গণহত্যার দায় এড়াতে পারে না মিয়ানমার: আইসিজে

  23-01-2020 04:06PM

পিএনএস ডেস্ক: নেদারল্যান্ডসে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যায় আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়ার করা মামলার অন্তর্বর্তী আদেশ পড়ছেন বিচারক। আদেশের শুরুতেই বিচারক বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না মিয়ানমার। এসময় মামলা বাতিলের মিয়ানমারের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।

হেগের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) রায় পড়া শুরু করেন আদালতের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ। আইসিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। রায় ঘোষণায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে বলে খবরে জানানো হয়।

বিচারক প্রথমেই বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এখনও চলছে নিপীড়ন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সরকার। এসময় মিয়ানমারের প্রতি তাদের সুরক্ষা দেয়ারও আদেশ দিয়েছে বিচারক।

এই মামলায় মিয়ানমার আদালতকে যথাযথ সহযোগিতা করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন বিচারক। এসময় মামলা বাতিলের জন্য মিয়ানমার যে আবেদন করেছে সেটিও খারিজ করে দেন বিচারক। বিচারক আব্দুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ স্পষ্ট জানান, এই মামলা নিয়ে মিয়ানমার যে আপত্তি করেছে সেটি গহণযোগ্য নয়।

এর আগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা ওই মামলার শুনানি হয় গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর। তারপর ১৭ জন বিচারক গোপন বৈঠক করেছেন।

এই রায় শোনার জন্য গোটা বিশ্ববাসী বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। গাম্বিয়া আর্জিতে ৬টি অন্তর্বর্তী আদেশের জন্য আবেদন করেছিল। তবে গাম্বিয়ার আর্জির ছয়টি পদক্ষেপের সবগুলোর বিষয়ে আদালতের আদেশ দেয়ার সম্ভাবনা কম। গণহত্যা বন্ধসহ রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় জরুরি যেসব পদক্ষেপ চাওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে আদেশ আসতে পারে।

এখানে উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হতে বহু বছর সময় লাগে। তাই মামলা দায়েরকারী মূল মামলার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিকার চেয়েও আবেদন করেন। যার প্রেক্ষেতে এই অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে রাজি হয়েছে আইসিজে।

এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবু বকর এম তাম্বাদুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক পোস্টে ২৩ জানুয়ারি আইসিজে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় জরুরি পদক্ষেপ চেয়ে করা মামলার রায় জানাবেন বলে জানান।

আইসিজের এ ঐতিহাসিক আদেশের প্রতি ঢাকার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এ আদেশের ওপর নির্ভর করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ঢাকার ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা হবে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ওই ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। এ মামলার ওপর গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে শুনানি হয়। সেখানে মিয়নিমার নেত্রী অং সান সু চি নিজের দেশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের ওপর কোনো নির্যাতন চালায়নি। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার মুখেই নাকি লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচিত হয়েছেন এক সময় শান্তিতে নোবেল পাওয়া সু চি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন