সুন্দর ও কর্মক্ষম মানসিকতার জন্য খোশগল্প; তবে....

  26-09-2017 07:57AM



পিএনএস ডেস্ক: চিত্ত-বিনোদনের জন্য খোশগল্প, গল্প, চুটকি, কৌতুক ও রসিকতা দৈনন্দিন জীবনে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অনুষংগ। মানুষের কাজ ও কাজের পরিবেশকে সুন্দর ও কর্মক্ষম করে রাখতে হাসি-খুশি মানসিকতা প্রয়োজন। আর হাসি-খুশি মানসিকতার জন্য সাময়িক উত্তম ও সুন্দর সুন্দর খোশগল্প, রসিকতা ও কৌতুক জরুরি।

আবার এ চিত্ত-বিনোদন হবে আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে ঘর-সংসার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থানেও। তবে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেই খোশগল্প ও রসিকতা বেশি হয়ে থাকে।

ইসলামেও রয়েছে চিত্ত-বিনোদনে খোশগল্প, রসিকতা ও কৌতুকের অনুমোদন। তবে তা হতে হবে শালীনতা ও সীমার মধ্যে। যাতে গোনাহ বা পাপের কোনো বিন্দুমাত্র সংশয় থাকবে না। থাকবে না কোনো বিশৃঙ্ক্ষলার সুযোগ।

হাদিস থেকে জানা যায় যে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁর পরিবার এবং সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে চিত্ত-বিনোদনে খোশগল্প, রসিকতা ও কৌতুক করেছেন।
>> হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে (বাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য) একটি জন্তু চাইল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ হাঁ’, আমরা তোমাকে একটি উটনীর বাচ্চা দেব।
লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি উটনীর বাচ্চা দিয়ে কী করব?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আরে! উটেরা সব উটনীদেরই বাচ্চা নয় কি?’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
>> অন্য হাদিসে এসেছে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জাহির নামক এক পল্লীবাসী সাহাবি গ্রামের বিভিন্ন জিনিস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (উপঢৌকন) হাদিয়া দিতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাকে শহরের বিভিন্ন জিনিস উপঢৌকন হিসেবে দিয়ে বিদায় করতেন।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহিরের উদ্দেশ্যে রসিকতা করে অন্যদের বলতেন, ‘জাহির হল আমাদের গ্রাম, আর আমরা তার নগর(শহর)। তিনি তাঁকে খুবই ভালবাসতেন।

একদিনের কথা
হজরত জাহির রাদিয়াল্লাহু আনহু বাজারে তার পণ্য বিক্রি করছিলেন। এমন সময় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পেছন দিক থেকে সাহাবিকে জড়িয়ে ধরলেন।

হজরত জাহির তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। তিনি (বিরক্ত হয়ে) বলে উঠলেন, এই কে? আমাকে ছেড়ে দাও।
অতঃপর সে পেছন ফিরে তাকালেন এবং দেখলেন তিনি যে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

(প্রিয় নবীর এ রসিকতা যে তার বুকের ভেতর ভালোবাসার কী ঝড় বইয়ে দিয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। সুতরাং সে ঝড়ের কবলে তিনি নিজেকে সঁপেই দিলেন) কালবিলম্ব না করে হজরত জাহির নিজেকে আরও পেছন দিকে নিয়ে যেতে থাকলেন। এভাবে একদম প্রিয়নবির বুকের সঙ্গে সেঁটে গেলেন পরম আনন্দে। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁকে বুকে ধরে রাখলেন।

অতঃপর রসিকতার মাত্রা যোগ করলেন এবং বললেন- এই গোলামটি বিক্রয় করব; কে কিনবে?
হজরত জাহির দেখতে সুন্দর ছিলেন না। সে বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসুল! দাম বড় সস্তা হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, কিন্তু আল্লাহর কাছে তুমি সস্তা নও। তাঁর কাছে তোমার দাম অনেক বেশি।
মনে রাখতে হবে, ‘এমন রসিকতায় কোনো গোনাহ নেই। তাতে রয়েছে মানসিক প্রশান্তি ও সুস্থ দেহ ও মনের মহৌসধ।

কুৎসিত হওয়ার কারণে অনেকেরই মনে দুঃখ থাকে। আর হজরত জাহিরের কালো হওয়া ক্ষতের মধ্যে কি মহৌষধই না লাগিয়ে দিলেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ রসিকতাপূর্ণ আচরণ দ্বারা।
সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি
যদিও রসিকতা একটা মোক্ষম দাওয়াই বা মহৌষধ। আপনজন রেগে গেলে প্রথমত আমরা রসিকতা দ্বারাই তা থামানোর চেষ্টা করি। হাস্য-রহস্য দ্বারা সমস্যা-সমাধানের কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের সকলেরই আছে।

খোশগল্পের ব্যবহার আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে। যে-কোনো ভালো জিনিসেরই সুফল পাওয়ার জন্য তার নিয়মনিষ্ঠ ব্যবহার জরুরি। ব্যবহার দোষে অতি প্রিয় জিনিসও ভীষণ অপ্রীতিকর হয়ে যায়। তাই খোশগল্পে, রসিকতায় আমরা সীমা লংঘন করব না।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রসিকতা করলেও রসিকতায় সীমা লংঘন না করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন-
‘তোমার তোমাদের ভাইয়ের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা
করো না এবং তার সঙ্গে উপহাস কর না।’

এ নিষেধাজ্ঞা এজন্যই করেছেন যাতে সাধারণত মানুষের পারস্পরিক রসিকতা ও কৌতুক লাগামহীন হয়ে না যায়। তাতে যেন মিথ্যা কথা না থাকে; কেউ যেন রসিকতায় কষ্ট না পায় বা আহত না হয়।

আবার কেউ যেন সমাজে হেয় প্রতিপন্ন না হয় কেননা বারবার রসিকতার দ্বারা অনেক সময় মানুষ বিরক্ত হয়। এ সব বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি। কারণ এ সবই কবিরা গোনাহ বা মহাপাপ।

চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণ করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রসিকতা করতেন; যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর রসিকতায় মিথ্যার কিছুই পাওয়া যেত না।
রসিকতার ব্যাপারে প্রিয়নবির এ কথাটি মুসলিম উম্মাহর স্মরণ রাখতে হবে। আর তা হলো-
একবার সাহাবায়েকেরাম প্রশ্ন করে বসলেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যে আমাদের সঙ্গে রসিকতা করেন? (অথচ এক হাদিসে আপনি আমাদেরকে এটা করতে নিষেধ করেছেন) তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’, তবে আমি (রসিকতার আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা বলি না) কেবল সত্যই বলি।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে চিত্তবিনোদন লাভে রসিকতা, খোশগল্প ও কৌতুক করার তাওফিক দান করুন। খোশগল্পে বাড়াবাড়ি ও মিথ্যা পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন