কাশ্মীরি নারীদের ভোগ করতে মরিয়া ভারতের বিকৃতমনা পুরুষেরা

  10-08-2019 04:34PM

পিএনএস ডেস্ক : অধিকৃত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদাদানকারী ৩৭০ ধারাটি গত ৫ আগস্ট তুলে নিয়েছে মোদি সরকার। এর আগে অবশ্য উপত্যাকার ওপর ১৪৪ ধারা আরোপ করে সেখানকার বাসিন্দাদের মূলত ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে ভারত। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে লাখ লাখ সেনা। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, বাজারঘাটসহ সবকিছু। এ অবস্থায় কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের অবস্থা যে কতটা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু এসব খবর ছাপিয়ে ভারতের সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে ভারতীয় পুরুষদের বিবৃত মানসিকতা।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ায় খুশিতে নাকি বোগল বাজাচ্ছে ভারতীয় পুরুষরা। তারা নাকি একে কাশ্মীরের সুন্দরী নারীদের এতদিন পর ভোগ করার সুযোগ হিসেবেই দেখছে। তাই বুঝি অমিত শাহের এই ঘোষণার পরপরই গুগলে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ করতে শুরু করেছেন ভারতীয় পুরুষেরা। কেবল সাধারণ পুরুষ নয়, বিভিন্ন নেতা এমনকি খোদ মন্ত্রী পর্যন্ত কাশ্মীরি নারীদের বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। আর নিজেদের এসব বিকৃত বাসনা গোপন করার কোনো চেষ্টাই তারা করেননি। বরং জন সমাবেশে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ঘোষনা করেছেন।

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার শুক্রবার এক জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমাদের পথের কাঁটা সরে গেছে। এখন কেবল বিহার থেকে নয়, আমরা এখন কাশ্মীর থেকেও মেয়ে আনতে পারবো।’

হরিয়ানার বিকৃতমনা মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার

মজার কথা হচ্ছে, তিনি ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’র মত একটি নারীবান্ধব কর্মসূচিতে গিয়ে নারীদের বিরুদ্ধে এত বড় অপমানজনক কথা বলেছেন।

এখানে বলে রাখা ভালো, মেয়েভ্রণ হত্যার কারণে ভারতের এই রাজ্যটিতে নারীদের সংখ্যা খুব কম। প্রতি এক হাজার পুরুষের বিপরীতে সেখানে মাত্র ৮৫০ জন নারী রয়েছে। তাই হরিয়ানার পুরুষেরা পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে মত পশ্চাতপদ রাজ্যগুলো থেকে বিয়ের নামে নারী যোগাড় করে থাকে।

এর আগে বিজেপি নেতা বিক্রম সাইনি তার দলের নেতা-কর্মীদের কাশ্মীরে গিয়ে জমি ও নারীদের ওপর দখল নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তিনি মোদি সরকারের ওই বিতর্কিত ঘোষণার পরদিনই কাশ্মীরের মুজাফফরনগরে গিয়ে বলেন, ‘মোদিজীকে ধন্যবাদ। তিনি আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন। এ আনন্দে ড্রাম বাজাচ্ছে গোটা ভারত। বিজেপিতে অবিবাহিত কর্মীরা, যারা এতদিন ধরে কাশ্মীরের সুন্দরী নারীদের বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে, তারা এখন নির্ভয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। তোমরা সবাই কাশ্মীরে যাও এবং সেখানকার সুন্দরী নারীদের বিয়ে করো। একই সঙ্গে সেখানকার জমাজমির মালিক হও।’

বিজেপি নেতাদের এসব বিবৃতির প্রেক্ষিতে গুগলে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ খোঁজার যে ট্রেন্ড দেখা গেছে। বলাবাহুল্য এই ঘটনা ভারতীয় পুরুষদের ‘ধর্ষণকামী’ বিকৃত মানসিকতারই’ প্রমাণ বহন করে। এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ ভারতের কিছু সংখ্যক নারী নেত্রী।

#ইন্ডিয়ামিটু’র সমন্বয়ক ও সাংবাদিক ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জি বলেন, ‘এরা ধর্ষণকামী পুরুষ! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুরুষের যুদ্ধক্ষেত্রে টার্গেট হয়েছে নারীদেহ। কাশ্মীরি মেয়েদের নিয়ে বিজেপি বিধায়কের সবশেষ মন্তব্য সেই বিষয়টির প্রমাণ বহন করছে।’

বিজেপি বিধায়কের মন্তব্য এবং অনলাইনে ‘কাশ্মীরি গার্ল’ লিখে খোঁজার বিষয়টিকে সরাসরি ‘নারী অবমাননা’ বলছেন নয়াদিল্লির সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নারী অধিকার নেত্রী মিহিরা সুদ। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের নারীরা যুদ্ধের গণিমতের মাল নন। তারাও অন্যদের মতো মানুষ, মতামতের অধিকার তাদেরও আছে।’

বিষয়টিতে চরম ক্ষুব্ধ কিছু মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘স্মার্টফোন হাতে যারা এই ধরনের গুগল সার্চ করছেন, তারা আসলে হরিণের চামড়া গায়ে দেওয়া নেকড়ে।’

তবে ভারতীয় নেতাদের এসব বিকৃত বিবৃতি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কাশ্মীরি নেতার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সম্ভবত, ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ওই অঞ্চলটির যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকায় এসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এখনও তাদের কানে যায়নি।

প্রসঙ্গত, ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত এই উপত্যকার নারীদের রূপ ও গুণের খ্যাতি রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী এই রাজ্যের মেয়েরা। কেবল এশিয়া নয়- সাগরের মত নীল চোখ, আপেলের মত গায়ের রং আর মিষ্টি হাসি আর ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কল্যাণে তারা সবার মন জয় করে নিয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন