ভারতে বাবা-ভাই নিলামে তুলে বেচে দিল মেয়েটিকে!

  02-11-2019 05:47PM

পিএনএস ডেস্ক :মেয়েটির বয়স সবে ১৫ বছর। অথচ সে যার সঙ্গে বসবাস করে তার বয়স ৫৭ বছর। বৃদ্ধ এক লোক কীভাবে এত ছোট একটি মেয়ের স্বামী হতে পারে? যাই-হোক লোকটি প্রতি রাতে নেশা করে এসে মেয়েটিকে বেধরক পিটিয়ে যৌনবাসনা মেটাতেন। অতঃপর সকাল হলেই বৃদ্ধ ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতেন মেয়েটিকে ঘরে বন্দী রেখে। এক দিন কিংবা দুই দিন নয় প্রতিদিনের দৃশ্য এমনই ছিল।

জানা যায়, মেয়েটির নাম দুর্গা। প্রতি রাতে তাকে যিনি পিটিয়ে আহত করেন তিনি কিন্তু তার স্বামী নন। দুর্গাকে কিনে এনেছেন লোকটি। অবাক হচ্ছেন? সত্যি এটাই। আর তাইতো পণ্য সামগ্রীর মত তাকে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো মেরে তো আবার কখনো যৌন বাসনা মিটিয়ে। এবার তবে জেনে নিন গায়ে কাঁটা দেয়া দুর্গার জীবনের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে-

ভারতের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা দুর্গা। নিলামের হাট থেকে ওই বৃদ্ধ তাকে মাত্র চল্লিশ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে আনেন। এরইমধ্যে এগারো মাস শেষ পার হয়েছে। আর এক মাসের ব্যবধানে দুর্গাকে তিনি পুনরায় আরেক জনের কাছে বিক্রি করে দেবেন। এবার তবে জেনে নিন কোন অপরাধে দুর্গা প্রতি রাতে মার খেতেন? কারণ এতো দিনেও কেন সে মা হতে পারেনি? এটাই তার অপরাধ।

শুনলে আরো আশ্চর্য হবেন যে, দুর্গাকে তার বাবা ও ভাই মিলে নিলামের হাঁটে বিক্রি করেন। শুধু তাকেই নয় গ্রামের অনেক মেয়েকেই তারা এভাবে বিক্রি করেছেন। নিজ কন্যা বা নিজ বোনকে হাঁটে তুলে নিলামে হাঁক ছেড়ে দরদাম করে তারা বিকিয়ে দেন নিজেদের সম্মান। এমনকি নিলামের কাগজপত্র সহ চুক্তিনামাও ঠিক করে তার দেয় ভাই ও বাবা। কি বর্বর সমাজ ব্যবস্থা?

হাঁটের গরু, ছাগলের মত মেয়ের দাঁত দেখা থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখে শুনে পরে দাম ঠিক করা হয়। আর যদি মেয়ে সুন্দরী হয় তবে তো দামের বাজারটাও চড়া। সেখানে নারীর মতামতের কোনো মূল্য দেয়া হয় না। বারো বছরের শিশুকে বিক্রি করে দেয়া হয় সত্তর বছরের অর্ধমৃত এক বৃদ্ধের কাছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এভাবে প্রকাশ্যেই চলে নারী নিলামের হাঁট। আর এ হাঁট প্রশাসনের নাকের ডগার ওপরে বসে তাদের ছত্র ছাঁয়ায় বুক ফুলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

আইন-পুলিশ-সমাজ-রাষ্ট্রের সামনেই চলছে এসব অপকর্ম। এমনকি নারীর ওপর এমন ভয়াবহ নির্যাতনের জন্য নেই কোনো অপরাধবোধ। মেয়েরাও যেন এই বিষয়টিকে স্বাভাবিকই মনে করে! তেমনই এক জায়গা মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়ার ডিভিশনের শিবপুরি জেলা। এখানে টাকার বিনিময়ে মেয়েদের কয়েক মাস বা বছরের জন্যে ভাড়া নেয়া যায়। এই নিন্দনীয় কাজটিকে ‘ধাদীচা প্রথা’ বলা হয়। ভয়ানক ব্যাপার হলো, প্রকাশ্য দিবালোকে খোলা বাজারে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দরদাম চলতে থাকে!

রীতিমতো দৈনন্দিন সামগ্রীর মতোই গ্রামের বাজারে নিলামে তোলা হয় মেয়েদের। গ্রামের যে সব ধনী ব্যক্তিদের স্ত্রী অথবা প্রেমিকা নেই, তারা সাময়িক সময়ের জন্যে মেয়েদের ভাড়া নিতে পারেন মাত্র কয়েক হাজার টাকায়। এখানেই শেষ নয়, পুরো বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য ও তথাকথিত আইনি করার জন্যে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি সই করা হয়। চুক্তি শেষ হলে তা আবার নবায়নও করতে পারেন সেই সব ধনী পুরুষরা। যে যত বেশি টাকা দেবেন, তার সঙ্গে তত বেশি দিন একজন মেয়েকে থাকতে হবে।

তবে শুধু মধ্যপ্রদেশই নয়, ভারতের গুজরাটেও এই ধরনের প্রথার প্রচলন রয়েছে। ২০১৭ সালে এমনই এক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে। ইন্দোরের এক ব্যক্তি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে বিক্রি করে দেন ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে। অসংখ্যবার ধর্ষণের পর তাকে আরো একবার বিক্রি করে দেয়া হয় শিবপুরি জেলার এক লোকের হাতে। কোনো রকমে সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় ওই নারীর স্বামীকে।

ভারতের এসব এলাকায় এখনও আধুনিক জীবনের ছোঁয়া লাগেনি। এসব জায়গায় কন্যা ভ্রুণ হত্যা করা হয় ব্যাপক হারে। মেয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় একই পরিবারের একাধিক ভাই একজন মেয়েকেই বিয়ে করেন! অন্য জেলা থেকে অপহরণ করে এনেও এসব জায়গায় নারীদের বিক্রি করা হয়। এসব মেয়ের স্বাধীনতা তো দূরের কথা, শারীরিক-মানসিক আর যৌন নির্যাতন করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। পুলিশও এসব ব্যাপারে খুব একটা নাক গলাতে চায় না! তাই প্রকাশ্যেই হয়ে চলছে এমন জঘন্য অপরাধ। যার শেষ কোথায়, কেউ জানে না!

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন