অস্ট্রেলিয়ায় ৬০ পত্রিকার ছাপা বন্ধ, করোনা সংক্রমণের শঙ্কা?

  03-04-2020 06:26PM

পিএনএস ডেস্ক:করোনা ভাইরাসে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্বজুড়ে। এমন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ায় ৬০ টি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এসব পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার (১ এপ্রিল) দেশটির মিডিয়া গ্রুপ নিউজ করপোরেশন বলেছে, তারা ছাপার সংস্করণ বন্ধ করলেও অনলাইন সচল থাকবে। খবর বিবিসি।

ব্রিটিশ গণমাধ্য বিবিস এক প্রতিবেদ এ খবর দিলেও কোন কোন পত্রিকার ছাপা বন্ধ হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তালিকা প্রকাশ করে নি।

নিউজ করপোরেশন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মাইকেল মিলার বলেছেন, আজ (১ এপ্রিল) থেকে বন্ধ হয়ে গেছে অষ্ট্রেলিয়ার ৬০টি কমিউনিটি পত্রিকা। নিউজ কর্পোরেশন জানিয়েছে এপ্রিল থেকে নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, কুইন্সল্যান্ড এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় কমিউনিটির ৬০টি সংবাদপত্র ছাপানো স্থগিত করা হয়েছে।

মাইকেল মিলার আরও বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত আমরা হালকাভাবে এবং খুব সহজেই নেই নি। তিনি এমন সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এমনিতেই মিডিয়া খাত বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছে। পত্রিকা বিলিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞাপনে ধস নেমেছে। এতে এ খাত বড় ধরনের একটি আঘাত খেয়েছে।

এর আগে, ছাপা সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে, এরকম একটা ভয় তৈরি হয়েছে ভারতে। ফলে সেখানে সংবাদপত্রের বিক্রি কমেছে অনেকাংশ। সে কারণে, মুম্বাইয়ে বেশ কিছু সংবাদপত্র তাদের প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও বেশ কিছু পত্রিকার ছাপা সংস্করণ বের হচ্ছে না। তবে মুম্বাইয়ের সংবাদপত্রগুলি পয়লা এপ্রিলের আগে কাগজ ছাপবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কলকাতার সর্বোচ্চ পঠিত কাগজগুলোর একটি ‘বর্তমান’র কোনও মুদ্রিত সংস্করণ বের হচ্ছে না। বন্ধ হয়েছে আজকাল, গণশক্তি ইত্যাদি।

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় সংবাদপত্রগুলো হয়তো এই আশঙ্কাই করছিলেন। তাই শুরু বিজ্ঞাপন এবং খবরের মাধ্যমে মানুষের মনের এই ভয় কাটানোর নানা চেষ্টা করা হয়েছিল।

কলকাতায় সর্বাধিক পঠিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডি ডি পুরকায়স্থ বলেন, “যদিও আমরা বিজ্ঞাপন ও খবরের মাধ্যমে মানুষের মনে এই ভয়টা কাটানোর চেষ্টা করছি। যে এটার (পত্রিকার মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর) কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিই নেই। তা সত্ত্বেও একটা গুজব ছড়িয়েছে। এরকম কঠিন সময়ে তো আসল ভাইরাস যত না দ্রুত ছড়ায়, তার থেকে দ্রুত ছড়ায় গুজব।”

মি. পুরকায়স্থ বলছিলেন, তাদের আনন্দবাজার ও দ্যা টেলিগ্রাফ পত্রিকা দু’টি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ছাপা হয় এবং নিরাপদেই পরিবেশকদের কাছে পৌঁছে। তবুও বহু মানুষ নিজে থেকেই পত্রিকা নিতে চাইছেন না। নিজেরাই হকারদের নিষেধ করে দিচ্ছেন।

কিন্তু অধিকাংশ পাঠকের ভয়, মানুষ থেকে মানুষে যেমন ভাইরাসটি ছড়ায়। তেমনি যারা এগুলো বিলি করতে আসে তাদের কারও ভাইরাস থাকলে, তার থেকে পত্রিকার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস।

কলকাতার এক বাসিন্দা আনন্দ চ্যাটার্জী বলছিলেন, “সংবাদপত্র স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ছাপা হয়তো হচ্ছে, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটরের পরে সেটা বিভিন্ন জনের হাতধরে বিলি হচ্ছে আমাদের বাড়িতে, সেই প্রক্রিয়াটা কতটা নিরাপদ, কতটা জীবানুমুক্তভাবে সেটা করা হচ্ছে, সেটা তো আমরা জানি না। আর পত্রিকার মাধ্যমে ছড়াবে না, এটাও তো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।”

তিনি বলেন, “ছাপাখানা থেকে বের হওয়ার পর একটা পত্রিকা নানা জায়গা হয়ে তারপরে আমার বাড়িতে আসছে। এর মধ্যে কোনও জায়গা যে সংক্রমিত নয়, বা যে হকার কাগজ দিচ্ছেন, তিনি যে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন নি, তার কোনও গ্যারান্টি তো নেই। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাড়িতে পত্রিকা নেওয়া বন্ধ রেখেছি।”

আনন্দ আরও বলছিলেন, “কারেন্সি নোট বা প্যাকেট বন্দি খাবারের থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। জানি ওসব থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তবুও যতটা সম্ভব সংক্রমণ বাড়িতে ঢোকার পথ তো বন্ধ করতেই হবে।
আর কাগজও যেহেতু একটা সম্ভাবনা, তাই সেটাকে আপাতত বন্ধ রেখেছি। আর খবর জানার জন্য ওই সব কাগজের ইন্টারনেট সংস্করণ তো আছেই।”

সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে কি না? এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন এন্ড পাবলিক হেল্থ-এর পরিচালক মধুমিতা দোব বলেন, “সংক্রমণ ছড়ানোর একটা সম্ভাব্য মাধ্যম সংবাদপত্র অবশ্যই। কিন্তু আলাদা করে শুধু পত্রিকার ওপরে জোর দেওয়াটা ঠিক নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংক্রমিত রোগীর ড্রপলেট শুধু কাগজ কেন দরজার হাতল, চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার সহ অনেক জায়গাতেই পড়তে পারে। এখানে শুধু কাগজের ওপরে জোর না দিয়ে ওই সবকটি জিনিস হাতের সংস্পর্শে আসার পরেই হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।”

অর্থাৎ, সংবাদপত্র থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই, তা নয়। আর এই একই ভয় থেকে বহু মানুষ নিজেরাই কাগজ দিতে বারণ করে দিয়েছেন হকারদের। ফলে, হু হু করে কমছে কাগজের সার্কুলেশন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন