লকডাউন সংকটে ঝুঁকিতে ভারতের ১১ কোটি প্রবীণ

  01-04-2020 10:20PM

পিএনএস ডেস্ক : ভারতে লকডাউন চলাকালীন শহর ও গ্রামের ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। শহরে হাত বাড়ালেই সব মিলছে। গ্রামে ঠিক তার উল্টো। তবে ভারতের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের অবস্থা শোচনীয়। জরুরি সামগ্রী থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধটুকু জোগানোর কেউ নেই। বিশ্বজুড়ে করোনা-আতঙ্কের আবহে সবচেয়ে শঙ্কিত বয়স্ক নাগরিকরা। ভারতে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকের সংখ্যা মোটামুটি ১১ কোটি। অন্যদের মতো গৃহবন্দী রয়েছেন তারাও, যাদের বেশিরভাগই অসহায়। খবর ডয়চে ভেলের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বয়স্ক নাগরিকদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাদেরকে সার্বক্ষণিক ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শহরে প্রবীণদের সমস্যা ততটা না হলেও শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় নিঃসঙ্গ প্রবীণদের সমস্যার খবর আসছে। কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিচ্ছেন। তা সত্ত্বেও সরকারি উদ্যোগের দাবি উঠেছে।

এদিকে, সরকারের ঘোষিত ২১ দিন লকডাউনের জেরে জনশূন্য সড়ক। বন্ধ দোকানপাট, যানবাহন। স্বভাবতই বাড়ি থেকে বোরনোর জো নেই। বন্ধ হয়েছে মর্নিং ওয়াক। পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশার পাঠ চুকেছে। এমনকী, আসছেন না পরিচারিকাও। এর ফলে বয়স্ক নাগরিকদের অনেককেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যেমন, কেউ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারও জরুরি ওষুধের প্রয়োজন মিটছে না। কারও আবার পুষ্টিকর পথ্য না পেয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের।

অন্যদের পরিবারের যুব সদস্যরা বাজারে গিয়ে সামগ্রী কিনে আনতে পারছেন। কিন্তু, নিঃসঙ্গ অসহায় বয়স্ক মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাজারে বেরোতেই হচ্ছে। আর যাদের সেইটুকু সামর্থ্য নেই, তাঁরা হয় না খেয়ে অথবা আধপেটা খেয়ে দিন পার করছেন।

বিশ্লেষক সুজিত রায় জানিয়েছেন, এমন অনেকে রয়েছেন, যাদের একা বসবাস করতে হয়। তারা আসলে নিঃসঙ্গ। তাদের ছেলেমেয়েরা হয়ত লেখাপড়া অথবা চাকরিসূত্রে বিদেশে বা ভিন রাজ্যে থাকেন। এই সকল প্রবীণ মানুষের মধ্যে অনেকেরই শরীরে আগে থেকে অনেক রোগ বাসা বেঁধে রয়েছে। যেমন ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টরল, হার্ট ব্লকেজ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি। এদের নিয়মিত ওষুধ খেতেই হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয়। আবার এদেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তারা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। মূলত সমস্যায় পড়ছেন তারাই। বাড়ির কাছে দোকান নেই। দূরের হাটবাজারে যাওয়ার উপায় নেই। বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই ধরনের মানুষের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করা উচিত।

উল্লেখ্য, ভারতে ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ মানুষের বয়স ষাটের বেশি। অর্থাৎ ১১ কোটি মানুষ বয়স্ক নাগরিক। পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ৫৫ হাজার। তারা সকলেই এখন গৃহবন্দী। তারা বাজারে বের হতে পারছেন না। সরকার অনলাইন কেনাকাটায় ছাড় দিয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পুলিশি ধরপাকড় ও পণ্য সরবরাহকারীর অভাবে কার্যত অনলাইন কেনাকাটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছে বিগ বাস্কেট ও গ্রোফার্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে, বিগ বাজার, রিলায়েন্স ফ্রেশ-এর মতো সংস্থাগুলো ফোন নম্বর প্রচার করে বাড়ি বসে সামগ্রী পাওয়ার এক বন্দোবস্ত করেছিল। কিন্তু, তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন