১১ সাপ্তাহ পর স্পেনের মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায়

  30-05-2020 02:04PM

পিএনএস ডেস্ক: দীর্ঘ আড়াই মাস থেকে ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম দেশ স্পেনে চলছে জরুরি অবস্থা। করোনাভাইরাসের প্রকোপে নাজেহাল দেশটিতে এতদিন থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল দেশটির সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ সকল সেক্টরের সব রকমের জনসমাগম। আর সেজন্য ১৩ মার্চ থেকে জারি হওয়া লকডাউনের কারণে এতদিন দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল মসজিদে নামাজ আদায়ে। দেশটির ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পুরো ১১ সাপ্তাহ ধরে বঞ্চিত ছিলেন জুম্মাসহ মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করা থেকে।

এমনকি গেল সপ্তাহে পালিত হওয়া মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ সবাইকে পড়তে হয়েছে নিজ নিজ ঘরে। আর সেজন্যই প্রচুর উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছিলেন দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠী, আবার কবে মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হবে, আর সবাই সঙ্গবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন সেই প্রত্যাশায়। অবশেষে সীমিত পরিসরে হলেও এদেশের মুসলামানদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে দেশটির কিছু অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু মসজিদ। কঠোর নিরাপত্তা বিধান বজায় রেখে ১১ সাপ্তাহ পর দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে মসজিদে মসজিদে আদায় হয়েছে জুম্মার নামাজ।

বিগত ২ সাপ্তাহ থেকে ক্রমাগত স্পেনের করোনার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মৃত্যুর হার কমার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে আক্রান্তের সংখ্যা। আর সেজন্যই দেশটির সরকার বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে শীতলতা এনেছে জরুরি অবস্থায়, যা ভাগ করা হয়েছে ৪টি ভিন্ন ধাপে। গত বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী সাপ্তাহের শুরুর দিন অর্থাৎ সোমবার থেকে দেশটির ৭০ ভাগ অঞ্চল চলে আসবে ২য় ধাপে। আর সরকারের এই শীতলতার কারণেই দেশটিতে বসবাস করা মুসলিম জনগোষ্ঠী সীমিত পরিসরে অল্প কিছু অঞ্চলে অনুমতি পেয়েছেন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের।

শুক্রবার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং পর্যটন নগরী খ্যাত বার্সেলোনায় বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা যায় শান্তিপূর্ণ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধান মেনেই পড়া হয়েছে পবিত্র জুম্মার নামাজ। মসজিদ কর্তৃপক্ষ সাধারণের জন্য আগেই নির্দেশনা দিয়েছিল সবাই মাস্ক পরে আসার জন্য, অন্যথায় ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সাথে সাথে সবাইকে নিজ নিজ জায়নামাজ নিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়। শহরটির বেশিরভাগ মসজিদে ওযুখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সবাইকে বাসা থেকে ওযু পড়ে আসার কথা বলা হয় আগেই। উল্লেখ্য দেশটির বেশিরভাগ মসজিদ মরক্কীয়ান, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত। বার্সেলোনায় অবস্থিত এরকম বেশ কিছু মসজিদে খবর নিয়ে জানা যায় এখনকার বেশিরভাগ মসজিদ গুলোতে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়, কোন কোন মসজিদে ৩ থেকে ৪টি জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। মূলতঃ স্বল্প পরিসরে মানুষ ভিতরে প্রবেশ করানোর জন্য এরকম ছোট ছোট করে জামাত আয়োজন করা হয়। একেকটা জামাতে মসজিদ ভেদে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন মুসল্লী অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। বাকিদের বাইরে দাঁড়িয়ে পরবর্তী জামাতের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মসজিদের ভেতরে চিত্রও গুলো ছিল সাধারণ দিনের চাইতে একদম আলাদা, প্রতি মুসল্লীর মাঝখানে ১ থেকে ২ মিটার দূরত্ব এবং সবাইকে মাস্ক পরে নামাজ পড়তে দেখা যায়। পাশাপাশি হ্যান্ডশেক এবং কোলাকুলি থেকে বিরত ছিলেন প্রত্যেকেই।

প্রসঙ্গত, স্পেনে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস, যাদের মধ্যে সিংহ ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। দীর্ঘ আড়াই মাস পর মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পেরে এখানকার বাংলাদেশী মুসলমানদের মাঝে অনেক স্বস্তির এবং খুশির আমেজ ফুটে উঠে। নামাজ শেষে অনেককেই ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা যায়। সবার চেহারার হাসি যেন নিজে থেকেই সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছিল সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর মসজিদের মনোরম পরিবেশে পবিত্রতার ছায়াতলে নিজেদের আত্মার শান্তি অর্জন করতে পেরে।

এদিকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদসহ আরও কিছু মুসলিম অধ্যুষিত শহরে এখনো মসজিদ খুলার নির্দেশনা আসেনি। তবে আগামী ১০ জুন থেকে দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলের মসজিদ, চার্চ, গির্জা, মন্দিরসহ ধর্মীয় উপসনালয়গুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হবে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন