আমার চেয়ারের প্রয়োজন নেই, চেয়ারের আমাকে প্রয়োজন: মমতা

  26-05-2019 12:11PM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, চেয়ার তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়। তাঁর চেয়ারের প্রয়োজন নেই, চেয়ারের তাঁকে প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ভারতের রেলমন্ত্রিত্ব ছাড়তে তাঁর এক মিনিট সময় লেগেছিল।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক আসন হারানোর পর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল শনিবার তাঁর দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট বাড়ির দপ্তরে আয়োজন করেছিলেন নির্বাচনোত্তর একটি পর্যালোচনা বৈঠকের। এতে যোগ দিয়েছিলেন দলীয় নেতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার তৃণমূলের সভাপতি, পর্যবেক্ষক এবং বিজয়ী ও পরাজিত সাংসদ প্রার্থীরা। এই সভায় তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ পর্যালোচনা করেন, কেন এবার বিজেপির এই উত্থান হলো? তৃণমূলের কেন এই ভরাডুবি হলো? এই নিয়ে নেতৃবৃন্দ তাঁদের মতামত প্রকাশ করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব রাখেন। মমতাও এদিন নেতৃবৃন্দকে নতুন করে দায়িত্ব অর্পণ করেন।

পর্যালোচনা বৈঠকের পর মমতা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সত্যিই এবার মানুষের জন্য একটু বেশি কাজ করে ফেলেছি। সবাই দুই টাকা দরে চাল পাচ্ছে। চাষের জল পাচ্ছে। রাজ্যে লোডশেডিং নেই। চিকিৎসায় টাকা দিতে হয় না। তাই তো মনে হয়, এবার সরকারি কাজ বেশি করে ফেলেছি। তাই এখন থেকে দলের জন্য সময় বেশি দেব।’ বলেন, ‘চেয়ার আমার কাছে ইস্যু নয়, আমার চেয়ারকে প্রয়োজন নেই। চেয়ারের আমাকে প্রয়োজন। আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম শুধু দলের প্রধান হয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু দল সে কথা মানেনি।’

মমতা বলেন, ‘তৃণমূলের যাঁরা বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে বিজেপির হয়ে কাজ করেছে, তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আজ গণতন্ত্র টাকার কাছে বিকিয়ে গেল!’ তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা এর আগে কখনো হয়নি। এখন আর উন্নয়নের দাম নেই। পুলিশকে টাকা দিয়েছে বিজেপি। টাকা দিয়েছে সিপিএমকে। তৃণমূলের অনেককেও টাকা দিয়েছে বিজেপি। সিপিএম তো কোথায়ও লড়াই করেনি। পুরো ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। এই বিজেপি তৃণমূলের ২০০ পার্টি অফিস দখল করেছে। সব পার্টি অফিস দখলমুক্ত করতে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমি ইফতারে যাচ্ছি। এক শবার যাব। যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়া ভালো। বিজেপি এবার ধর্ম নিয়ে প্রচার করেছে। আমরা এই নিয়ে বহুবার অভিযোগ তুলেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। ওরাই এবার সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়েছে।’

মমতা এদিন মালদহের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সাবেক কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূরকে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান করার কথাও ঘোষণা দেন। তিনি উত্তরবঙ্গের সংগঠনকে জোরদার করার লক্ষ্যে দায়িত্ব দেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। আর মুর্শিদাবাদ, জঙ্গলমহল উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের দায়িত্ব দেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে।

সংবাদপত্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘এবার সংবাদমাধ্যমও বিজেপির হয়ে কাজ করেছে। আমি মনে করি, এখনো আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইতে নেতৃত্ব দেবে এই বাংলা। মানুষের ওদের আসল রূপটা জানতে একটু সময় লাগবে। একসময় এই বাংলা হিংসায় দেশে এক নম্বর থাকলেও আজ নেই।’


মমতা এদিন ঝাড়গ্রাম, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলা সভাপতি পরিবর্তন করেছেন। লোকসভায় দলনেতা করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উপদলনেতা করা হয়েছে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। আর চিফ হুইপ করা হয়েছে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন