছে, যা সরকার গড়ার অন্যতম চাবি হয়ে উঠেছে।

গতকাল পর্যন্ত মোদির প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ বড় মুখ করে বলছিলেন, সব রাজ্যেই জিতবে বিজেপি। সকালে সংসদে গেলেও ভোটের ফল স্পষ্ট হওয়ার পরে তাকে আর দেখা যায়নি।

রাতে টুইট করে তেলঙ্গানায় জয়ের জন্য চন্দ্রশেখর রাওকে ধন্যবাদ জানালেও তিন রাজ্যের হার নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি বিজেপি সভাপতি! আর সারাদিন চুপ থেকে রাতে টুইট করে মোদি বললেন, হারজিত থাকেই। কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানালেন।

এবং সেই সঙ্গেই তেলঙ্গানা, মিজোরামের উল্লেখ করে মোদী নিজেদের এমন দুর্দিনেও কংগ্রেসকে তাদের ব্যর্থতার কথা মনে করিয়ে দিলেন!

খোদ হিন্দি-বলয়ে বিজেপির এমন হাল কেন? দলের নেতারা বলছেন, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা ছিল। মানুষ বদলও চাইছিলেন।

বেকারি ও কৃষক অসন্তোষ ভীত নড়িয়ে দিয়েছিল। সেই রোষেই উড়ে গেলেন ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহ। মধ্যপ্রদেশেও তার ছাপ পড়েছে। তবে সেখানে অনেকটাই সামলানো গেছে শিবরাজ সিংহ চৌহানের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং সাংগঠনিক শক্তির সাহায্যে।

রাজস্থানে গত দু’দশক ধরে এমনিতেই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হচ্ছে। তার উপরে ছিল ‘মহারানি’ বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। শেষ মুহূর্তে গেরুয়া বাহিনী এবং মোদি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপালেও হার সামাল দিতে ব্যর্থ হন।

তিন রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে বিজেপির এখন কপালে ভাঁজ। কারণ তেলঙ্গানা বা মিজোরামেও তাদের লাভ হয়নি। এক সময়কার জোটসঙ্গী এমএনএফ মিজোরামে জেতার আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা বিজেপির হাত ধরবে না।

তেলঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও একই কথা জানিয়েছেন। ফলে বিজেপি দলের মধ্যে এখন নানা প্রশ্ন। এই ফল কি মোদীর বিরুদ্ধে জনমত?

মোদির প্রধান প্রতিপক্ষ এখন রাহুল গান্ধী। এখন লোকসভায় কী হবে? রাহুল গান্ধী বলেন, আসল কথাটি হল, কৃষক, যুবদের ক্ষোভ ধরতেই পারেননি প্রধানমন্ত্রী। উল্টে নোটবন্দি, জিএসটি করে আমজনতার হাল আরও বেহাল করেছেন। এই ফল সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন।

গতকাল রাতেই সংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন রাহুল। বললেন, ‘২০১৯-এ আর ফিরছেন না মোদি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছেই শিখেছি, কী করা উচিত নয়।’

মোদির পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে রাহুল বলেন, ‘এক, ভারতের হৃৎস্পন্দন শুনতে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দুই, ‘দুর্নীতির মতো বিষয়কে সামনে রেখে ক্ষমতায় এসেছেন মোদি। মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। তারা বুঝে ফেলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত। তিন, ২০১৪-তে মানুষ বিশাল সুযোগ দিয়েছিলেন মোদিকে।

যুবক, কৃষক, দেশের কথা শুনলেনই না। চার, ঔদ্ধত্য এসে গিয়েছে। আমি তার থেকেই শিখেছি, মানুষের কথা শুনে কাজ করতে। বিনয়ী হতে। পাঁচ, একুশ শতকের দিশা দেখাতে পারবেন না মোদি। আমরা কোনো আক্রমণ না-করেই তা দেব।’

রাহুল আরও বলেন, ‘মাকে বলছিলাম, ২০১৪ সালের ভোট আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীও শিখিয়েছেন, কী করতে নেই। প্রধানমন্ত্রী পঙ্গু হয়ে পড়েছেন।

বিরোধীদের জবাব দেবেন কী, সেই চাপই তো নিতে পারছেন না। জবাবও দিতে পারছেন না। তার জন্য সত্যিই খারাপ লাগে।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন