‘সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সময়ের ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ’

  21-01-2019 08:18PM

পিএনএস ডেস্ক : সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মরণে লন্ডনে এক সভায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সময়ের ব্যাতিক্রমী রাজনীতিবিদ ছিলেন। দৈহিক মৃত্যু হলেও এমন রাজনীতিকদের আদর্শ আমাদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত।

রোববার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সৈয়দ আশরাফ স্মরণে এ নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।

আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নূরউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লার পরিচালনায় স্মরণসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- হাউস অব লর্ডসের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সদস্য পলা মঞ্জিলা উদ্দিন, টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, লন্ডনের কমিউনিটি আন্দোলনে সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি লিডার রাজন উদ্দিন জালাল, গ্রেটার লন্ডন এসেম্বলির সদস্য কাউন্সিলার উমেশ দেশাই, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক লিডার হেলাল আব্বাস, সৈয়দ আশরাফের ভাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মেয়ে রিমা ইসলাম, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট রাজু নাথন, লয়েড ঘি, আজাদ বখত চৌধুরী, রুহুল আমীন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা নঈমুদ্দিন রিয়াজ, লন্ডনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামাল খান, বঙ্গবন্ধু স্কুলের শিক্ষক আয়েলা উইলসন ও রোজি ওয়াকার প্রমুখ।

হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম আরও বলেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিলো সৈয়দ আশরাফের রাজনীতির লক্ষ্য। তার মৃত্যুতে সেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যেন নেতৃত্বহীন হয়ে না পড়ে, সেদিক বিবেচনা করে হলেও আশরাফ কন্যা রিমার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত।

বিভিন্ন সময় আশরাফের সান্নিধ্যে আসার স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন হাইকমিশনার। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের প্রচলিত রাজনৈতিক ডামাডোলে সৈয়দ আশরাফ ছিলেন এমন একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিক, যিনি যা বিশ্বাস করতেন তা বলতেন অকপটে। রাজনীতি মানে মানুষের সেবা, আত্মসেবা নয়, নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেটিই প্রমাণ করে গেছেন তিনি। সৈয়দ আশরাফের কমিউনিটি আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল টাওয়ার হ্যামলেটসের কোনো একটি স্থাপনার নামকরণ তার নামে করার জন্য মেয়র জন বিগসের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হাইকমিশনার।

পলা মঞ্জিলা উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা কখনও ভুলতে পারতেন না সৈয়দ আশরাফ। এ সময় তিনি সৈয়দ আশরাফ পত্নী শিলা ইসলামকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বলেন, মানবপ্রেমিক এই দম্পতি টাওয়ার হ্যামলেটসের কমিউনিটি ইতিহাসের এক স্বর্ণালী অংশ হয়ে থাকবেন।

টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস বলেন, সমাজে সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সামনের কাতারের একজন যোদ্ধা। তার এই যুদ্ধ নির্দিষ্ট কোনো ভূখণ্ড সীমাবদ্ধ ছিলো না, লন্ডনে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি যেমন তার কমিউনিটির পাশে ছিলেন, তেমটি জন্মভূমি বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশেও ছিলো তার সরব উপস্থিতি। তিনি ছিলেন সাদামাটা, জৌলুসহীন ও আত্মপ্রচারবিমুখ একজন মানুষ।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি লিডার রাজন উদ্দিন জালাল বলেন, বর্তমান ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অফ কমন্সে তিন বাঙালি নারী প্রতিনিধি রয়েছেন। এই যাত্রা শুরু হয়েছিলো সেই বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পথ ধরে। আর এই যাত্রায় আশরাফ ভাই আমাদের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন। অনেক বাঙালি কাউন্সিলর তৈরি করতে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। ভবিষ্যৎ দেখতে পারার ক্ষমতা ছিলো তার।

আশরাফ কন্যা রিমা ইসলামের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জালাল বলেন, সৈয়দ আশরাফ যেমন আমাদের লোক ছিলেন, তেমনি রিমাও আমাদের সন্তান। কমিউনিটি নিশ্চয়ই তার এই সন্তানের প্রতি দায় এড়াবে না।

সভায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ সৈয়দ আশরাফকে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন আন্দোলনে তরুণ সহকর্মী সৈয়দ আশরাফের সক্রিয়তার কথা স্মরণ করেন তিনি।

স্মরণসভার সভাপতি সৈয়দ আশরাফের সহযোদ্ধা সাবেক কাউন্সিলর নুরুদ্দিন আহমদ বলেন, একজন ক্ষনজন্মা মানুষ ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। ব্রিটেনের মূলধারায় বাঙালির ক্ষমতায়নের এক নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনি। সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই। আশরাফ ছিলেন সেই সোনার মানুষ।

সভার শেষ পর্যায়ে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের স্বাক্ষর সংবলিত একটি শোকবই আশরাফ কন্যা রিমা ইসলাম ও তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।


পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন