সেনাবাহিনীতে নারী নেতৃত্বের পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়

  17-02-2020 02:52PM


পিএনএস ডেস্ক: পুরুষদের পাশাপাশি এবার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন নারীরাও। এক ঐতিহাসিক রায়ে সেনাবাহিনীতে নারীদের নেতৃত্বের পক্ষেই সায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। নারী কমান্ডারের প্রসঙ্গে আজ সোমবার ওই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

ভারতের শীর্ষ আদালতের এই অনুমোদনের ফলে এবার সেনাবাহিনীর নারীও তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের মতোই নেতৃত্ব দিতে পারবেন এবং নিজের ক্যারিয়ারকে আরও ভালও জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নারীদের শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে তাঁদের অধিকারের কোনও যোগসূত্র নেই। প্রয়োজনে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয় যে, সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন কোনও নারী সেই মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি ভারতীয় সেনাদের মধ্যে। কেন্দ্রের এই যুক্তিকে বৈষম্যমূলক ও বিরক্তিকর আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে এবার সময় হয়েছে এই ধরণের
'চিরাচরিত ভাবনা' থেকে বেরিয়ে আসার।

সরকার পক্ষের আইনজীবী মামলার শুনানিতে বলেন, এ দেশে এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের নেতৃত্বের জন্যে ঠিক উপযুক্ত নয়। রণক্ষেত্রে নারীদের কম্যান্ডিং অফিসার হিসেবে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জওয়ানরাও ততটা প্রস্তুত নন। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে শুরু করে নানা অসুবিধা রয়েছে নারীদের।

সম্প্রতি কম্যান্ডিং অফিসারের পদের জন্য দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিলেন কয়েকজন নারী। সেই আবেদনের বিরোধিতায় সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে কোনও র্যা ঙ্কেই পুরুষদের আধিপত্য বেশি। এই সব জওয়ানরা সাধারণত গ্রামীণ এলাকা থেকে আসেন। সংস্কারবদ্ধ মানসিকতার কারণে কোনও নারী কম্যান্ডিং অফিসারকে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়াও অন্য কারণও রয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় অথবা কোনও দুর্গম জায়গায় পোস্টিংয়ের সময় যে শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তার দরকার, সেটা নারীদের ক্ষেত্রে খুব একটা থাকে না। তাই কমব্যাট ফোর্সে নারীদের না নেওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।

শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগির বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সওয়াল করেন প্রবীণ আইনজীবী আর বালাসুব্রহ্মনিয়ম ও আইনজীবী নীলা গোখেল।

কেন্দ্রীয় আইনজীবীদের এই যুক্তি খারিজ করে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগি বলেন, প্রশাসনের মানসিকতার বদল দরকার। তবেই সেনাবাহিনীতে নারী-পুরুষ এই বৈষম্য দূর হবে। কম্যান্ডিং অফিসার শুধু নয়, সেনাবাহিনীর অন্যান্য পদেও নারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকা উচিত নয়। কেননা নারীরা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।

সেনাবাহিনীর শর্ট সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) ১৪ বছর চাকরি করা নারীদের স্থায়ী কমিশনের বিকল্প দেওয়া হবে কিনা এই প্রসঙ্গও তোলা হয় আদালতে।

এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এসএসসিতে ১৪ বছরের চাকরির সময়কালে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, সকল নারী অফিসারকে স্থায়ী কমিশন দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের আগস্টে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছিলেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর নারী অফিসারদের জন্যে এবার শর্ট সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে স্থায়ী কমিশন নেওয়ার বিকল্প রাখা হবে।

শর্ট সার্ভিস কমিশন অনুসারে, একজন নারী অফিসার ১০-১৪ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি নারী অফিসারদের সেনা সার্ভিস কর্পস, অর্ডিন্যান্স, সেনা শিক্ষা ক্ষেত্র, বিচারপতি অ্যাডভোকেট জেনারেল, ইঞ্জিনিয়ার, সিগন্যাল, গোয়েন্দা ও বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রেও নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন