মিয়ানমারের বর্বরতার বিরুদ্ধে কথা বলা কে এই আবু বকর?

  12-12-2019 04:31AM

পিএনএস ডেস্ক:গত কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নিষ্ঠুরতা করে পার পেয়ে গেছে মিয়ানমার। কখনোই আইনের তোয়াক্কা করেনি। এবারই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে গেছে আফ্রিকার ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গাম্বিয়া। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারকে দোষী প্রমাণিত করার চেষ্টায় গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। গাম্বিয়ার মামলার কারণে এরই মধ্যে প্রথম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে।

তিন দিনের এই শুনানি শেষ হবে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) প্রথম দিনের শুনানিতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে গাম্বিয়ার আইনি দল।

এই দলের নেতৃত্বে আছেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবু বাকার তাম্বাদৌ। শুনানির প্রথম দিন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবু বাকার তাম্বাদৌ আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়ানমারকে এ রকম নির্দয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে বলুন। তাদের বর্বরতা বন্ধ করতে বলুন, যা আমাদের সবার বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। মিয়ানমারকে তাদের নিজেদের লোকদের ওপর গণহত্যা চালানো বন্ধ করতে বলুন।’

মূলত আবু বাকারই মিয়ানমারের গণহত্যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন। এ কারণে তাকে নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।

আবু বাকার তাম্বাদৌ গাম্বিয়ান রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটির বিচারমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর আগে কাজ করেছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা’তে। গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী দেশটির রাজধানী বাঞ্জুলের হাইস্কুলে পড়ালেখা করেছেন।

এরপর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইক থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন। পরবর্তীতে সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন তিনি।

আবু বাকার ৬টি ভাষায় কথা বলতে পারেন। এর মধ্যে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা অন্যতম। আবু বাকার তাম্বাদৌ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গেছেন। পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের বিষয়টিকে রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।

ইসলামি সহযোগিতা সংস্থায় (ওআইসি) কর্মরত ওই দুই দেশের কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে জানান, নিজের দেশে ২২ বছরের স্বৈরশাসন, রুয়ান্ডার গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের আদালতে কাজের অভিজ্ঞতা আর সবার শেষে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়ার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন।

নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা অতীতে দুই দফায় জাতিসংঘে তাঁর দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। খুব স্বাভাবিকভাবে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানতেন। ফলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনিও রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় তাঁর দেশের ভূমিকা রাখার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকেই এ সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আর আলোচনায় থেকেছে গাম্বিয়া। তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নেওয়ার বিষয়টিও যে গাম্বিয়া ভাবছে তা বাংলাদেশকে জানিয়েছে দেশটি।

গত বছরের মে মাসে ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেন। ঢাকায় বৈঠকে বসার আগে তিনি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন।কাজেই মিয়ানমারকে আদালতে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত সপ্তাহে তাদের এক বিশ্লেষণে বলেছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইয়াহিয়া জামেহর ২২ বছরের স্বৈরশাসনের সময়ের নেতিবাচক ছবি আর রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মারি তামবাদু মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন