মরদেহ নিয়ে টানাপড়েনে অস্বস্তিতে আসামের বিজেপি সরকার

  17-10-2019 11:29AM


পিএনএস ডেস্ক: ‘অবৈধ বিদেশি’ নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করার পর আসামের একটি ডিটেনশন ক্যাম্পে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর পর পরিবারের লোকেরা মরদেহ নিতে অস্বীকার করায় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আসাম সরকার। সূত্রে খবর অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারকে দিয়েই এই মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করা হবে। এর আগে ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর তদন্তের দাবি জানিয়ে সরকারকে স্মারকলিপি দিয়েছে একটি বাঙালি শিক্ষার্থী সংগঠন।

পুলিশ সূত্রে খবর, গুয়াহাটির সোনিতপুর জেলার আলিশিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী দুলাল চন্দ্র পাল। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর থেকেই তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপরই তাকে ভর্তি করানো হয় গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত রবিবার সেখানেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালে থাকাকালীন ডায়াবেটিস, কিডনি ও মানসিক রোগেরও চিকিৎসা করা হয়। গ্রেফতারের সময় মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন বলেও জানা গেছে।

আর দুলালের মৃত্যুর পরই শুরু হয়েছে মরদেহ নিয়ে টানাপড়েন। এই মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি মৃতের পরিবারের সদস্যরা। সেই মরদেহ নিতে অস্বীকার করে উল্টো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তারা বলেছে, মৃত ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হয়, তবে সেই মরদেহকে সেদেশেই পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। পরিবারের এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে রাজ্যটির বিজেপির সরকারও।

দুলাল চন্দ্র পালের বড় ছেলে আশিস পাল জানান, রাজনীতিবিদ ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত আমাদের বাড়িতে আসছেন এবং মরদেহ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। কিন্তু আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে লিখিতভাবে বাবাকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ঘোষণা দিতে হবে।

তিনি আরও জানান, ফরেনারস ট্রাইব্যুনাল আমার বাবাকে বিদেশি হিসাবে ঘোষণা দেয়। সরকারকে এর সত্যতা খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু সরকার তার মরদেহ আমাদের হাতে তুলে দিতে চাইছে কেন? সরকার বরং বাবার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিক।

দুলালের ভাইপো সাধন পাল বলেন, মঙ্গলবার পুলিশের সদস্যরা আমাদের বাড়ি এসে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় নথিতে স্বাক্ষর করতে বলেন। ওই নথিতে দুলাল-কে একজন ‘বিদেশি’ হিসাবে উল্লেখ করা ছিল এবং ঠিকানায় কোন কিছুর উল্লেখ ছিল না। আমি তাদের বলি যে প্রথমে কাকার ঠিকানা লিখতে হবে। তিনি যদি অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক হন, সেক্ষেত্রে তার মরদেহ বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশ আমাদের কাছে কেন আসছে?

সাধন আরও জানান, আসামে সদ্য প্রকাশিত এনআরসি চূড়ান্ত তালিকায় ওর ছেলে ও পরিবারের সকলের নাম আছে। এমনকি ১৯৬০ সাল থেকে জমি সম্পর্কিত নথিও আছে।
মঙ্গলবারই পরিবারের সাথে দেখা করেন আসামের কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রিপুন ভোরা। তিনি জানান, দুলাল পালকে বিদেশি হিসাবে অভিযোগ করায় তাদের পরিবারের সদস্যরা সেই মরদেহ নিতে রাজি হচ্ছে না।
স্থানীয়রাও দাবি তুলেছে মরদেহ হস্তান্তরের জন্য চাপ না দিয়ে বিজেপি সরকারের উচিত দুলাল পালের নাগরিকত্বের পরিচয়ের সত্যতা খুঁজে বের করা।

আর পাল পরিবারের এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই স্থানীয় প্রশাসনও পড়েছে বিপাকে। শোণিতপুর ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং জানান, এটা সত্য যে ওই মরদেহ তার পরিবার নিতে অস্বীকার করেছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো ওই পরিবারকে বোঝানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে অনড়।

ডেপুটি কমিশনার আরও জানান, পরিবারের সদস্যরা দাবি তুলেছেন যে দুলাল পালকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হলেই তারা মরদেহ হাতে নেবেন। কিন্তু ওই বিষয়টি আমার এখতিয়ারে নেই। কারণ ফরেন ট্রাইব্যুনালেই তাকে বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রশাসনের নিজের উদ্যোগে ওই মরদেহ দাহ করা খুব সহজ কাজ নয় বলেও মানছেন তিনি। মানবেন্দ্র সিং জানান, দুলাল পাল ভারতীয় নাগরিক নন। আমি তার সৎকার করার অনুমতি দিতে পারি না। পরিবারকেই ওই মরদেহ নিতে হবে।

বিদেশি নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত নাগরিকদের রাখার জন্য বর্তমানে আসামে ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে এবং তার সবকয়টি রয়েছে কারাগারের মধ্যে। সবমিলিয়ে এই ক্যাম্পগুলিতে রয়েছে প্রায় এক হাজার জন। কিন্তু শুধু অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের জন্য গোয়ালপারা জেলার মাটিয়াতে বিশালাকারে তৈরি হচ্ছে সপ্তম ডিটেনশন সেন্টার।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০১১ থেকে গত কয়েক বছরে ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন