দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার পরামর্শ

  24-02-2020 12:55AM


পিএনএস ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুন জেই-ইন রোববার বলেন, সপ্তাহ শেষে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৬০২ জনে দাঁড়িয়েছে। মারা গেছেন ছয়জন।

দেশটিতে বসবাস করা নাগরিকদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাস।

ঠিক কিছুদিন আগেও বিশ্ব গণমাধ্যমের চোখ ছিলো চীনের দিকে। কী ঘটছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে? প্রতিটি মুহূর্তের ঘটনার দিকে তাকিয়ে ছিলো গোটা বিশ্ব। ঘটনার বিষয়বস্তু এক হলেও দিক পরিবর্তন ঘটছে ঠিক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মত।

বিশ্বের সবচেয়ে মারণঘাতী করোনাভাইরাস বিস্তারে সবার কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে। চীনের পাশের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। চীনে যখন এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তখন থেকেই কড়া সতর্ক ছিলো প্রতিবেশী দেশটি।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের মতো, সব ধরনের সতর্কতা ডিঙিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায়ও প্রবেশ করে করোনাভাইরাস। যখন দুই একজনের মাঝে এই সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল, তখনো তেমন বড় ধরনের উদ্বেগ দেখা যায়নি।

হঠাৎ গত সপ্তাহ থেকে জ্যামিতি হারেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ভাইরাসটি। আর তখনই দক্ষিণ কোরিয়ার বুকে নিস্তব্ধতার ছায়া আর জনজীবনে আতঙ্ক নেমে আসে।

কোরীয় নাগরিকসহ সবার চোখে মুখে চরম উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের কালো ছাপ। দক্ষিণ কোরিয়াতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোরোনায় মারা গেছেন ছয়জন।

এই বাস্তবতাকে জরুরি পরিস্থিতি বলে বর্ণনা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সাই-কিয়ুন। দফায় দফায় মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বসছেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্বস্থ্য অধিদপ্তর।

এদিকে রাষ্ট্রপতি মুন জায়ে-ইন দক্ষিণ কোরিয়র সরকারকে প্রয়েজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া নির্দেশ দেন।

চীনে যেমন উহান শহরকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দেখা হচ্ছে, ঠিক তেমনি দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলীয় পাশাপাশি দুটো শহরকে— দেগু এবং চোংডোয় এই ভাইরাস ছড়ানোর সূত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই দুই শহরকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে এখন আর শুধু দেগু আর চোংডোতে সীমাবদ্ধ নেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার। পুরো কোরিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এটি। রাজধানী সিউলে সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬২ জনে, দেগুতে ১৪৪ জন, থোংইয়ং ৪৭ জন, গিমচন ৩২ জন, গোয়াংজু ৩১ জন, দেজনে ২৫ জন, ইনচন ৩৯জন। এছাড়াও অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাসটি।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কোরীয় সরকার। অসুস্থদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম, শয্যা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

স্থবির হয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের জনজীবন। অধিক প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউই বের হচ্ছেন না। গত দুদিন ধরে রাস্তায় মানুষজন নেই বললেই চলে। জনমানবশূন্য কোরিয়ার বাজারগুলো।

তিন সেনার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ায় সব সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শুধু তাই নয়, স্যামসাং-এর একটি কারখানাও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

স্যামসাং মেবাইল ডিভাইস ফ্যাক্টরিতে একব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে পুরো কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে মসজিদ, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির প্রশাসন।

এ দেশে চাকরি ও পড়াশোনার জন্য প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। এই পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও বড় ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কোরিয়স্থ সব বাংলাদেশিকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার জন্য বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়াতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। তিনি প্রবাসীদের সবসময় মাস্ক ব্যবহার করার জন্যও নির্দেশ দেন।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন