যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় লকডাউনের কথা ভাবছেন স্টেট গভর্নররা

  11-07-2020 12:12PM


পিএনএস ডেস্ক: হারিকেনের মতো ভয়ঙ্কর আকারে বেড়েই চলছে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ। গত ১১ দিনের মধ্যে ৭ দিনই সংক্রমণের ভয়াবহতা আগের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। সর্বশেষ শুক্রবারও ৬৫ হাজার জনে সংক্রমিত হবার ঘটনায় আগের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় স্টেটসমূহে হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ-যা ভাবনারও অতীত।

একইভাবে এসব এলাকায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সংক্রমিত হয় ৫৯ হাজার ৮৮৬ জন। শুক্রবার তা ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। জর্জিয়া, ইউটাহ, মন্টানা, নর্থ ক্যারোলিনা, আইওয়া এবং ওহাইয়ো স্টেটে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় টেক্সাস, ফ্লোরিডা, আরিজোনা, জর্জিয়ার কিছু এলাকায় পুনরায় লকডাউনের কথা ভাবছেন সিটি ও স্টেট প্রশাসন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও একই পরামর্শ দিয়েছেন যে, লকডাউনের বিকল্প নেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে।

এপ্রিলের ২৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার ৭৩৮। তারপরই কমতে শুরু করেছিল সর্বত্র। যদিও দৈনিক গড়ে ২০ হাজার জন করে সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপে যেসব স্টেটে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে, সেগুলোতে জুনের মাঝামাঝি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু হরে।

চলতি সপ্তাহে আলাবামা, আরিজোনা, ফ্লোরিডা, মিসিসিপি, নর্থ ক্যারোলিনা, সাউথ ডাকোটা, টেক্সাস এবং টেনেসিতে প্রতিদিনই সংক্রমণের সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। সে সময়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সে সংখ্যা ছিল ৬০৮। অথচ জুলাইয়ের শুরুতে সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৪৭১ জন। যদিও মধ্য এপ্রিলে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২২০০ জনেরও বেশি ছিল সারা আমেরিকায়। সে সময়ে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়াসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্টেটসমূহে মহামারির আকার ধারণ করেছিল। এদিকে, হোয়াইট হাউজের করোনা টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ড. ডেবরাহ এল বার্ক্স গভীর উদ্বেগের সাথে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন শীঘ্রই করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা আরও চরমে উঠতে পারে, যদি স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখা হয়।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বললেন ডেবরাহ। করোনার ভয়াবহতাকে পাত্তা না দিয়ে ট্রাম্প প্রতিমুহূর্তে গলাবাজি করছেন সবকিছু খুলে দেয়ার জন্যে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি চালু হলেই জনমনে সৃষ্ট হতাশা দূর হবে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিরাজমান পরিস্থিতিকে একেবারেই আমলে না নিয়ে মে-জুনেও ট্রাম্প এমন কথা বলেছিলেন। তার আহবানে যারাই সাড়া দিয়েছেন এখন তারা প্রাণের বিনিময়ে খেসারত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে সর্বত্র।

আশপাশের স্টেটসমূহে সংক্রমণের হার প্রতিদিনই বেড়ে চলায় শীঘ্রই তা নিউইয়র্ক অঞ্চলকেও গ্রাস করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্টেট গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমো। শুক্রবার প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি বলেছেন, সকলকে সজাগ থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং বাইরের স্টেটের লোকজন এলে তাদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। ক্যুমো বলেছেন, বাসার বাইরে গেলেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অফিস, দোকান, রেস্টুরেন্ট, কল-কারখানা-সর্বত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবকিছু করতে হবে। স্টেট গভর্নর বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অভিপ্রায়ে আমরা লকডাউন শিথিল করিনি, সবকিছু করা হয় বাস্তবতার আলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক পথপরিক্রমায়। এজন্যে এখন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং কানেকটিকাটসহ আশপাশের স্টেটগুলোতে।

গভর্ণর উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক স্টেটে করোনা টেস্ট করা হয় ৭৩ হাজার ৫৫৮ জনের। এরমধ্যে ৭৮৬ জনের (১.০৬%) পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। এদিন সারা স্টেটের হাসপাতালে ছিলেন ৮২৬ জন। মারা গেছেন ৮ জন।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন