যাদব মামলায় কে জিতল : ভারত না পাকিস্তান?

  18-07-2019 10:16AM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতীয় গুপ্তচর কূলভূষণ যাদবের মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিজে) বুধবার রায় ঘোষণা করার পর আইনবিদ, সাংবাদিক সম্প্রদায়ের সদস্যরা এ নিয়ে টুইট করতে থাকেন, বেশির ভাগই মনে করেন যে ফলাফল পাকিস্তানের অনুকূলেই গেছে। তবে ভারতীয় মিডিয়া তাদের পক্ষেই রায় গেছে বলে জোর দাবি করছে।

২০১৭ সালের ৮ মে ভারত কুলভূষণ ঘটনা নিয়ে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক আদালত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলা-পরবর্তী উত্তপ্ত পরিবেশে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে শুনানি করেন ভারত ও পাকিস্তানের কৌঁসুলিরা। ভারতের কৌঁসুলি হরিশ সালভে জানান, ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন করে ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পাকিস্তান। পাশাপাশি পাকিস্তান সামরিক আদালতের কাজের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে কুলভূষণকে দেশে ফেরত পাঠানোর আর্জি জানান সালভে। পাকিস্তান কৌঁসুলি খাওয়র কুরেশি পাল্টা সওয়ালে জানান, এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার এক্তিয়ারই নেই ভারতের। যাদব চরবৃত্তিতে যুক্ত ছিলেন বলেই ভারতীয় কূটনীতিকদের তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক অফিসার কুলভূষণকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান বাহিনী। পাকিস্তান দাবি করে, বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে মদত দেয়ার সময়ে কুলভূষণ গ্রেফতার হয়েছেন। পাকিস্তান সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ভারত পাল্টা দাবি করে, ইরানে কুলভূষণের ব্যবসা আছে। তাকে সেখান থেকে অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের ডন পত্রিকা জানায়, রায়ের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি এটিকে পাকিস্তানের জন্য জয় বলে জানিয়ে গুপ্তচরের হেফাজতে থাকা নিয়ে বিভ্রান্তি অবসান করে বলেন, যাদব পাকিস্তানেই থাকবেন এবং দেশের আইন অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করা হবে।

তিনি বলেন, কমান্ডার যাদব থাকবেন পাকিস্তানেই। তার সাথে পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী আচরণ করা হবে। এটা পাকিস্তানের জন্য জয়।
আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও কোর্টিং দি ল’-এর প্রতিষ্ঠাতা তৈমুর মালিক মামলাটির চমৎকার সারাংশ টেটে বলেন, বিষয়টি এখন পাকিস্তানের আদালতের ওপর নির্ভর করছে।

দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন উপদেষ্টা রিমা ওমর বলেন, যাদবকে মুক্তি প্রদান ও ভারতে ফেরত দেয়ার নয়া দিল্লির আবদেন আদালত মঞ্জুর করেনি।

তিনি বলেন, আদালত ভারতের বেশির ভাগ আবেদনই প্রত্যাখ্যান করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সামরিক আদালতে দেয়া যাদবের শাস্তি বাতিল, তার মুক্তি ও ভারতে নিরাপদ হস্তান্তর।

সাংবাদিক মুবাশ্বির জাইদি বলেন, সীমান্তের অপর পাড়ের লোকজন না বুঝেই আনন্দ করছে।

তিনি বলেন, সীমান্তের ওপারের সবাই বলছে যে আদালত পাকিস্তানি রায়কে স্থগিত করেছে। আসলে তা নয়। বরং আন্তর্জাতিক আদালতটি রায় পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে।

সাংবাদিক তালাত হোসাইন বলেন, এই রায় ভারতের জন্য পরাজয়। কারণ এখন পাকিস্তান তার নিজস্ব পন্থাতেই মামলাটি পরিচালনা করতে পারবে।
তিনি বলেন, দিল্লি পরাজিত হয়েছে। আইসিজে ভারতের প্রধান প্রধান দাবি নাকচ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আদালত বাস্তবে স্বীকার করে নিয়েছে যে যাদব গুপ্তচর। আর পাকিস্তানকে কনস্যুলার সুযোগ দিয়ে নিজস্ব পন্থায় বিচার করতে বলেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এই রায়কে বিরাট বিজয় হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, হেগ থেকে পাওয়া খবরে মনে হচ্ছে আদালত কেবল যাদবকে খালাস দিয়ে ফেরত প্রদানের ভারতীয় আবেদনই খারিজ করে দেয়নি, সেইসাথে পাকিস্তানের আদালতের রায়ও সমুন্নত রেখেছে। আসলেই এটি একটি বিশাল রায়। দারুণ লড়াই করার জন্য পাকিস্তানের আইনি দলকে অভিনন্দন।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক ফাহদ হোসাইন এই রায়কে পাকিস্তানের জন্য খুব খারাপ নয় এবং ভারতের জন্য বেশ মন্দ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, আইসিজের রায়ে বলা হয়েছে, ১. যাদবকে মুক্তি দেয়া হবে না, ২. তার রায় বাতিল করা হয়নি, ৩. তার ফাঁসির রায় বহাল আছে, ৪. তাকে কনস্যুলার সুযোগ দেয়া হবে, ৫. তার রায় পুনর্বিবেচনা করা হবে।

এতে বোঝা যাচ্ছে যে কনস্যুলার সুবিধা ছাড়া ভারতের সব আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

সিনিয়র সাংবাদিক ও গ্রন্থকার নাসিম জেহরা বলেন, রায়ে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে যাদব একজন গুপ্তচর। আর সামরিক আদালতের রায়কে পাকিস্তানি আদালতে পুনর্বিবেচনা করতে বলার মাধ্যমে ভারতের মুখ রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্য দিকে ভারতীয় মিডিয়া দাবি করছে যে এই রায় পুরোপুরি তাদের পক্ষে গেছে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়, পাকিস্তানে ভারতের হয়ে চরবৃত্তিতে অভিযুক্ত কুলভূষণ যাদবের মামলায় বড় জয় পেল ভারত। পাকিস্তান সামরিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত। সেই রায় পুনর্বিবেচনার আগে পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি ভারতীয় কূটনীতিকদের যাদবের সঙ্গে দেখা করতে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে দ্য হেগের আদালত।

১৬ সদস্যের বেঞ্চের ১৫ জন সদস্য এই রায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনা বিচারপতিও। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন কেবল পাকিস্তানি বিচারপতি তাসাদুক হুসেন জিলানি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন