ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পর মুক্তি পেলেন ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যাত্রীরা

  19-02-2020 02:47PM


পিএনএস ডেস্ক: জাপানের ইয়োকোহামায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়া প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস থেকে যাত্রীরা নামতে শুরু করেছে।

কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৫৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ভাইরাস সংক্রমিত হয়, যা চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে একক কোনো জায়গায় ভাইরাস সংক্রমিতদের সবচেয়ে বড় জমায়েত।

জাহাজের যাত্রীরা বেশ কয়েকদিন ধরে প্রমোদতরীর ভেতরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থার কঠিন পরিস্থিতি বর্ণনা করছেন।

জাহাজের ভেতরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

বুধবার প্রকাশিত হওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চীনে এখন পর্যন্ত দুই হাজার চারজন মারা গেছেন কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে।

চীনের মূল ভূখণ্ডে এখন পর্যন্ত ৭৪ হাজার ১৮৫ জনের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং আরো বেশ কয়েকটি দেশে আরো সাত শ' জনের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে এই ভাইরাস।

বুধবার হংকং জানায়, সেখানে ভাইরাস সংক্রমণে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্স, জাপান, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে একজন করে মারা গেছেন।

সোমবার চীন ৪৪ হাজার ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য নিয়ে বিস্তারিত এক গবেষণা প্রকাশ করেছে, যেখানে উঠে এসেছে যে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার আগে থেকে অসুস্থ এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি।

জাহাজ থেকে নেমে কোথায় যাচ্ছেন যাত্রীরা?
ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজ থেকে নামা যাত্রীরা জাহাজ থেকে নেমেই ইয়োকোহামা বন্দরে থাকা ট্যাক্সিতে করে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন।
যারা ভাইরাসে আক্রান্ত নয় এবং যাদের মধ্যে কোনো উপসর্গও প্রকাশিত হচ্ছে না, এরকম পাঁচ শ' জনের বুধবার ছাড়া পাওয়ার কথা। আগামী কয়েকদিনে আরো বহু মানুষের ছাড়া পাওয়ার কথা।

জাহাজে মোট তিন হাজার সাত শ' যাত্রী ছিলেন।

যাদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারা সংক্রমণের শিকার মানুষের সাথে কেবিনে ছিলেন - এমন ব্যক্তিদের অতিরিক্ত কোয়ারেন্টাইন করা হবে, কাজেই তারা জাহাজ ছেড়ে বের হতে পারবেন না।

ডায়মন্ড প্রিন্সেসে ৫০টিরও বেশি দেশের নাগরিকরা ছিলেন। বিবিসি সংবাদদাতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, এই যাত্রীরা সারাবিশ্বে ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন।

জাহাজটি কোয়ারেন্টাইন করা হলো কীভাবে?
প্রমোদতরীটিকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। এর আগে ভাইরাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়ায় ওই জাহাজ থেকে এক ব্যক্তিকে হংকং বন্দরে নামিয়ে দেয়া হয়।

যাত্রীদের শুরুতে তাদের নিজ নিজ কেবিনে আলাদা করে রাখা হয়, পরে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের ডেকে চলাফেরার অনুমতি দেয়া হয়।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা স্বত্ত্বেও জাহাজটিতে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়তেই থাকে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাহাজে ৫৪২ জন যাত্রী ভাইরাসে আক্রান্ত যাদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অনেক দেশ এরই মধ্যে তাদের নাগরিকদের আলাদাভাবে সরিয়ে নিয়েছে অথবা কিছুদিনের মধ্যেই সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।

সংক্রমণ বাড়লো কেন?
জাহাজটিকে কোয়ারেন্টিন করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞই।

কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের অধ্যাপক কেনতারো ইওয়াতা মঙ্গলবার এক ভিডিও পোস্ট করে জাহাজের পরিস্থিতিকে 'সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলাপূর্ণ' বলে মন্তব্য করেন।

জাহাজ পরিদর্শনের পর তিনি মন্তব্য করেন জাহাজে 'সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত' ছিল। কারণ সেখানে সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে সুস্থদের আলাদা করার ব্যবস্থা খুবই ত্রুটিপূর্ণ ছিল।

জাপানের কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাদের নিজেদের নেয়া ব্যবস্থার পক্ষেই সাফাই গেয়েছে। তারা বলেছে, অধিকাংশ সংক্রমণের ঘটনা কোয়ারেন্টাইন শুরু হওয়ার আগেই ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের যেসব নাগরিক ওই জাহাজ থেকে ফিরবে, তাদের আরো ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার ঘোষণা দিয়েছে সেসব দেশের কর্তৃপক্ষ।

দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, তারা তাদের দেশের নাগরিক ছাড়া ডায়মন্ড প্রিন্সেসের অন্য কোনো যাত্রীকে নিজেদের দেশে প্রবেশ করতে দেবে না।
সূত্র : বিবিসি

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন